‘বনবিবি কহে, “মোর বাঘেরে দিতে পারে অ্যাসাইলাম বিদেশেতে/ জীবন ঝুঁকিতে আছে বড় বেশি মানুষের বন্দুকের গুলিতে/ মিডিয়া–পত্রিকাতে আমার বাঘের ছবিতে ভরিয়া যাইবে/ বেঙ্গল টাইগার এবার রক্ষা পাইলো অ্যাসাইলামেতে।”’

সুন্দরবনের পৃথিবী বিখ্যাত বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্বের বিপন্নতা এভাবেই বনবিবির উক্তি মিলিয়ে তুলে ধরেছেন শিল্পী সাইদুল হক জুইস। শুক্রবার থেকে রাজধানীর লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে সুন্দরবন নিয়ে তাঁর একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘বনবিবির খোঁজে’ শুরু হয়েছে।

বনবিবি সুন্দরবনের লৌকিক দেবী। লোকবিশ্বাস অনুসারে, তিনি বন রক্ষা করেন। মৌয়াল, জেলে, কাঠুরেসহ সুন্দরবনকেন্দ্রিক পেশার অনেকেই মনে করেন, বনবিবি যদি তুষ্ট থাকেন, তাহলে তাঁরা বনে থাকাকালে বাঘ, সাপ, কুমিরের ভয় থাকবে না। এই লৌকিক দেবীকে প্রতীক হিসেবে অবলম্বন করে শিল্পী সাইদুল হক জুইস তাঁর শিল্পকর্মে সুন্দরবনের বিপন্নতাকে তুলে ধরেছেন।

প্রদর্শনীতে বড় আকারের অ্যাক্রিলিকের চিত্রকর্ম, কালি–কলমের রেখাচিত্র, বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য ও মুখোশসহ ৩০টি শিল্পকর্ম রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে প্রবীণ শিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বার্‌ক্ আলভী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, জুইস বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। এই প্রদর্শনীতেও তিনি বিভিন্ন মাধ্যমের কাজে শিল্পসম্মতভাবে সুন্দরবনের প্রাণ ও প্রকৃতির বিপন্নতা তুলে ধরেছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম বলেন, করোনার দুঃসময়ে যখন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্নতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময় শিল্পী সাইদুল হক জুইস সুন্দরবন নিয়ে এই কাজগুলো শুরু করেছিলেন। সুন্দরবনে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্যের যে বিপর্যয় ঘটেছে, শিল্পী সেই দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। শুধু সুন্দরবন নয়, বর্তমানে সারা বিশ্বেই পরিবেশের বিপর্যয় তীব্র হয়ে উঠেছে। এই বিপর্যয় রোধ করতে যে জনসচেতনতা প্রয়োজন, সেখানে এ ধরনের শৈল্পিক উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রদর্শনী চলবে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র শ ল পকর ম বনব ব

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা