কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টে ভোর থেকে জমতে শুরু করে মানুষের ভিড়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, দল বেঁধে মানুষ উত্তাল সমুদ্রে নেমে শরীর ভেজাচ্ছেন। কেউ কেউ দিচ্ছেন ডুব। আজ চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশব্যাপী গঙ্গাপূজা ও মহাবারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার সৈকতেও মহাবারুণী স্নান ও পূজার আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটি।

মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে পূজা, ভাগবতীয় অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে অদ্বৈত-অচ্যুত মিশন বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখা। ধর্মীয় আয়োজনে পৌরোহিত্য করেন শ্রীমৎ স্বামী দেবদীপানন্দ পুরী মহারাজ।

দুপুরে মা–বাবার সঙ্গে সমুদ্রস্নানে নামেন কলেজপড়ুয়া দিপালী দাশ। গোসল সেরে বালুচরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত অতীতের পাপ মোচনের জন্য এই সমুদ্রস্নান বা পুণ্যস্নান। স্নানের পর আমরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি। নিজের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য মঙ্গল কামনা করি। দেশের সবকিছু যেন স্থিতিশীল থাকে, দেশের মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারেন, সে প্রার্থনাও করেছি।’

দুপুরে উৎসবস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রোমেন শর্মা। তিনি বলেন, ‘সৈকতে হাজারো ভক্তের উপস্থিতি এবং শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন প্রমাণ করে কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের শান্তি চাই।’

সকাল থেকে সৈকতে ভক্তদের নিরাপদ গোসল ও নিরাপত্তা নিয়ে তৎপর ছিলেন মহাবারুণী স্নান ও গঙ্গাপূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ ধর, সাধারণ সম্পাদক রতন ধর, জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু প্রমুখ।

রতন ধর বলেন, সকাল ছয়টায় সমুদ্রে নেমে ভক্তদের স্নান ও পূজা শুরু হয়। বেলা তিনটা পর্যন্ত সৈকতে স্নানোৎসব চলে। এরপর ভক্তরা নিজ গন্তব্যে ফিরে যান।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গাদেবী বিপদনাশিনী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন তিনি। পৃথিবীর সব পানি নিয়ন্ত্রণ করেন এই দেবী। তাই তাঁর অবস্থান পানিতে। পানির মাধ্যমে মানবকল্যাণ করেন দেবী গঙ্গা।

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রে এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান। শহর ছাড়াও জেলার রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার ভক্ত সৈকতে উপস্থিত থেকে পূজায় অংশ নেন। বেলা তিনটা পর্যন্ত আরও ১০-২০ হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ