বাংলাদেশের আসন্ন পাকিস্তান সফরের সূচিতে পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওয়ানডে সিরিজ বাতিল করে অতিরিক্ত দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হবে।

২০২৫ সালের এশিয়া কাপ এবং ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। কারণ দুটি আসরই হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এশিয়া কাপ আয়োজিত হবে ভারতে, আর বিশ্বকাপের স্বাগতিক ভারত ও শ্রীলঙ্কা। তাই দুই দলই টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে।

ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) অনুযায়ী, মে মাসে পাকিস্তান সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওয়ানডে বাদ দিয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে দুই দল।

বিসিবির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্রিকবাজকে বলেন, ‘আমরা পাকিস্তান সফরে ওয়ানডে বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টি খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া।’

বাংলাদেশ সফরে এসে পাকিস্তানও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে। যদিও এটি এফটিপির অংশ নয়। চলতি মাসের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের আলোচনায় এই সিরিজ চূড়ান্ত হয়। বাংলাদেশে পাকিস্তানের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ক স ত ন সফর

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে কী কী গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কে কী জানা গেল

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন গতকাল বুধবার একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ খাতে বিশেষ সুবিধা পাবে। এখান থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

বিরল খনিজসহ ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ ও চুক্তির বিস্তারিত বিষয়ে পর্যালোচনা করা যাক:

গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও এগুলো কিসে ব্যবহৃত হয়

রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ হলো ১৭টি ধাতুর একটি সমষ্টি, যেগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি), মোবাইল ফোন, ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব ধাতুর কোনো কার্যকর বিকল্প নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ৫০টি খনিজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিরল খনিজ, নিকেল ও লিথিয়াম। এসব গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রতিরক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে খুব দরকারি।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বলেছে, লিথিয়াম, বেরিলিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, গ্যালিয়াম, জিরকোনিয়াম, গ্রাফাইট, অ্যাপাটাইট, ফ্লুরাইট ও নিকেল সরবরাহের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় দেশ ইউক্রেন।ইউক্রেনে কী ধরনের খনিজ আছে

ইউক্রেনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের চিহ্নিত ৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের মধ্যে ২২টি খনিজ রয়েছে ইউক্রেনে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্প ও নির্মাণসামগ্রী, মূল্যবান ধাতু, ইস্পাতশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও কিছু বিরল খনিজ।

ইউক্রেনের ভূতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশটিতে ল্যান্থানাম ও সেরিয়াম নামের বিরল খনিজ রয়েছে—যেগুলো টেলিভিশন ও বাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আছে নিয়োডিমিয়াম, যা উইন্ড টারবাইন ও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ইরবিয়াম ও ইট্রিয়াম রয়েছে—যেগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও লেজার প্রযুক্তিতে দরকার হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত গবেষণা বলছে, ইউক্রেনে স্ক্যান্ডিয়ামের মজুতও রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বলেছে, ইউক্রেন ভবিষ্যতে লিথিয়াম, বেরিলিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, গ্যালিয়াম, জিরকোনিয়াম, গ্রাফাইট, অ্যাপাটাইট, ফ্লোরাইট এবং নিকেলের অন্যতম সম্ভাবনাময় সরবরাহকারী দেশ হতে পারে।

ইউক্রেনের ভূতাত্ত্বিক সংস্থা জানিয়েছে, সে দেশে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ লিথিয়াম মজুত রয়েছে, যার পরিমাণ আনুমানিক পরিমাণ পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। এই লিথিয়াম ব্যাটারি, সিরামিক ও কাচ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ইউক্রেনে টাইটানিয়ামেরও মজুত রয়েছে। এই খনিজ প্রধানত দেশটির উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে মজুত রয়েছে। লিথিয়াম পাওয়া যায় মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে।

ইউক্রেনে প্রচুর পরিমাণে গ্রাফাইট রয়েছে, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বে গ্রাফাইটের মোট মজুতের প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছে ইউক্রেনে। এই খনিজের মজুত দেশটির মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে।

ইউক্রেনে কয়লারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মজুত রয়েছে। তবে দেশটির কয়লার বড় অংশ এখন রাশিয়ার দখলে চলে গেছে।

খনিজ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ইউক্রেনে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে কোনো বিরল খনি চালু নেই। চীন এখন বিশ্বে এই খাতের এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক।

গ্রাফাইটের বৈশ্বিক ভূগর্ভস্থ মজুতের ২০ শতাংশই আছে ইউক্রেনে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদন ও পারমাণবিক চুল্লিতে এ খনিজ ব্যবহৃত হয়।চুক্তি সম্পর্কে কী জানা গেল

কয়েক মাস ধরে কঠিন আলোচনার পর শেষ মুহূর্তের অনিশ্চয়তার মধ্যেই ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তি সই হয়েছে।

এ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে পুনর্গঠনের জন্য একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠিত হবে। এমন সময় চুক্তিটি সই হলো, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি শান্তিপূর্ণ চুক্তির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পোস্ট করা এক ছবিতে দেখা গেছে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী (প্রথম) ইউলিয়া সভিরিদেনকো চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন।

সভিরিদেনকো এক্সে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র (ইউক্রেন পুনর্গঠন) তহবিলে আর্থিক সহায়তা দেবে। চুক্তিতে ইউক্রেনের জন্য নতুন সহায়তার সুযোগ রাখা হয়েছে, যেমন বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই দাবি নিয়ে সরাসরি কিছু বলেনি।

সভিরিদেনকো বলেন, কোথায় ও কী খনিজ উত্তোলন হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে ইউক্রেন। দেশের ভূগর্ভস্থ সম্পদ ইউক্রেনের মালিকানায় থাকবে।

এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেনের কোনো ঋণের বাধ্যবাধকতা নেই। আর এ বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

তবে খসড়া চুক্তিতে ইউক্রেনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মার্কিন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা রাখা হয়নি, যদিও সেটিই ছিল ইউক্রেনের প্রাথমিক চাওয়া।

ইউক্রেনের কোন কোন খনিজের মজুত এখন কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখন দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।

যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের কয়লার মূল ভান্ডার ছিল পূর্বাঞ্চল, যা এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।

ইউক্রেনের থিঙ্কট্যাংক উই বিল্ড ইউক্রেন ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ গত বছরের প্রথমার্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ ধাতব সম্পদের মজুত এখন রাশিয়ার দখলে। যদিও এর বেশি কোনো তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠান দুটি।

রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে দোনেৎস্ক অঞ্চলে অগ্রসর হয়েছে। অঞ্চলটির পোকরোভস্ক শহরের কাছে অবস্থিত একমাত্র কোকিং কয়লা খনিটি জানুয়ারিতে ইউক্রেন বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে শহরটি দখলের চেষ্টা করছে মস্কো।

যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া অন্তত দুটি লিথিয়াম খনি দখল করেছে। এর মধ্যে একটি দোনেৎস্কে এবং অন্যটি দক্ষিণ-পূর্বের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। তবে কিয়েভ এখনো কেন্দ্রীয় কিরোভোহ্রাদ অঞ্চলের খনিজ সম্পদের মজুত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও ইউক্রেনের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো গতকাল বুধবার খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ