Prothomalo:
2025-08-01@04:39:58 GMT

ইসলামের প্রথম দূত মুসআব (রা.)

Published: 1st, April 2025 GMT

মদিনায় হিজরতের পূর্বে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) হজের সময় বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসলাম প্রচার করছিলেন। তিনি তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন, তাদের বলেছিলেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করো, আমাকে আশ্রয় দাও এবং আমাকে এবং আমার বার্তা সমর্থন করো।’

মহানবী (সা.) একে একে গোত্র গুলির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের ইসলামের বার্তা দেন। একবার বনি শায়বান গোত্রের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি ছয়জন লোকের সাক্ষাৎ পান। তারা ছিল মদিনার খাযরাজ গোত্রের, যা মক্কা থেকে উত্তরে, তখনকার ইয়াসরিব শহরের বাসিন্দা ছিল।

ইসলামের গ্রহণ ও দায়িত্ব

মহানবী (সা.

) তাদের ইসলাম উপস্থাপন করেন এবং তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি তাদেরকে তাকে সমর্থন বা আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেননি, কারণ তারা ছিলেন মাত্র ছয়জন সাধারণ ব্যক্তি। এই ছয়জন মদিনায় ফিরে গিয়ে পরবর্তী বছরে আবার দেখা করতে আসে এবং আরও ছয়জন তাদের সহকর্মী যারা ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী ছিল, তাদের নিয়ে আসে। মহানবী (সা.) তাদের সঙ্গে ‘আকাবাহ’ স্থানে সাক্ষাৎ করেন। তারা ইবাদত করার, আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করার, চুরি না করার, ব্যভিচার না করার, সন্তান হত্যা না করার এবং মহানবী (সা.)-এর আদেশে ভালো কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

আরও পড়ুনইমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইয়াসরিব এক নতুন সুযোগ

মহানবী (সা.) তখন ইসলামের বাণী মদিনায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একজনকে দূত করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ছিল দাওয়াতের সফলতার জন্য একটি মূল মুহূর্ত। মহানবী (সা.) প্রিয় সাহাবি মুসআব ইবনে উমাইর (রা.)-কে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নির্বাচন করেন। মুসআবকে কেন তিনি নির্বাচন করেন, তার কয়েকটি কারণ আছে:

১. মুসআব (রা.) এতটা বয়স্ক ছিলেন না যে, মদিনার বিশাল দায়িত্ব নিতে তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আবার এতটা যুবকও ছিলেন না যে অতি তাড়াহুড়া বা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তার বয়স ত্রিশের মাঝামাঝি ছিলেন।

২. তিনি পূর্বে আবিসিনিয়ায় দুইটি হিজরতের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, সুতরাং তিনি মক্কা ছেড়ে অনেক সময় দূরে থাকতে অভ্যস্ত।

৩. মুসআব (রা.) আলাদা সংস্কৃতি ও ভাষার মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছিলেন।

৪. তিনি এক অত্যন্ত সম্মানিত পরিবার, বানী আবদ আদ-দার পরিবারের সদস্য ছিলেন, যারা কাবার চাবির রক্ষক হিসেবে পরিচিত। মদিনার মানুষ তার সঙ্গে সহজে কথা বলবে এবং তাকে শ্রদ্ধা করবে।

৫. তিনি ছিলেন প্রথম দিকের মুসলিম, মহানবীর (সা.) সঙ্গী এবং ইসলাম ও কোরআন তাঁর কাছ থেকে শিখেছিলেন।

আরও পড়ুনতওবা যেভাবে করা যায়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৬. তিনি ছিলেন দয়ালু, প্রজ্ঞাবান, মিষ্টভাষী ও রসবোধ সম্পন্ন, যা ইসলাম প্রচারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গুণ। এসব গুণ ব্যবহার করে তাদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

 ৭. তিনি ছিলেন এমন বিশ্বাসী, যিনি তার বার্তা ত্যাগ করবেন না এবং মদিনায় যে পার্থিব প্রলোভন আসবে, তাতে ভেঙে পড়বেন না। তিনি এই পরীক্ষা ইতিমধ্যে পেরিয়েছেন। কেননা, তার মা তাকে ইসলাম থেকে ফেরাতে কঠিন শর্তের মুখে ফেলেছিলেন তাকে, তবু তিনি টলেন নি।

 মদিনায় ইসলাম

মুসআব (রা.) প্রচেষ্টার কারণে ইসলাম মদিনার প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করেছিল। মানুষ একে একে এবং দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। তিনি মদিনাকে মহানবীর (সা.) আগমন এবং সমগ্র মানবতার জন্য দিশারি হওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রস্তুত করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে এক বছরের মধ্যে ৭৫ জন মদিনাবাসী মক্কায় ফিরে গিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে মদিনায় আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসেন।

 সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট কম

আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম র র জন য কর ছ ল মদ ন র মদ ন য় গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ