ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বন বিভাগের জমি দখলের অভিযোগ
Published: 26th, March 2025 GMT
রংপুরের মিঠাপুকুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বন বিভাগের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। ১৬ বছর ধরে জমিটি দখলে রেখে চাষাবাদ করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি জমি উদ্ধারে গেলে বন বিভাগের লোকজনকে হুমকিধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন ওই নেতা।
চেংমারী ইউনিয়নের লোহাকুচি মৌজায় বন বিভাগের জমি রয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান সৃজন করেছে বন বিভাগ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এক হেক্টর জমির বাগানটির উপকারভোগী হিসেবে মামুদেরপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুলসহ তিনজনের নাম ছিল। ওই জমির মধ্যে ৯৯ শতক নিজের বলে দাবি করেন মুকুল। ২০১০ সালে তাঁর ছেলে হাসিবুল হাসান সিমন তা দখল করে নেন। সিমন বর্তমানে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ১৬ বছর ধরে তিনি ও তাঁর পরিবার বন বিভাগের ওই সম্পত্তি দখলে রেখে চাষাবাদ করে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবুল আলম, জান্নাতুল ফেরদৌসসহ কয়েকজন জানান, সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসান সিপন। এমপির প্রভাব খাটিয়ে এতদিন ধরে বন বিভাগের জমি দখলে রাখলেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয়রা বিষয়টি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের জানান। কর্মকর্তারা তদন্ত করার জন্য ২০ মার্চ এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তারা হাসিবুল হাসান সিমনকে জমিতে চাষাবাদ করতে নিষেধ করেন। তাদের কথা অমান্য করে সিপন পরদিন জমিতে ধানের চারা রোপণ করেন। খবর পেয়ে হেলেঞ্চা বনবিট কর্মকর্তা জেহেসান আলম প্রহরীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবারও তাকে নিষেধ করেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা বন বিভাগের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসান সিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাঁর বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুলও কোনো মন্তব্য করেননি।
হেলেঞ্চা বনবিটের কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জেহেসান আলী বলেন, লোহাকুচি মৌজায় বন বিভাগের সরকারী গেজেটভুক্ত জমি রয়েছে। সেখানে ৯৯ শতক জমি মামুদেরপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল ও তাঁর ছেলে হাসিবুল হাসান সিমন দখল করে নিয়েছেন। বাধা দেওয়ায় আমাদের হুমকি দেন। বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ স ব ল হ স ন স মন কর মকর ত ব দ কর
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।
সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।