বাংলাদেশ বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান
Published: 4th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চলমান ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের শেষে এ দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে সাত সদস্যের আঞ্চলিক ব্লক: বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের নেতারা ‘সমৃদ্ধ, স্থিতিস্থাপক এবং উন্মুক্ত বিমসটেক’ থিমের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হয়েছেন।
থাইল্যান্ড এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, বাংলাদেশ সেই থাইল্যান্ডের কাছ থেকে সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। বিমসটেকের লক্ষ্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে আঞ্চলিক সংযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বৃদ্ধি করা। এই ব্লকটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে বৃহত্তর সংহতকরণের চেষ্টা করছে।
দায়িত্ব স্থানান্তর অনুষ্ঠানটি একটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। সেখানে থাই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সমাপনী বক্তব্য রাখবেন এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা তাঁর মেয়াদকালে ব্লকের জন্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। বিমসটেকের সনদ অনুসারে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চেয়ারম্যানের পদ বর্ণানুক্রমিকভাবে আবর্তিত হয়।
আজ শুক্রবার শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয় অংশগ্রহণকারী নেতাদের একটি প্রতীকী গ্রুপ ছবির মাধ্যমে। এরপর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, বিদায়ী বিমসটেক সভাপতি স্বাগত ভাষণ দেন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যান্য বিমসটেক নেতারা আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে তাঁদের দেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বিবৃতি দেন।
সকালে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস থাই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রাতঃরাশের বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে বিমসটেক কাঠামোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ঢাকার বিআইএমএসআরইসি সচিবালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকায়, দেশটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সুবিধা, অবকাঠামোগত সংযোগ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির ওপর মনোনিবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন বিমসটেক চেয়ার এখন সংগঠনের এজেন্ডা পরিচালনার জন্য কাজ শুরু করবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, আঞ্চলিক ব্লকটি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে কৌশলগত ভূমিকা পালন করে চলেছে। খবর- বাসস
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব মসট ক ব মসট ক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।