সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের ইসিএভুক্ত (প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) স্থানে ভারী যন্ত্রপাতি (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে অবাধে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় ৩১ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার গোয়াইনঘাট থানায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আজ বুধবার সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এ মামলা করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইসিএভুক্ত এলাকায় নদীর পাড়, পাড়সংলগ্ন জমি, জুমপাড়ের বেড়িবাঁধ থেকে অবাধে গর্ত করে বালু ও পাথর উত্তোলন করার কারণে জাফলং-ডাউকী নদীর ভূমি ও ভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন এবং প্রতিবেশব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করায় মামলাটি করা হয়েছে।

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরানকে। আসামি তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ মো.

শাহ আলম (স্বপন)। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আছেন উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের ইয়াছিন মিয়া, জাফলং জমিদার বাড়ির শফিউল আলম সেলিম, পশ্চিম লাখের পাড়ের মজির উদ্দিন ও সাইদুর রহমান, মামার বাজারের আমজাদ বক্স, নলজুরির আবুল কাশেম প্রমুখ।

এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে রাতের বেলা ভারী যন্ত্রপাতি (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে বালু ও পাথর উত্তোলনের জন্য গর্ত করে রাখে। দিনের বেলায় কয়েক শ শ্রমিক দিয়ে এসব গর্ত থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। গত সোমবার সেখানে এক অভিযান পরিচালনাকালে দেখা যায়, কয়েক শ শ্রমিক পাথর উত্তোলনের কাজ করছেন। অভিযানকারী দল উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকেরা পালিয়ে যান। তবে ওই দিন পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ২০টি মেশিন, মেশিনের পাইপ ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ধ্বংস করা হয়। কয়েকটি এক্সকাভেটরও অকেজো করা হয়।

আসামিরা জাফলং এলাকার পাথর ব্যবসায়ী, স্টোন ক্রাশিং প্ল্যান্টের মালিক, ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের নেতা, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং জমির মালিক ও দখলদার বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আসামিদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে আগেও পরিবেশ অধিদপ্তর একাধিক মামলা করেছে। এরপরও তাঁরা বেআইনি কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ