ভালোভাবে ঘর তালাবদ্ধ করে লালবাগের দুই ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যরা গিয়েছিলেন ঈদের কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা শেষ করে মধ্যরাতে বাসায় ফিরে দেখেন, চোরের দল তালা ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ সব লুট করে নিয়ে গেছে। একটি বাসার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় চার চোরের ছবি ধরা পড়লেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী দুই ব্যবসায়ী।

স্বপন ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চোর আমার ঘরের দরজার তালা ভেঙে ব্যবসার পুঁজির ছয় লাখ টাকা নিয়ে গেল। আমরা পুলিশে অভিযোগ দিলাম, কিন্তু পুলিশ চোর ধরার ব্যাপারে কিছুই করল না।’

আরেক ব্যবসায়ী রিয়াদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্টে কেনা আমার স্ত্রীর সাড়ে তিন ভরি স্বর্ণ চুরি হয়ে গেল। মামলা করলেও পুলিশ চোর ধরার ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নয়।’

স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ায় স্ত্রীর কান্না

পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি ভবনের চতুর্থ তলায় স্ত্রী আইরিন আক্তারকে নিয়ে বসবাস করেন ব্যবসায়ী রিয়াদ উদ্দিন। আরেকটি ভবনের নিচতলায় স্ত্রী আসমা বেগম ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন মো.

স্বপন ইসলাম।

১৪ দিন আগে (১৫ মার্চ) আইরিন ও তাঁর স্বামী রিয়াদ ঈদের কেনাকাটা করতে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘর থেকে বের হন। ঈদের কেনাকাটা শেষ করে রাত ১২টার সময় বাসায় ফেরেন তাঁরা। রিয়াদ ঘরের দরজার দিকে খেয়াল করে দেখেন, তালা নেই। দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন রিয়াদ ও তাঁর স্ত্রী। তাঁরা দেখতে পান, জামা–কাপড় সব ফ্লোরে এলোমেলো পড়ে আছে। রিয়াদ দ্রুত ওয়ার্ডরোবের কাছে যান। দেখতে পান, ওয়ার্ডরোব খোলা। ভেতরে রাখা স্বর্ণালংকারের ব্যাগ নেই। রিয়াদ তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘ও আইরিন, স্বর্ণের ব্যাগ কোথায়?’

স্বামীর মুখ থেকে এ কথা শোনার পর আইরিন চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। তখন রিয়াদ স্ত্রীকে শান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকেন, তিনি থানায় মামলা করবেন। নিশ্চয় পুলিশ সোনা উদ্ধার করবে।

রিয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর আগে আমি বিয়ে করেছি। বিয়ের সময় কিনে দেওয়া স্বর্ণের কানের দুল, চেইন, একটি লকেট চুরি করে নিয়েছে চোরের দল। মামলা করলাম। কিন্তু পুলিশ আমার স্ত্রীর স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারল না। কোনো চোরকেও ধরতে পারল না।’

রিয়াদ জানান, চোর ধরা না পড়ায় স্ত্রী বাসায় ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন। এ জন্য গ্রাম থেকে শাশুড়ি ঢাকায় এসে স্ত্রীর সঙ্গে থাকছেন।

ব্যবসায়ীর পুঁজির ছয় লাখ টাকা চুরি

নিউমার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বপন। তাঁর মেয়ের নাম মুসকান (৭)। ছেলের নাম আবির (৪)। স্বপন ছিলেন নিউমার্কেটে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। তাঁর স্ত্রী আসমা দুই সন্তানকে নিয়ে সন্ধ্যার পর ঈদের কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা শেষ করে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফেরেন রাত ১২টার দিকে। ব্যবসায়ী স্বপন দেখতে পান, দরজায় তালা লাগানো নেই। বাইরে ছিটকিনি দিয়ে আটকানো।

দরজায় তালা না দেখতে পেয়ে স্বপন তাঁর স্ত্রী আসমার কাছে জানতে চান, ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় তিনি তালা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলেন কি না? জবাবে আসমা জানান, তিনি দরজায় তালা লাগিয়ে বের হয়েছিলেন। স্ত্রীর কাছ থেকে এ খবর শোনার পর ভয় পেয়ে যান স্বপন। দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন। দেখতে পান, ফ্লোরে পড়ে আছে মালামাল। স্বপন তখন বাসার সিসিটিভির দিকে তাকান। দেখতে পান, চোরের দল তাঁর দুটি সিসিটিভি নিয়ে গেছে। এরপর স্বপন যে কক্ষে আলমারি রাখা, সেই কক্ষে যান। দেখতে পান, আলমারির তালা ভাঙা।

আলমারিতে যে ব্যাগের ভেতর ছয় লাখ টাকা রেখেছিলেন, সেই ব্যাগ নেই। আরেকটি ব্যাগের ভেতরে রাখা স্বর্ণালংকারও নেই। ব্যবসার পুঁজির টাকা চুরি হওয়ায় স্বপন নিজের আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। নিজেই হতাশ হয়ে কাঁদতে শুরু করেন। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন দেন। পুলিশ সদস্যরা স্বপনের বাসায় আসেন। এর মধ্যে স্বপন তাঁর মুঠোফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন চার চোরের ছবি পুলিশকে দেখান। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা হয়েছে।

লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার দিন আগে আমি থানায় এ থানায় যোগ দিয়েছি। যেহেতু চুরির ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভির ফুটেজে চোর দেখা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ চোরদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ র ক ন ক ট স বর ণ ল ক র প রথম আল ক ব যবস য় স বপন আইর ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ