ঈদের পরেই পরীক্ষা, টিউশনেরও চাপ ছিল। তাই ২০২৩ সালের ঈদে বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মা ফোন করে জানতে চাইছিল, ‘কবে বাড়ি আসবে?’ উত্তরে শুধু বলেছিলাম, ‘আসতে পারছি না।’

চাঁদরাতে এলাকার বন্ধুদের সান্নিধ্য আর আম্মার বাটা মসলার গন্ধ মিস করছিলাম খুব। কিন্তু কিছু তো করার নেই। নুডলস আর সেমাই কিনে মেসে ফিরেছি। আমার রুমের সঙ্গে ছোট একটা ব্যালকনি ছিল। ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়লাম। নিজের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেল। ভাবছিলাম, ঈদের আনন্দটা ফিকে হয়ে গেল কেন?

ঈদের দিন এল, সকালে গোসল সেরে চলে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলে। আমার এক বন্ধু আছে, মেকানিক্যালের রেজা, যাকে আমি ‘গরিবের বন্ধু’ বলে ডাকি। গরিবের বন্ধু বলার কারণ—যখনই আমার বাইকে ঘোরার শখ জাগে, তখন ও কারও না কারও থেকে বাইক ধার করে এনে আমাকে ঘুরায়। রেজা আর আমি হলের ডাইনিংয়ে চলে গেলাম। ঈদে আমাদের মতো যারা বাসায় যেতে পারেনি, তাদের জন্য সেখানে খাবারের আয়োজন ছিল। ডাইনিংয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনুস মামা আমাদের সেমাই আর রুটি দিলেন। কিন্তু সেমাই খাওয়ার জন্য কোনো চামচ নেই। অগত্যা, হাত দিয়েই খাওয়ার কাজ সেরে কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়তে চললাম।

নামাজ শেষে অদ্ভুত একটা জিনিস খেয়াল করলাম, কেউ কারও সঙ্গে কোলাকুলি করল না। সবাই সবার মতো চলে গেল। কী আর করা, আমি আর রেজা শুধু কোলাকুলি করলাম। পথে ডিপার্টমেন্টের এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। বাসায় যেতে বললেন। দাওয়াত কবুল করলাম, কিন্তু গেলাম না। চা–বাগানে ঘুরতে চলে গেলাম। ঘোরাঘুরি করলাম আর গাইতে থাকলাম, ‘দ্য গ্রাস ওয়াজ গ্রিনার, দ্য লাইট ওয়াজ ব্রাইটার।’

দুপুরের খাবারও হলেই খেলাম। এরপর এসে বসলাম ক্যাম্পাসের গাজী কালুর টিলায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে সূর্যাস্ত দেখলাম। বিষণ্ন হৃদয়ে প্রকৃতির সবকিছুই অনেক সুন্দর লাগে। বিশ্বাস করুন, ওইটা আমার দেখা সুন্দরতম সূর্যাস্ত ছিল। মাঝে বাসা থেকে ফোন এল কয়েকবার। কথা হলো, আবার কয়েকবার ফোন কেটে দিলাম। সন্ধ্যার পরে গোলচত্বরে ফিরলাম। রেজা হলে চলে গেল, আর আমি মেসে। এভাবেই কেটেছিল একটা বিশেষ খুশির দিন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তায়েব খান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র বন ধ করল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির। 

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”

আরো পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।

ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।

বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।

তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ