কেমন আছেন?
ভালো আছি। তবে বয়স বেড়ে গেছে, তাই হয়তো স্মৃতি কমে যাচ্ছে। এটা নিয়ে মাঝে মধ্যে দুশ্চিন্তা হয়।

শুরুতেই শৈশবের কথা কিছু শুনতে চাই। তখন কীভাবে সময় কেটেছে?
শৈশব আমার ভালো কেটেছে। কেটেছে দুরন্তপনায়। উপভোগ করেছি। সেই সময়টা দারুণ মিস করি। আমার রাজশাহীতে জন্ম। অনেক স্মৃতি। রাজশাহী সিল্ক ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর ছিলেন বাবা। আগে বগুড়াতে ছিলেন, তাই শৈশবের অনেকটা সময় আমার বগুড়াতে কাটে। কী যে অপূর্ব সময় ছিল! থাকতাম করতোয়া নদীর পাশে। চারদিকে নিবিড় প্রকৃতি। তখন স্কুলে পড়ি। যেদিকে মন চায় ছুটে যেতাম। কেউ কিছু বলত না। পাড়ার কোনো মানুষ চোখ রাঙিয়ে কথা বলত না, পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ ছিল না। এতে চিন্তা সমৃদ্ধ করতে পেরেছিলাম। তবে মাঝেমধ্যে ভয়ে থাকতাম। কিন্তু সেই ভয় ঘরবন্দি করে রাখতে পারত না। মাঝেমধ্যেই করতোয়া নদীর কাছে চলে যেতাম। ভীষণ ইচ্ছে হতো নদীর ওপার যেতে। ফুল বা পাখি বা ওপার দেখতে কেমন, তা জানতে। একবার মাঝিকে খেয়াঘাট পার হওয়ার জন্য অনুরোধ করি। সে জানায়, তুমি ছোট মানুষ। সেখানে যাওয়া যাবে না। আমি বলেছিলাম, ওপারে আমাকে নিয়ে যান। আমার খুব ইচ্ছে নতুন গাছ ছুঁয়ে দেখা, ফুলের সৌরভে নিজেকে মাতিয়ে রাখব, ফল ছিঁড়ে বাসায় নিয়ে আসব। একসময় সেখানে যাই। নতুন গাছ, ফুল-পাখির সঙ্গে পরিচিত হই। ফুল আর ফল ছিঁড়ে নিয়ে আসতাম। দূর থেকে কাউকে দেখলে ভয়ে লুকোতাম। যদি কিছু বলে। আবার যখন রাজশাহীতে যেতাম তখন পদ্মার নদীর পারে চলে যেতাম। অনেক সময় দলবেঁধে যেতাম, আবার অনেক সময় একাকী চলে গেছি। যখন মন চায় তখনই সেখানে চলে গেছি। চলে যাওয়ার ভেতর ছিল নদীর প্রতি টান, ছিল প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা।

লেখালেখিতে কীভাবে এলেন?
ছোটবেলা থেকে অনেক বই পড়তাম। বই পড়তে পড়তে আমার একটা কিছু অনুভব হতো। এই অনুভব থেকে মনে হয়েছে, আমি একটু লিখি। আমার মা-বাবা কখনও বলেননি যে এটা নিয়ে লিখতে হবে। লেখালেখিটা আসলে আমার নিজের চিন্তা থেকে হয়েছে।

আপনার বিখ্যাত উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’-এর প্রেরণা কারা? 
আমার স্বামী আনোয়ার হোসেন খান একজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ নিয়ে অনেক স্মৃতিচারণ করতেন। আমি সেসব গল্প নিজের ভেতর আত্মস্থ করতাম। আশপাশে অনেকেই ছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতেন। সেসব কথার মালা গেঁথে হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস লিখি। সেখানে নারী মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে নিজের সন্তানকে বিলিয়ে দিয়েছে। এসব অনেক ঘটনা উপন্যাসের ভেতর নিয়ে এসেছি। আমার স্বামী ও আশপাশের মানুষ এবং মুক্তিযুদ্ধ এই উপন্যাস লেখার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

উপন্যাস নির্মাণের আগে থেকেই ঘটনা সাজিয়ে রাখেন, নাকি লিখতে লিখতে তৈরি হয়?
উপন্যাস লেখার জন্য অবশ্যই আগে থেকে প্রেক্ষাপট নির্মাণ করতাম। লিখতে বসে নির্মাণ হবে, এমন সহজ করে কখনও ভাবিনি। উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখককে ভেবেচিন্তে, সাজিয়ে লিখতে শুরু করতে হবে। 

লেখালেখির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন, নাকি যে কোনো স্থানেই লেখা হয়?
লেখালেখির নির্দিষ্ট স্থান ছিল না। যেখানে খুশি সেখানে বসে লিখতে পারতাম।

নির্দিষ্ট সময় ছিল কি? দিনে বা রাতে কখন বেশি লিখতেন?
নির্দিষ্ট সময় ছিল। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মাধ্যমে লেখা চাইত। তখন সেই সময় লেখা দিতাম। বিশেষ করে আমি বাংলা একাডেমিতে চাকরি করার সময় অনেক লেখা হয়েছে। সকালে, দুপুরে, বিকেলে বা রাতে নির্জনতায় লিখতে ভালো লাগত, এখনও লাগে।

বর্তমান তরুণদের বই পড়ার অবকাশ পান? এ নিয়ে কিছু বলা সম্ভব?
বই তো কিছু পড়া হয়। কিন্তু বয়স তো বেড়েছে, স্মৃতিশক্তি সব সময় কাজ করে না আগের মতো।

তরুণরা কেমন লিখছে?
তরুণরা ভালো লিখছে। তরুণদের কলমে আমাদের সাহিত্য এগিয়ে যাচ্ছে। 

তরুণ লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ?
লেখাটা তাদের সঞ্চয়। তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের যা কিছু অর্জন, বেঁচে থাকার সূত্র ধরে, তা যেন লেখায় আসে। সবার সঙ্গে দেখাশোনা করে, চারপাশ 
দেখে উপলব্ধিটুকু লেখার ভেতর আনা উচিত। নতুন ভাবনার দুয়ার খুলতে হবে। পুরোনো কিছুর 
সঞ্চয় ভালো হবে না। নতুন ভাবনা বাংলা সাহিত্যকে নতুন পথ দেখাবে। উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে পটভূমি ও পটভূমির সঙ্গে বোঝাপড়া আগে ঠিক করা 
দরকার। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপন য স ল খ র র জন য অন ক স

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান