জয়পুরহাটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী রাব্বীউল হাসান মোনেম। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েই এনসিপিকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সোমবার শহরের স্বপ্নছায়া কমিউনিটি সেন্টারে এ আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা কাজী রাব্বীউল হাসান একসময় জয়পুরহাট-২ আসনের জাসদ মনোনীত সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিবিদ, শহীদ, আহত পরিবারের সদস্য, পেশাজীবী, আলেম-ওলামা ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে বিভিন্ন দল ঘুরে আসা এই নেতার উপস্থিতি ও বক্তব্য দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক হাসিবুল হক সানজিদ।
ফেসবুকে সানজিদ ওই নেতার দুটি ছবি যুক্ত করে একটি পোস্ট দিয়েছেন। একটি সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমানসহ দলটির জেলা নেতাদের সঙ্গে রাব্বীউল হাসান আছেন। অন্যটিতে এনসিপির ইফতার মাহফিলে রাব্বীউল হাসান বক্তব্য দিচ্ছেন।
পোস্টে সানজিদ উল্লেখ করেন, ‘জয়পুরহাটে জাতীয় নাগরিক পার্টির স্বঘোষিত সংগঠকদের নিমন্ত্রণে ইফতার মাহফিলে এসেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও জাসদের সাবেক সাংসদ কাজী রাব্বীউল হাসান মোনেম। একটি কুচক্রী মহল নাগরিক পার্টির নাম খারাপ করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেছে, এটা কি আপনাদের চোখে পড়বে না? আশা করি, সদুত্তর পাব। জয়পুরহাটের বুকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেব না ইনশাআল্লাহ।’
হাসিবুলের পোস্টে আজ বুধবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৯২ জন লাইক ও ২৯ জন মন্তব্য করেছেন। কাফায়েত কাউছার রুমি মন্তব্য করেছেন, ‘কথিত সমন্বয়ক তুমি যাদের নিয়ে পথ চলছো সে ব্যাখ্যা দাও।’
মো.
খালেদ নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘কাকে কী বলব ভাই?’
এ বিষয়ে কাজী রাব্বীউল হাসান বলেন, ‘আমি আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিলে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত জানিয়েছি। আমাকে যে কোনো দল দাওয়াত করলে সেখানে যাব। আমাকে নিয়ে অযথা অপ্রচার করা হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক হাসিবুল হক বলেন, কাজী রাব্বীউল হাসান আওয়ামী লীগ নেতা। এনসিপির ইফতার অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করে আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসন করতে ছাত্র-জনতা রক্ত দেয়নি। এটা সাংঘর্ষিক।
জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা সংগঠক ওমর আলী বলেন, বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে কাজী রাব্বীউল হাসানকে দাওয়াত করা হয়েছিল। তিনি ইফতার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। বক্তব্যও দিয়েছেন। তাঁর নাম আওয়ামী লীগের কমিটিতে নেই। এটা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ইফত র আওয় ম ল গ র ব ব উল হ স ন অন ষ ঠ ন এনস প ইফত র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।
আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’