সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে জার্নাল আর্টিকেল বা গবেষণাপত্র প্রত্যাহার বা বাতিল হচ্ছে। এ প্রবণতা বিশ্বজুড়ে, তবে বিশেষ কিছু দেশের নাম অথবা বিশেষ কিছু দেশের বিশেষ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষকদের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। এভাবে প্রকাশিত হওয়া আর্টিকেল পুনর্মূল্যায়ন করে বাতিলের পেছনের মূল কারণ হচ্ছে গবেষকদের চরম মাত্রার অনিয়ম এবং রীতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেক পর্যালোচক/রিভিউয়ার তৈরি করে আর্টিকেল রিভিউ করানো (নাম ও পদবি ঠিক রেখে নিজেদের তৈরি করা নকল ই–মেইল প্রস্তাব করা), আগে থেকেই বিভিন্ন জার্নালের সম্পাদক/এডিটরদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে যৌথভাবে দ্রুত আর্টিকেল প্রকাশ করা, গবেষণার তথ্য-উপাত্ত জাল করা এবং ফিল্ডওয়ার্ক সঠিকভাবে না করা, তথ্য-উপাত্ত নিজের প্রয়োজন মতো সংযোজন, বিয়োজন এবং পরিমার্জন করা; তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের সময় অনিয়ম করা, নিয়মতান্ত্রিক এবং দলগতভাবে নিজের এবং অন্যের কাজকে বারবার উদ্ধৃতি/সাইটেশন করা, অর্থ বা অন্য কোনো প্রণোদনার বিনিময়ে কাউকে সহ-লেখকত্ব দেওয়া; এবং প্রভাব ও জ্যেষ্ঠতা বিস্তার করে আর্টিকেলে নিজের নাম সংযোজন করা ইত্যাদি। এ রকম নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠিত গবেষকের আর্টিকেল বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

এ ধরনের অসমীচীন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলে আপনি নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যেমন আপনার চাকরি চলে যেতে পারে, অন্যায় অপরাধের কারণে আপনাকে আদালতে যেতে হতে পারে, আপনার অন্যান্য সহলেখকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড় অঙ্কের অর্থদণ্ড হতে পারে, ভবিষ্যতে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর চাকরি না হওয়া, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোতে, এবং সর্বোপরি নিজের মর্যাদা এবং সুখ্যাতির চরম ক্ষতিসাধন এবং অবমাননা হতে পারে। এর চেয়েও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে আপনার সঙ্গো গবেষণাকর্মে লিপ্ত থাকা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা, যারা সবেমাত্র গবেষণার জগতে হাতেখড়ি দিয়েছে এবং যাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গবেষণা-সংশ্লিষ্ট রীতিনীতি, পলিটিকস এবং এথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কোনো ধারণাই নেই।

বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করে থাকেন, তাঁদের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের থিসিস থেকে একটি ভালো মানের জার্নাল আর্টিকেল পাবলিশ করার, এর ফলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ বা ফান্ডিং পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু শুরুতেই যদি তাঁদের নাম এবং গবেষণাকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যায়, তবে তারা এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাঁদের বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা যেমন মাস্টার্স, পিএইচডি বা পোস্টডক করা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা বা গবেষকের চাকরি এমনকি নন-একাডেমিক কিংবা ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা চরম মাত্রায় হুমকির মুখে পড়তে পারে। যারা গবেষণার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে চান, এবং ভবিষ্যতে একজন প্রতিষ্ঠিত গবেষক কিংবা বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাঁদের গবেষণাপত্র জার্নালে প্রকাশ করার আগে করণীয় সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের আয়ারল্যান্ডে ক্যারিয়ারের সুযোগ, পরীক্ষা তিনটিআয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা, যেভাবে মিলবে সুযোগফাইল ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ট ক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ