স্টারলিংকে আড়ি পাতার সুযোগ নতুন নির্দেশিকায়
Published: 27th, March 2025 GMT
স্যাটেলাইটনির্ভর ইন্টারনেট–সেবায় আইনানুগ আড়ি পাতার সুযোগ রেখে নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট–সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলে সেখানেও আড়ি পাতার সুযোগ থাকবে।
নতুন নির্দেশিকা বা গাইডলাইনের নাম ‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ফর নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর ইন বাংলাদেশ’। গতকাল বুধবার এটি জারি করা হয়।
বিটিআরসি বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন নির্দেশিকা করেছে। স্টারলিংক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এটি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সেবা দেয়। ইলন মাস্কের
সঙ্গে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কলে স্টারলিংক প্রসঙ্গে আলোচনা করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশিকায় আড়ি পাতার সুযোগবিটিআরসির নির্দেশিকায় ২৬(৪) অনুচ্ছেদে আইনানুগ আড়ি পাতা বা ল’ফুল ইন্টারসেপশনের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, নির্ধারিত জাতীয় সংস্থার প্রয়োজন অনুসারে লাইসেন্সধারী বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত তার ‘গেটওয়েতে’ প্রবেশাধিকার প্রদান করবে এবং আইনানুগ আড়ি পাতার ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে লাইসেন্সধারী সরকারের নির্ধারিত সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য প্রদান করবে। এ ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য লাইসেন্সধারীর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি থাকতে হবে।
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবার লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১, ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন ১৯৩৩, টেলিগ্রাফ আইন ১৮৮৫–এর পাশাপাশি অন্যান্য অধ্যাদেশ, বিধি ও নীতি মেনে চলতে হবে।
লাইসেন্সধারী সেবা দেওয়ার আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে অন্তত একটি ‘গেটওয়ে সিস্টেম’ স্থাপন করবে বলেও উল্লেখ আছে নির্দেশিকায়। এতে আরও বলা হয়, বিটিআরসি লাইসেন্সধারীকে বাড়তি গেটওয়ে স্থাপন করতে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যবহারকারীর কার্যক্রম ও পরিবেশন স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে হতে হবে। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্র্যাফিক বহনের জন্য লাইসেন্সধারীকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
আড়ি পাতার সুযোগ রাখতে হলে সেটার জন্য স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে। কারণ, আড়ি পাতা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বি এম মইনুল হোসেন, অধ্যাপক, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়আবেদন ফি ৫ লাখ টাকানির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারীর সেবার ট্যারিফ বা মূল্য বিটিআরসি অনুমোদিত হতে হবে। লাইসেন্স নেওয়ার আবেদন ফি ৫ লাখ টাকা, লাইসেন্স নেওয়ার ফি ১০ হাজার মার্কিন ডলার (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি) এবং বার্ষিক নিবন্ধন ফি ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৭ লাখ টাকা) এবং আইওটির জন্য ১০ হাজার ডলার (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি)।
সেবাদাতাকে প্রথম দুই বছর বিটিআরসির সঙ্গে কোনো রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে না। তবে তৃতীয় বছর থেকে ৩ শতাংশ হারে এবং ষষ্ঠ বছর থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং তাদের কার্যক্রম চালাতে হবে অন্তত ৫ বছর।
আড়ি পাতার ‘স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে’অধিকারকর্মীরা আড়ি পাতার টেলিযোগাযোগে বিরোধী। তবে কেউ কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্টভাবে আড়ি পাতার সুযোগ রাখার ক্ষেত্রে আপত্তি দেখান না। কিন্তু সমস্যা হলো, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ আইনে আড়ি পাতার যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তার ঢালাও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আড়ি পাতার সুযোগ রাখতে হলে সেটার জন্য স্পষ্ট নীতি থাকতে হবে। কারণ, আড়ি পাতা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। কীভাবে আড়ি পাতা হবে, কারা করবে, কাদের দায়বদ্ধ করা যাবে—এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট না হলে সব আগের মতোই চলবে। এ সরকারের কাছে প্রত্যাশা, আড়ি পাতা যেন সত্যিকারের আইনানুগ ও জবাবদিহিমূলক হয়।
বি এম মইনুল আরও বলেন, দেশীয় আইআইজি থেকে ব্যান্ডউইডথ নিলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা সরকার হাতেই থাকবে। ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে সরকারকে বক্তব্য স্পষ্ট করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ন র দ শ ক আইন ন গ ব ট আরস র জন য সরক র গ টওয়
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?