রক্ত-মাংসের হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়েছেন অনেকে। হৃদযন্ত্রের হঠাৎ ‘হরতালে’ কাউকে পৃথিবীকে বলতে হয়েছে চিরবিদায়; কাউকে ভুগতে হচ্ছে ধুঁকে ধুঁকে। চর্বি জমে আটকে যাওয়া হৃদযন্ত্রের রক্তনালি সচল রাখতে কৃত্রিম স্টেন্ট পরানোসহ হৃদরোগ চিকিৎসায় এসেছে নানা প্রযুক্তি। কিন্তু বেহিসাবি জীবনযাত্রায় দিন দিন বেড়েই চলেছে হৃদরোগে আক্রান্তের হার। তবে এবার হৃদযন্ত্র প্রায় বিকল হওয়া মানুষদের জন্য দুরন্ত এক আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা। কম ঘনত্বের কিন্তু শক্তিশালী ধাতু টাইটানিয়াম দিয়ে তারা তৈরি করেছেন ‘বিভাকর’ নামে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র। মূলত যাদের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হবে, জটিল এ অস্ত্রোপচারের আগে টাইটানিয়ামের হৃদযন্ত্র দিয়ে তারা অন্তত তিন মাস বেঁচে থাকতে পারবেন।
সম্প্রতি এ কৃত্রিম হৃদযন্ত্র নিয়ে নেচার জার্নালে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে জানানো হয়, অস্ট্রেলীয় এক ব্যক্তির দেহে বিভাকর নামে ধাতব হৃদয় সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি কৃত্রিম হৃদয় নিয়ে এরই মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন ১০৫ দিনের বেশি। গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে ওই ব্যক্তির শরীরে বিভাকর প্রতিস্থাপন করা হয়। এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাঁচজনের শরীরে বিভাকর প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। তবে ওই অস্ট্রেলীয়ই প্রথম, যিনি তিন মাসের বেশি শরীরে ধাতব হৃদয় বয়ে বেড়িয়েছেন।
কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্র? উদ্ভাবকরা জানান, বিভাকর এমন এক কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড বা ডিভাইস, যা নিরবচ্ছিন্ন পাম্প হিসেবে কাজ করে। এতে চুম্বকীয় শক্তি কাজে লাগিয়ে স্থাপিত একটি রোটর রক্ত-মাংসের হৃৎপিণ্ডের মতোই নিয়মিত স্পন্দনের মাধ্যমে রক্তকে সারা শরীরে প্রবাহিত করে। এটি সক্রিয় রাখতে ত্বকের নিচ দিয়ে একটি তার যুক্ত থাকে, যা ডিভাইসটিকে বাহ্যিক ও বহনযোগ্য কন্ট্রোলারের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই কন্ট্রোলার দিনে ব্যাটারিতে চলে এবং রাতে বৈদ্যুতিক সংযোগে চালানো যায়। বেশির ভাগ যান্ত্রিক ডিভাইস হৃদযন্ত্রের বাঁ দিককে সহায়তা করে এবং সাধারণত রক্ত একটি থলিতে জমা করে রাখে। এগুলো প্রতিবছর প্রায় ৩ দশমিক ৫ কোটি বার সংকুচিত-প্রসারিত হয়ে রক্ত প্রবাহিত করে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত মোনাশ ইউনিভার্সিটির ভিক্টোরিয়ান হার্ট ইনস্টিটিউটের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জুলিয়ান স্মিথ বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসায় এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। একই কথা বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব সিডনির রক্তনালি বিশেষজ্ঞ সারাহ আইটকেন। তবে তিনি বলেন, ধাতব এই হৃদযন্ত্রের ব্যবহার কতটা কার্যকর হবে এবং খরচ কত হবে, তা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আছে। এ ধরনের গবেষণা চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল। এই অস্ত্রোপচার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জোসেফ রজার বলেন, কৃত্রিম হৃদয় প্রতিস্থাপনে এই সাফল্য গবেষকদের বুঝতে সাহায্য করবে, বাস্তবে মানুষ কীভাবে এই ডিভাইসের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। সূত্র: নেচার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ দর গ হ দযন ত র র হ দর গ ব ভ কর
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?