চট্টগ্রাম নগরের পূর্ব মাদারবাড়ী এলাকায় ১৯৯৯ সালে ‘সাকসেস শু’ নামে হাতে তৈরি জুতার কারখানা করেন মোহাম্মদ বেলাল। সেই কারখানায় এবারের ঈদ মৌসুমে কাজ করছেন মাত্র ২২ জন শ্রমিক। অথচ গত বছরও এই সংখ্যা ছিল ৩৫। হাতে তৈরি জুতার চাহিদা কমায় এখন আর লোকবল বেশি লাগছে না। তাই ব্যস্ততাও কম।

নোয়াখালীর বাসিন্দা মোহাম্মদ বেলালের সঙ্গে সম্প্রতি তাঁর পূর্ব মাদারবাড়ীর কারখানায় বসে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, আগের মতো ব্যবসা এখন নেই। এখন শুধু ঈদ মৌসুমে কিছুটা ব্যবসা হয়। অর্ডার কমে গেছে। তাই লোকবলও কম। প্রতি মাসেই একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। গত এক দশকে অন্তত এক হাজার কারখানা বন্ধ হয়েছে। তাতে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।

মালিক–শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মূলত আমদানি করা ও চোরাই পথে আসা কম দামি বিদেশি জুতায় বাজার সয়লাব হওয়া; নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হাতে তৈরি জুতার কারখানা গড়ে ওঠা এবং কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া—এই তিন কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে।

সরেজমিনে সম্প্রতি পূর্ব মাদারবাড়ীর ২৫টি জুতার কারখানা ঘুরে মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদে কেনাবেচা অন্তত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বেড়ে যায়।

— চট্টগ্রাম নগরের পূর্ব মাদারবাড়ীতে ১৯৮০ সালে হাতে তৈরি পাদুকাশিল্পের যাত্রা শুরু হয়।
— ২০১০ পর্যন্ত একের পর এক কারখানা গড়ে ওঠে। এরপরই ব্যবসায়ে মন্দা নেমে আসে।

সেখানকার কারখানাগুলোর কোনোটির আয়তন ২০ ফুট বাই ১০ ফুট, আবার কোনোটি একটু বড়, অর্থাৎ ৩০ ফুট বাই ১৫ ফুট। এসব কারখানার ভেতরে কাঠের পাটাতন দিয়ে দোতলা করা হয়েছে। কারিগরেরা ওপরে-নিচে বসেই যে যাঁর মতো করে জুতায় আঠা লাগান, তলা কাটেন, ফিতা বাঁধেন, সেলাই করেন ও প্যাকেটে ভরেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের পূর্ব মাদারবাড়ীতে ১৯৮০ সালে হাতে তৈরি ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। পরে পশ্চিম মাদারবাড়ী, নালাপাড়া, নিউমার্কেট, মোগলটুলি, বাকলিয়া প্রভৃতি এলাকায়ও একের পর এক কারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু এখন মাত্র ২০০ কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানার তৈরি পাদুকা চট্টগ্রামের স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার খুচরা বিক্রেতারা কিনে নেন। বিক্রি হয় সাধারণত ডজন হিসেবে। কারখানাগুলোয় কয়েক হাজার কারিগর কাজ করেন।

চট্টগ্রামের কারখানাগুলোয় হাতে তৈরি জুতা চট্টগ্রামের স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে এখানে জুতার কী পরিমাণ ব্যবসা হয়, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা হিসাব নেই। কোনো কোনো ব্যবসায়ী অবশ্য দাবি করেন, শুধু ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কারখানাগুলোয় ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে লেনদেন হয় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা। কারণ, তাঁদের ব্যবসা মূলত ঈদকেন্দ্রিক। এখানকার কারখানাগুলোয় ছেলেদের স্যান্ডেল, শু, স্লিপার, স্নিকার ও হাফ সুজের পাশাপাশি নারীদের হিল, স্যান্ডেল, শু ইত্যাদি তৈরি হয়।

১৯৯০ সালে এখানে গঠিত হয় ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপ। সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ২০১০ পর্যন্ত একের পর এক কারখানা গড়ে উঠেছিল। এরপরই জুতার ব্যবসায়ে মন্দা নেমে আসে। গত এক দশকে অন্তত এক হাজার কারখানা বন্ধ হয়েছে। মূলত নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হাতে তৈরি জুতার কারখানা চালু হওয়ার কারণেই চট্টগ্রামের জুতার কারখানাগুলোর ব্যবসা ছোট হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কাছেও বর্তমানে কয়টি কারখানা চালু এবং এক দশকে কতটি কারখানা বন্ধ হয়েছে সে পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

কারখানা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় কারিগর মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, গত বছর জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত ১৫ লিটার আঠার (বেলি পেস্টিং) দাম ছিল ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই আঠা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয়। এবার রোজা শুরুর আগেই দাম বেড়েছে। বর্তমানে এটির দাম পড়ছে ছয় হাজার টাকা। আবার দুধ আঠা ২৫ লিটার কিনতে হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়। অথচ গত ঈদেও তা ছিল তিন হাজার টাকা। কারখানা বন্ধ হওয়ার পেছনে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াও একটি বড় কারণ।

দুই বছর আগে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে এখন ঢাকার সাভারের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রেজাউল করিম নামের একজন উদ্যোক্তা। তিনি প্রথম আলোকে জানান, অর্ডার কমে যাওয়ায় ও লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তিনি কারখানা বন্ধ করেছেন। তবে পরিস্থিতি অনুকূল হলে আবার চট্টগ্রামে ফিরবেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জানান, বিগত কোনো সরকারই এই শিল্পের দিকে নজর দেয়নি। চাহিদামতো প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। এর ওপর চোরাই পথে কম দামি বিদেশি জুতা দেশে ঢুকছে। ফলে দেশীয় জুতা মার খাচ্ছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের পাদুকাশিল্পকে বাঁচাতে উদ্যোক্তারা সরকারি প্রণোদনা ও সহজ শর্তের ঋণ দাবি করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প র ব ম দ রব ড় র ব যবস ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ  

মুক্তির মূলমন্ত্র ইসলামী শাসনতন্ত্র, শুধু নেতা নয় নীতির পরিবর্তন চাই পীরসাহেব চরমোনাই এই স্লোগানকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায়  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন কমিটির পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান (৩০ জুলাই) বুধবার বিকেলে মোগড়াপাড়া গোহাট্রা অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মুহা আব্দুল লতিফ এর সভাপতিত্বে মুহা. জয়নাল আবেদিন এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (নারায়ণগঞ্জ -৩) সোনারগাঁও আসনের হাতচপাখা মার্কার পদপ্রার্থী মুহা ফারুক আহমাদ মুন্সি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন মুজাহিদ কমিটির সদর হাজী মুহা আলী আহম্মদ মুন্সি, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সহ-সভাপতি মাওঃ আবুল কালাম আজাদী।

এসময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের কমিটিকে সপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান অতিথি। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সন্ত্রাসমুক্ত ও শান্তিময় দেশ গড়তে ইসলামী শক্তির বিকল্প নাই : মাসুম বিল্লাহ
  • না’গঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের বিশেষ সাধারণ সভা 
  • বিজয় মিছিলকে সফল করতে মহানগর বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি 
  • শ্রীমতী ময়ূরী মন্ডলের আশু রোগমুক্তি কামনায় পূজা পরিষদের বিশেষ প্রার্থনা 
  • সাম্প্রদায়িক কোন উস্কানিতে পা দিবেন না : টিপু
  • সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
  •  শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই : টিপু 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাথে গিয়াসউদ্দিনের মতবিনিময় সভা
  • সোনারগাঁয়ে ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ