বাংলাদেশে যেকোনো এয়ারলাইনসের টিকিট কিনতে হলে ক্রেতাকে অন্যান্য দেশ থেকে বেশি টাকা গুনতে হয়। এর কারণ হিসেবে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাত্রাতিরিক্ত ট্রাভেল ট্যাক্স, এক্সাইজ ডিউটি, সিভিল এভিয়েশনের বর্ধিত ল্যান্ডিং-পার্কিং ভাড়া ও অতিরিক্ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং মাশুলের দোহাই দিয়ে থাকে।

পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, ওমানপ্রবাসী এক যাত্রী চার মাস আগে দেশে আসার জন্য সিঙ্গেল টিকিট কিনেছিলেন ২০ হাজার টাকায়। ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে তাঁকে সেই টিকিট কিনতে হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। মালয়েশিয়াগামী আরেক যাত্রীর ভাষ্য, তিন মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে এক হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (২৫ হাজার টাকা) দিয়ে সিঙ্গেল টিকিট কেটে দেশে আসেন তিনি। ফিরতি টিকিটের জন্য তাঁর কাছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এরপর মালয়েশিয়ায় থাকা এক বন্ধুর মাধ্যমে কম দামে টিকিট কেটে এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে কর্মস্থলে ফিরে যান।

উল্লেখ্য, উড়োজাহাজ যাত্রায় টিকিটের দাম কমানো এবং এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে টিকিট বুকিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা বরাদ্দ করা না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুকিং বাতিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি গ্রুপ বুকিংয়ের নামে কোনো এয়ারলাইনসের অনেক টিকিট একসঙ্গে ব্লক করা হলে পরে সাত দিনের মধ্যে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ তা বিক্রি নিশ্চিত করার তথ্য দিতে বলা হয়।

এর ফলে বিমানের টিকিটের ক্ষেত্রে যে সিন্ডিকেট ছিল, সেটা ভেঙেছে। কিন্তু এনবিআরের করসহ অন্যান্য মাশুল বেশি থাকায় টিকিটের দাম অন্যান্য দেশ থেকে এখনো বেশি। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং থাকা প্রয়োজন। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম থাকলে আইন প্রয়োগ করে তা সমাধান করতে হবে।

এয়ারলাইনসগুলো বলছে, বাংলাদেশ থেকে একটি প্লেনের টিকিটে এনবিআর থেকে যে পরিমাণ ভ্রমণ কর ও আবগারি শুল্ক নেয়, তা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিমানবন্দর থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি। ঢাকা থেকে বর্তমানে সিঙ্গাপুর, দুবাই, ওমান, শারজাহ, কুয়ালালামপুর—এই পাঁচ রুটের টিকিট কাটলে যাত্রীপ্রতি বাংলাদেশ সরকার ৯ হাজার ৮৯০ ট্যাক্স আদায় করে। অথচ একই রুটে মালয়েশিয়ার সরকার কর নেয় ২ হাজার ৫৬৮ টাকা, সিঙ্গাপুর ৫ হাজার ৮৭৮, ওমান ৩ হাজার ৮৭৯, দুবাই ও শারজাহ নেয় ৪ হাজার ৩৩২ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে একজন যাত্রী এই পাঁচ রুটে যাত্রা করলে তাঁকে ৭ হাজার টাকা বেশি কর দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া ভ্রমণ কর তো আছেই। সার্কভুক্ত দেশে প্রত্যেক যাত্রীকে দুই হাজার ও অন্যান্য দেশের জন্য চার হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হয়।

বাংলাদেশে উড়োজাহাজের যাত্রীদের ৮০ শতাংশই প্রবাসী শ্রমিক।  টিকিটের দাম বেশি হলে তাঁদের ওপর বাড়তি বোঝা চাপে, কম হলে তাঁদের কিছুটা সাশ্রয় হয়। সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে বিমান টিকিটের ওপর বেশি কর আরোপ করেছে, কিন্তু যাত্রীরা যদি বিদেশ থেকে টিকিট কেনেন, তাহলে রাজস্ব বাড়বে কীভাবে? যাত্রীরা যেখান থেকে কম দামে পাবেন, সেখান থেকেই টিকিট সংগ্রহ করবেন।

 এ অবস্থায় বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূল্যে যাতে যাত্রীরা উড়োজাহাজের টিকিট পেতে পারেন, সে জন্য করহার পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন য ন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ