ধর্মপাশায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঈদ উপহার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ নিয়ে নানা মহলে চলছে সমালোচনা।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পাঠানো ঈদ উপহার বিতরণ করেন ইউএনও জনি রায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোজাম্মেল হক ও সেলবরষ ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক গোলাম ফরিদ খোকা। মোজাম্মেল হক পাইকুরাটি ইউপির ও গোলাম ফরিদ খোকা সেলবরষ ইউপির চেয়ারম্যান। এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের নিয়ে শুধু এ উপহার বিতরণই নয়, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সরকারি প্রতিটি কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে রাখা হয়েছে সামনের সারিতে। এসব অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা বিতর্কের সৃষ্টি করে।
ধর্মপাশা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে ৪৫০টি শাড়ি বরাদ্দ পায় উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এসব শাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণের আয়োজন করে প্রশাসন। ওই অনুষ্ঠানের অতিথি মঞ্চে ইউএনওর পাশাপাশি আসন গ্রহণ করেন উল্লিখিত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা।
ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হক ও যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম রহমত বলেন, ধর্মপাশায় গত ৪ আগস্ট যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে এবং নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের প্রাধান্য দিয়ে উপজেলা প্রশাসন সরকারিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, যা দুঃখজনক। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, যদি আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসররা এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পায়, তাহলে জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ম্লান হবে।
ইউএনও জনি রায় বলেন, ওই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের দাওয়াত করে আনা হয়নি। তারা অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে চলে আসেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ উপহ র ল গ ও য বল গ ন ত উপহ র ব তরণ ঈদ উপহ র অন ষ ঠ ন আওয় ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি