খ্যাতিমান সাহাবি আনাস ইবনে মালিকের (রা.) খালার নাম ছিল উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)। তিনি দুধপানের দিক থেকে রাসুলের(সা.) ও খালা ছিলেন। তার স্বামী ছিলেন উবাদা ইবনে -সামিত (রা.)। মদিনায় হিজরতের সময় প্রায় দুই সপ্তাহ রাসুল (সা.) কুবায় অবস্থান করেন। সেই সময় তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, মসজিদে কুবা। এই মসজিদের পাশে ছিল উম্মু হারাম বিনতে মিলহানের বাড়ি।
রাসুল (সা.
কুবায় গেলে প্রায়ই উম্মু হারামের বাড়িতে তিনি বেড়াতে যেতেন এবং দুপুরে বিশ্রাম নিতেন। একদিন তেমন করেই তিনি সে-বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। উম্মু হারাম রাসুল(সা.)কে খাবার খাওয়ান। খাওয়ার পর তিনি বিশ্রাম নেন, উম্মু হারাম রাসুলের মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় রাসুলুল্লাহ(সা.) ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে ওঠেন। উম্মু হারাম বেশ অবাক হন, জানতে চান, ‘আল্লাহর রাসুল(সা.) , আপনার হাসির কারণ কী?’
রাসুলুল্লাহ (সা.) জানালেন, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। বললেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোককে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হলো। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমন অবস্থায় আরোহী, যেমন বাদশাহ তখতের ওপর।’
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এই স্বপ্ন ছিল একটি ভবিষ্যদ্বাণী। মুসলিমদের তখন কোনো নৌবাহিনী ছিল না। এমনকি আবু বকর (রা.)বা উমরের (রা.) খেলাফতকালেও মুসলিমদের নৌবাহিনী ছিল না। ফলে এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল বিস্ময়কর। উম্মু হারাম (রা.)অনুরোধ করেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, আমাকে যেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ তিনি প্রার্থনা করলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। আবারও হাসতে হাসতে ঘুম থেকে উঠলেন। উম্মু হারাম (রা.)হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে পূর্বের মতো বললেন এবং জানালেন যে, ‘তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। ‘ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর খালা উম্মু হারামকে কে শাহাদতের সুসংবাদ দেন। ফলে উম্মু হারাম জীবিত থাকাবস্থায় ‘শহিদা; (নারী শহিদ) উপাধি লাভ করেন। কেউ কেউ তাঁকে এই নামে ডাকত। (ড. আব্দুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৫১)
আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪রাসুলুল্লাহ (সা.) চলে গেলেন। আবু বকর (রা.), উমর-ও (রা.) ইন্তেকাল করেন। উম্মু হারাম (রা.)আশায় বসে আছেন, কবে সেই সুবর্ণ সুযোগ আসবে। প্রায় ২০-২৫ বছর পরের ঘটনা। উসমানের (রা.) খিলাফতকালে মুআবিয়া (রা.) নৌ-অভিযানের প্রস্তাব দেন। খলিফা উসমান (রা.) অনুমতি দেন।
মুআবিয়া (রা.) অভিযান চালান বর্তমান ইউরোপের সাইপ্রাসে। যোদ্ধাদের মধ্যে রাসুলের (সা.) কয়েকজন সাহাবি সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উবাইদা ইবনে সামিত (রা.); উম্মু হারামের স্বামী।
মুসলিম বাহিনীর প্রথম নৌ-অভিযানে স্বামীর সাথে উম্মু হারাম (রা.)অংশগ্রহণ করেন। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ ছাড়াই সাইপ্রাস জয় করে। বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন একদিন উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)তাঁর ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং ঘাড়ে আঘাত পান। সেই জখমের ফলে তিনি ইন্তেকাল করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৭৮৮, ৭,০০২)
উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)প্রথম মুসলিম নৌ-যোদ্ধা নারী। মদিনায় জন্মগ্রহণ করা সেই নারী সাহাবির কবর ইউরোপের সাইপ্রাসে।
আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) ছিলেন সুশিক্ষিত সাহাবি০২ ডিসেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ র ম ব নত প রথম মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা
শীর্ষ তারকা হওয়ার দৌড়ে কখনও অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও ২০০৮ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পীর মুকুট মাথায় উঠেছিল, তবু ধীরলয়ে পথ হেঁটে গেছেন। নিজের কাজে অতিমাত্রার উচ্ছ্বাসও দেখাননি কখনও। নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সবসময়। গানে গানে কুড়িয়ে চলেছেন শ্রোতার ভালোবাসা। এ কারণে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করে তাঁকে চিনে নেওয়া যায়। বলছি, কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজার কথা। গানের ভুবনে অন্তহীন পথচলায় যিনি এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছেন প্রায় দেড় যুগের পথ। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রহস্যটা কী? শুরুতে যখন এ প্রশ্ন লিজার সামনে তুলে আনা হলো, তখন দেখা গেল, লিজা নিজেই এর উত্তর খুঁজতে বসে গেছেন। এ পর্যায়ে হেসে বললেন, ‘না, এর উত্তর সত্যি জানা নেই। আসলে আমি তো গান গাই শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ আর ভালোবাসা কুড়ানোর জন্য। হ্যাঁ, শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে গানের চর্চা ধরে রেখেছি বললে ভুল হবে না। তারপরও প্রতিটি আয়োজনে শ্রোতার ভালোলাগা, মন্দলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এতে করে কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেই জনপ্রিয়তা শুরু থেকে একই রকম আছে কিনা– সেটি তো শ্রোতারা ভালো বলতে পারবেন।’ লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, যাদের কারণে শিল্পীজীবন বেছে নেওয়া, সেই শ্রোতা তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেখানে তাঁর গানগুলো ছিল চালিকাশক্তি। তবে ১৭ বছরের সংগীতের এ পথচলায় লিজার কণ্ঠে মেলোডি গান বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দেড় যুগে নানা ধরনের গান গেয়েছি, তবু কেন জানি শ্রোতারা আমাকে মেলোডি গানের শিল্পীদের দলে রেখে দিয়েছেন। অস্বীকার করব না যে, আমার কণ্ঠে যে ধরনের গান ভক্তরা বেশি শুনতে চান, সে ধরনের গান বেশি গাই। এটিও ঠিক যে, মেলো কিংবা স্যাড-রোমান্টিক গানের প্রতি শ্রোতার ভালোলাগা সবসময় ছিল। এখনও অনেকে মেলোডি ছাড়া গানের কথা ভাবতে পারেন না। এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেও আমি চাই না মেলোডি থেকে কখনও দূরে সরে থাকতে। তাই মেলোডি গান যেমন গাইছি, তেমনি গানের নিরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছি।’ লিজার এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সর্বশেষ প্রকাশিত গানগুলোর শুনলে প্রমাণ মেলে। ক’দিন আগে বিটিভির ‘বৈঠকখানা’ অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিনের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার নামে’ গানে যে লিজাকে শ্রোতা আবিষ্কার করবেন, তার সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে সামজ ও রিজানের সঙ্গে ‘তিতা কথা’ গানের লিজাকে। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ‘খুব প্রিয় আমার’, ‘তুমি এলে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’ গানগুলোয় লিজা অতীতের গায়কীকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও নতুন হয়ে নিজ কণ্ঠ তুলে এনেছেন।
মাঝে কিংবদন্তি শিল্পীদের বেশ কিছু কালজয়ী গানের রিমেকে কণ্ঠ দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংগীতবোদ্ধাদের। স্টেজ শো, রেডিও, টিভির আয়োজন থেমে শুরু করে সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি অন্যদের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নন। এককথায়, বহমান সময়টিকে সুরেলা করে রেখেছেন অনিন্দ্য কণ্ঠ জাদুতে।
আগামীতেও লিজার কণ্ঠ বাতাসে ভেসে বেড়াবে– এ অনুমান করা যায়।