Samakal:
2025-05-01@05:28:27 GMT

নাগরিককে রাস্তায় নামতে হয় কেন?

Published: 28th, March 2025 GMT

নাগরিককে রাস্তায় নামতে হয় কেন?

সম্প্রতি অধিকারকর্মীরা তাদের নৈতিক ও ন্যায্য দাবি জানাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে গেলে পুলিশ বাধা দেয়; এক পর্যায়ে সংঘাতে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়। এ অবস্থাই চলে আসছে। কিন্তু এর পরিবর্তন কি অসম্ভব? নাগরিকরা রাস্তায় নামার আগে সরকারের সংস্থাগুলো কেন ব্যবস্থা নেয়নি– এ প্রশ্ন তোলা জরুরি। 
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’

এদিকে পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি স্থান পর্যন্ত কোনো সমাবেশ বা লোকসমাগম হলে তা ভেঙে দেওয়া বা বল প্রয়োগের দায়িত্ব হয়তো পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নাগরিক কোনো দাবি করলে কোনো কর্মকর্তার সেই দাবি গ্রহণ এবং বিধিবদ্ধ আইন অনুসারে উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাদের সরকারের দায়িত্বে পাঠানো হয়, তারা জনপ্রতিনিধি না হয়ে কর্মকর্তাদের মুখপাত্র হয়ে যান। মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কতিপয় কর্মকর্তা যা তাদের শিখিয়ে পড়িয়ে দেন, তারা তা-ই  বলেন। নাগরিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন না করলে বা কোনো একটি বিষয় সংঘাতের দিকে না গেলে সচরাচর মন্ত্রী/উপদেষ্টা শুনতে পারেন না বা শোনেন না। 

নাগরিকদের কেন রাস্তায় নামতে হয়– এ নিয়ে কিছু বাস্তবিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। ঢাকার মাঠগুলো ক্লাবের নামে দখল করে নিচ্ছে। গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন পার্ক ও সঙ্গের মাঠটি দীর্ঘদিন একটি ক্লাবের দখলেই আছে এক প্রকার। গত বছর ক্লাবটি মাস্টারপ্ল্যান ও আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মাঠে ফুটবল টার্ফ বানানো শুরু করে। পরিবেশবাদীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেস রিলিজ, চিঠি এবং একটি ক্লাবের মাঠে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে দেখা যায়, আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের এ ধরনের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে সরকারের সব মহলে চিঠি দেওয়া ও প্রেস কনফারেন্স করা হয়। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর বা প্রতিকার করা হয়নি।

কয়েক মাস আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে আবার চিঠি দেওয়া হলো; উপদেষ্টা, প্রশাসকদের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ দেওয়া হলো। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। কয়েক মাস আগে উত্তর সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, আগামীকাল আপনার প্রতিষ্ঠানের সামনে একটি মানববন্ধন করা হবে এবং এখান থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে। আপনাদের একজন প্রতিনিধিকে এ স্মারকলিপি গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। মানববন্ধন শেষে পরিবেশবাদীরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এক ঘণ্টা বসে থাকলেও কোনো কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। তথ্য অধিকার আইন, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার (জিআরএস) এ অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান মেলেনি। এ অবস্থায় একজন নাগরিক রাস্তায় নামা ছাড়া আর কী করতে পারে! 
পরিবেশ আইন, আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ‘পান্থকুঞ্জ-হাতিরঝিল ধ্বংস করে’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে ৯৪ দিন ধরে পার্কে অবস্থান করছেন পরিবেশবাদীরা। অহিংস ও নৈতিক এ আন্দোলনে আজ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশা বা অঙ্গীকার করা হয়নি। রাস্তায় নেমে ব্লক, ঘেরাও বা অন্য কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটালে সরকারের দপ্তরগুলো কি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না? 

ঢাকার রাস্তায় প্রতিনিয়ত নাগরিক সমাবেশ হয়। রাজনৈতিক আন্দোলন বা কর্মসূচির ভিড়ে এসব সমাবেশ সংবাদপত্র, গোয়েন্দা সংস্থা কারও কাছেই হয়তো গুরুত্ব পায় না। নাগরিক দাবির এসব সংবাদ হয়তো সরকারের উচ্চ মহলে গুরুত্ব পায় না। এসব উপায় না দেখেই নাগরিকদের রাস্তায় নামতে হয়।

একটি কঠিন সত্য হচ্ছে, আমরা যেসব জনপ্রতিনিধিকে জনগণের কথা বলতে বা শুনতে পাঠাই, তারা চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের কিছু আমলার মুখপাত্র হয়ে যান। প্রটোকলের নামে তারা সেটাই বলেন, যা তাদের কর্মকর্তারা শেখান; আর তাই শোনেন, যা তাদের শোনানো হয়। নাগরিকের দাবি, অধিকারকর্মী, সমাজকর্মীদের তারা শক্র বা বিরোধী ভাবতে থাকেন। একদিন যারা নাগরিক আন্দোলনে সহযোদ্ধা ছিলেন; ছিলেন তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতা; চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে তারা কেমন যেন অচেনা হয়ে যান! 
নাগরিকদের দাবি আর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা থাকা দরকার। সরকারের তথ্য অধিকার আইন, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (জিআরএস) রয়েছে। এসব ব্যবস্থাকে কার্যকর করা দরকার। কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটলে সরকারের দপ্তরগুলো যদি নাগরিক আন্দোলন বা দাবিকে গুরুত্ব না দেয়, তবে সহিংস ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এ অবস্থা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের দপ্তরগুলো এই নিরুত্তর নাগরিকদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। পুলিশের সঙ্গে নাগরিকদের সংঘাত হয়; পুলিশকে সবাই দোষারোপ করে। অথচ সরকারের দপ্তরগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কারণে যে নাগরিকদের রাস্তায় নামতে হয়েছে, এ বিষয় নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম: আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক
syedmahbubul@gmal.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স ত য় ন মত সরক র র দ কর মকর ত ব যবস থ উপদ ষ ট পর ব শ অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের কাউন্সিল কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান তফসিল ঘোষণা করেন।

নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। ২১ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি ও মতামত গ্রহণ করা হবে। ৩০ জুন চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। 

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীগণ ১ থেকে ৩ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। ১ থেকে ৭ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীগণ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৯ জুলাই।

মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন গ্রহণ করা হবে ১১ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আপিলের শুনানি গ্রহণ ও রায় ঘোষণা করা হবে ১৩ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৪ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ জুলাই। ১৬ থেকে ২৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে নির্বাচনী প্রচারণা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ জুলাই।

১৯৯২ সালে সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ৩২ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের জাকসু নির্বাচন।

ঢাকা/আহসান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ