মারাকানায় মারামারির সেই স্মৃতি এখনো দগদগে। আহত হয়েছিলেন অনেকেই। জরিমানাও হয়েছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। ব্রাজিলের পুলিশ নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করেছিল আর্জেন্টিনার সমর্থকদের ওপর। ঝড়েছিল রক্তও।

আধা ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া সেই ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়েরা গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে মারামারির বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন সমর্থকদের। থামতে থামতে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। গ্যালারির রেলিং ধরে নিরীহ সমর্থকদের অনিশ্চিত চাহনির অদৃশ্য কালিতে একটা বিষয় পরিষ্কার ফুটে উঠেছিল।

ফুটবলের যে লড়াই জিভে জল আনার, যে লড়াইয়ে নাকি শুধু রোমাঞ্চই থাকে, খুব আশা নিয়ে সেটা তাঁরা দেখতে এসে এ কী দেখলেন! লাঠিপেটা, চেয়ার ছুড়ে মারা, চিৎকার ও রক্তপাত!

আরও পড়ুনগোল করে আর্জেন্টিনাকে হারানোর ঘোষণা রাফিনিয়ার১৬ ঘণ্টা আগে

ফিফা সেই ঘটনার তদন্তে নেমেছিল। আর যেন এমন কিছু না ঘটে, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিজ্ঞাও করেছিল ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) ও আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।

কিন্তু লড়াই যখন ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার এবং তা–ও ফুটবলের ময়দানে, তখন হাজারো শান্তির কথা বলার পরও একটু ঝুঁকি থাকেই। হাজারো ব্যবস্থা নেওয়ার পরও নিরাপত্তা আসলে নিশ্চিত নয়। কারণ, অনুভূতিটাই আগুনে—আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল! যে দলের মাঠে খেলা, সেই দলের সমর্থকেরা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য একটু আয়োজন তো রাখবেনই!

বুয়েনস এইরেসের মনুমেন্তালেও আজ নিশ্চয় এমন কিছু এন্তেজাম করা আছে। অন্তত আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সেই প্রস্তুতি অবশ্যই নেওয়া আছেই। কারণ, মারাকানার সর্বশেষ স্মৃতি—ব্রাজিলিয়ান পুলিশের লাঠিপেটা, ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের চেয়ার ছুড়ে মারা। হিসাব–কিতাব তো সমান হয়নি।

আর্জেন্টিনার নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ম্যাচে ১০০০ পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি ট্রাফিক এজেন্ট, সরকারি এজেন্সির কর্মকর্তা ও ক্যাডেট পুলিশ কর্মকর্তারাও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। ৮০ হাজার আসনের এ স্টেডিয়ামে সমর্থকেরা তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পার হয়ে তারপর যেতে পারবেন গ্যালারিতে।

ব্রাজিলের সমর্থকেরা ঢুকবেন আলাদা গেট দিয়ে। অর্থাৎ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের গ্যালারিতে ঢোকার পথেই যেন মারামারি লেগে না যায়, সেই ভাবনা থেকে হয়তো এমন ব্যবস্থা। কিন্তু সমর্থকেরা মনের ভেতর তুষের আগুন নিয়ে ঢুকলে, সেটি ধরা পড়বে কোন তল্লাশিতে?

আরও পড়ুনআর্জেন্টিনার বিপক্ষে শেষ কবে জিতেছিল ব্রাজিল ১৭ ঘণ্টা আগে

মারাকানায় মার খাওয়ার সেই তুষের আগুন তো এখনো ধিকিধিকি জ্বলছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের বুকে। প্রয়োজন ছিল একটু উসকে দেওয়ার। রাফিনিয়া ঠিক সেই কাজই করেছেন। রোমারিওর সঙ্গে ‘রোমারিও টিভি’ পডকাস্টে বলেছেন, ‘আমরা ওদের গুঁড়িয়ে দেব। কোনো সন্দেহ নেই। একদম গুঁড়িয়ে দেব মাঠের ভেতরে, দরকার পড়লে মাঠের বাইরেও।’

চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন রাফিনিয়া। ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়েও আছেন—এমন গুঞ্জন–ফিসফাসও আছে। এ মাসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচে গোলও করেছেন। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে বার্সার হয়ে ৪২ ম্যাচে ২৭ গোলের পাশাপাশি ২০ গোল করিয়েছেন। ব্রাজিলের হয়ে ৫ ম্যাচে গোল ৪টি, করিয়েছেন ১টি। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৪৭ ম্যাচে করেছেন ৩১ গোল, বানিয়েছেন ২১টি। অর্থাৎ এ মৌসুমে গোল করা ও গোল করানো মিলিয়ে ৪৭ ম্যাচে ৫২ গোলে অবদান রাফিনিয়ার।

কলম্বিয়ার বিপক্ষে গোল পেয়েছেন রাফিনিয়া.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন সমর থকদ র আর জ ন ট ন র ব যবস থ গ ল কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ