বেকহামের পার্টিতে যাওয়ার আগে ‘প্রেমিক’ মেসি
Published: 2nd, April 2025 GMT
ক্যাপশনে সবুজ রঙের একটা ভালোবাসার ইমোজি, ছবিতে আগুন!
আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর পরনে সবুজ রঙের একটি বডিকন পোশাক। লিওনেল মেসি ডার্ক স্যুটে শোভিত। বাঁ হাত দিয়ে বুকের কাছে টেনে ধরেছেন রোকুজ্জোকে। চোখে চোখ, ঠোঁট দুটোর মাঝে ইঞ্চি দেড়েক দূরত্ব। সামনের চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করায় পেছনে একটু সাইডে হেলে পড়েছে। গালে মিহি করে ছাঁটা দাঁড়ির গোড়াগুলো দেখাচ্ছে কণার মতো। আর মেসিকে দেখে মনে হচ্ছে, বেশ দক্ষ এক প্রেমিক।
আরও পড়ুনম্যারাডোনাকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে১১ ঘণ্টা আগেসবাই জানেন, তাঁর যত দক্ষতা ফুটবল মাঠে। সেখানেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠা। সে জন্য নামটা শুনলেই কল্পনায় বলও চলে আসে। পরশু রোকুজ্জোর নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিতে অবশ্য সেই মেসিকে চেনার উপায় নেই। এ এক নতুন মেসি! প্রেমিক মেসি, পার্টিবয় মেসি।
কীসের পার্টি, তা জানতে না চেয়ে বলুন কার পার্টি? যেনতেন কেউ নন, নব্বই দশকে ইংলিশ ফুটবলের গ্ল্যামার, হার্টথ্রব এবং সাবেক মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহামের। তাঁতে পুরোটা বলা হলো না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটড, রিয়াল মাদ্রিদ ও ইংল্যান্ডের জার্সিতে মাঠমাতানো, চ্যাম্পিয়নস লিগ, প্রিমিয়ার লিগ ও লা লিগাজয়ী, ফ্রি–কিকে বিশেষজ্ঞ, এসবে বেকহামকে মোটামুটি ধারন করা যায়। আরেকটি পরিচয়েও মেসির সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির বর্তমান ক্লাব ইন্টার মায়ামির সহমালিকও বেকহাম।
আরও পড়ুন‘নতুন মেসি’দের কার কী হাল০১ এপ্রিল ২০২৫ইংলিশ কিংবদন্তির ৫০তম জন্মদিন আসতে আরও এক মাস (২ মে) বাকি। তার আগেই মায়ামিতে বিশাল এক পার্টি দিয়ে বেকহাম হয়তো তাঁর জীবনে ‘হাফ সেঞ্চুরি’ উদ্যাপনের প্রাক্-প্রস্তুতি সারলেন। সোমবার সেই পার্টিতে যাওয়ার আগে রোকুজ্জো নিজেদের সাজপোশাকসহ ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন বলে জানিয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ক্লারিন। পার্টিতে শুধু মেসি-দম্পতি নয়, বলা ভালো খেলাধুলা ও গানের জগতের বেশির ভাগ তারকাই ছিলেন।
ইন্টার মায়ামিতে মেসির বার্সেলোনা সতীর্থ সের্হিও বুসকেটস, জর্দি আলবা ও লুইস সুয়ারেজ ছিলেন। গায়ক মার্ক অ্যান্থনি ছিলেন। পপ দল স্পাইস গার্লসের সাবেক সদস্য ও বেকহামের স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বেকহাম তো থাকবেনই। এনএফএল কিংবদন্তি টম ব্রাডি ও এনবিএ কিংবদন্তি শাকিলে ও’নিলও ছিলেন এই পার্টিতে।
বেকহাম তাঁর ইনস্টাগ্রামেও পার্টির কিছু ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ভাবলাম একটু আগেই উদ্যাপন শুরু করি। মায়ামিতে বিশেষ একটা রাত। ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপনের শুরুতে অসাধারণ কিছু বন্ধু ও পরিবারকে পেয়ে খুব সৌভাগ্যবান লাগছে।’
বেকহামের সন্তানেরাও ছিলেন পার্টিতে। যদিও তাঁর ছোট ছেলে ব্রুকলিনকে ছবিতে দেখা যায়নি। বেকহামের এই পোস্টে লুই ফিগো, রবি কিন, প্যাট্রিক ক্লুইভার্টরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন
দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।
নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।
মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।
ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।
শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।
পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।
ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।
এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।