শেখ হাসিনার নামে ঈদ উপহার বিতরণের ভিডিও ভাইরাল, বিএনপির প্রতিবাদ
Published: 30th, March 2025 GMT
বরগুনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঈদসামগ্রী বিতরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলায় আওয়ামী লীগ এমন কার্যক্রম পরিচালনার সাহস পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের প্রধান কয়েকটি সড়কে মিছিল করে সদর রোড এলাকার মিজান টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন জেলা বিএনপি ও এর সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন হাসান শাহিন, সফিকুজ্জামান মাহফুজ, রেজবুল কবির, বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রমুখ।
সমাবেশে নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তারা নানাভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমাদের পুলিশ প্রশাসন এসব ধরতে পারছে না। এর কারণে আওয়ামী লীগের দোসররা এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারছে।’
এর আগে শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অজ্ঞাতস্থানে ঈদসামগ্রী বিতরণের ২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী সমবেত হয়েছেন। তাঁদের হাতে একটি বস্তা ধরে বলতে শোনা যায়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে গরিব, দুস্থ, অসহায় ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীদের মধ্যে আজকে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার। আপনারা জানেন যে, আমরা একটি জয় বাংলা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জয়বাংলা পরিষদের মাধ্যমে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আমরা ঈদ উপহার বিতরণ করব। এরই ধারাবাহিকতা আজকে আমাদের ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
ভিডিওতে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর তৌহিদ মোল্লা, যুবলীগের জনশক্তি-কর্মসংস্থান সম্পাদক ও গৌরীচন্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবদুল হালিম মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য উপহার সামগ্রীর প্লাস্টিকের ব্যাগে ‘শেখ হাসিনার পক্ষে ঈদ উপহার’ লেখা দেখা যায়।
শেখ হাসিনার পক্ষে ঈদসামগ্রী বিতরণের প্রতিবাদে বরগুনায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ উপহ র কর ম দ র ব তরণ র ব এনপ র আওয় ম বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র্যাব, চায় সাইবার ইউনিট
অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।
কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।
এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।