মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটায় ব্যস্ত, বাসার সব নিয়ে গেল চোর
Published: 30th, March 2025 GMT
ভালোভাবে ঘর তালাবদ্ধ করে লালবাগের দুই ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যরা গিয়েছিলেন ঈদের কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা শেষ করে মধ্যরাতে বাসায় ফিরে দেখেন, চোরের দল তালা ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ সব লুট করে নিয়ে গেছে। একটি বাসার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় চার চোরের ছবি ধরা পড়লেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী দুই ব্যবসায়ী।
স্বপন ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চোর আমার ঘরের দরজার তালা ভেঙে ব্যবসার পুঁজির ছয় লাখ টাকা নিয়ে গেল। আমরা পুলিশে অভিযোগ দিলাম, কিন্তু পুলিশ চোর ধরার ব্যাপারে কিছুই করল না।’
আরেক ব্যবসায়ী রিয়াদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্টে কেনা আমার স্ত্রীর সাড়ে তিন ভরি স্বর্ণ চুরি হয়ে গেল। মামলা করলেও পুলিশ চোর ধরার ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নয়।’
স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ায় স্ত্রীর কান্নাপাশাপাশি দুটি ভবন। একটি ভবনের চতুর্থ তলায় স্ত্রী আইরিন আক্তারকে নিয়ে বসবাস করেন ব্যবসায়ী রিয়াদ উদ্দিন। আরেকটি ভবনের নিচতলায় স্ত্রী আসমা বেগম ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন মো.
১৪ দিন আগে (১৫ মার্চ) আইরিন ও তাঁর স্বামী রিয়াদ ঈদের কেনাকাটা করতে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘর থেকে বের হন। ঈদের কেনাকাটা শেষ করে রাত ১২টার সময় বাসায় ফেরেন তাঁরা। রিয়াদ ঘরের দরজার দিকে খেয়াল করে দেখেন, তালা নেই। দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন রিয়াদ ও তাঁর স্ত্রী। তাঁরা দেখতে পান, জামা–কাপড় সব ফ্লোরে এলোমেলো পড়ে আছে। রিয়াদ দ্রুত ওয়ার্ডরোবের কাছে যান। দেখতে পান, ওয়ার্ডরোব খোলা। ভেতরে রাখা স্বর্ণালংকারের ব্যাগ নেই। রিয়াদ তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘ও আইরিন, স্বর্ণের ব্যাগ কোথায়?’
স্বামীর মুখ থেকে এ কথা শোনার পর আইরিন চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। তখন রিয়াদ স্ত্রীকে শান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকেন, তিনি থানায় মামলা করবেন। নিশ্চয় পুলিশ সোনা উদ্ধার করবে।
রিয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর আগে আমি বিয়ে করেছি। বিয়ের সময় কিনে দেওয়া স্বর্ণের কানের দুল, চেইন, একটি লকেট চুরি করে নিয়েছে চোরের দল। মামলা করলাম। কিন্তু পুলিশ আমার স্ত্রীর স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারল না। কোনো চোরকেও ধরতে পারল না।’
রিয়াদ জানান, চোর ধরা না পড়ায় স্ত্রী বাসায় ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন। এ জন্য গ্রাম থেকে শাশুড়ি ঢাকায় এসে স্ত্রীর সঙ্গে থাকছেন।
ব্যবসায়ীর পুঁজির ছয় লাখ টাকা চুরিনিউমার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বপন। তাঁর মেয়ের নাম মুসকান (৭)। ছেলের নাম আবির (৪)। স্বপন ছিলেন নিউমার্কেটে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। তাঁর স্ত্রী আসমা দুই সন্তানকে নিয়ে সন্ধ্যার পর ঈদের কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা শেষ করে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফেরেন রাত ১২টার দিকে। ব্যবসায়ী স্বপন দেখতে পান, দরজায় তালা লাগানো নেই। বাইরে ছিটকিনি দিয়ে আটকানো।
দরজায় তালা না দেখতে পেয়ে স্বপন তাঁর স্ত্রী আসমার কাছে জানতে চান, ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় তিনি তালা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলেন কি না? জবাবে আসমা জানান, তিনি দরজায় তালা লাগিয়ে বের হয়েছিলেন। স্ত্রীর কাছ থেকে এ খবর শোনার পর ভয় পেয়ে যান স্বপন। দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন। দেখতে পান, ফ্লোরে পড়ে আছে মালামাল। স্বপন তখন বাসার সিসিটিভির দিকে তাকান। দেখতে পান, চোরের দল তাঁর দুটি সিসিটিভি নিয়ে গেছে। এরপর স্বপন যে কক্ষে আলমারি রাখা, সেই কক্ষে যান। দেখতে পান, আলমারির তালা ভাঙা।
আলমারিতে যে ব্যাগের ভেতর ছয় লাখ টাকা রেখেছিলেন, সেই ব্যাগ নেই। আরেকটি ব্যাগের ভেতরে রাখা স্বর্ণালংকারও নেই। ব্যবসার পুঁজির টাকা চুরি হওয়ায় স্বপন নিজের আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। নিজেই হতাশ হয়ে কাঁদতে শুরু করেন। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন দেন। পুলিশ সদস্যরা স্বপনের বাসায় আসেন। এর মধ্যে স্বপন তাঁর মুঠোফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন চার চোরের ছবি পুলিশকে দেখান। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা হয়েছে।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার দিন আগে আমি থানায় এ থানায় যোগ দিয়েছি। যেহেতু চুরির ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভির ফুটেজে চোর দেখা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ চোরদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ র ক ন ক ট স বর ণ ল ক র প রথম আল ক ব যবস য় স বপন আইর ন
এছাড়াও পড়ুন:
লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮
কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।
গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।
আরো পড়ুন:
খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।
খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।
লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ