বয়স ষাট না পেরুতেই আমাদের হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। হাঁটু-কোমর-পা ব্যথা হয় অল্প শ্রমেই। সেইসব কাটিয়ে ওঠার জন্য কী কী করবেন, তা জেনে নেওয়া যাক!
সক্রিয় থাকুন
যাদের বয়স ৬৫ পেরিয়েছে, তাদের উচিত সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করা। অর্থাৎ দৈনিক ৪০-৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা বাঞ্ছনীয়। যদি একবারে কষ্ট হয়, তাহলে সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে ব্যায়াম করবেন। এ ছাড়াও দৈনিক বাজার, বাগান করা বা লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন। যারা যোগব্যায়াম বা অ্যারোবিক ব্যায়াম করে অভ্যস্ত, তা ছেড়ে দেবেন না। কারণ বার্ধক্যে কিছু না করার চেয়ে সক্রিয় থাকাটাই উপকারী। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে না থেকে ২০-৩০ মিনিট পর পর উঠে দাঁড়ান এবং একটু হাঁটা-চলা করুন।
নিজের ভারসাম্য রক্ষা
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের গাঠনিক উপাদানের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই পড়ে গেলে অল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নিজের ভারসাম্য রক্ষার দিকে খেয়াল রাখুন। নিয়মিত চোখ ও কান পরীক্ষা করান। কারণ দৃষ্টি ও শ্রবণের ওপরে আমাদের ভারসাম্য অনেকখানি নির্ভরশীল। অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ থাকলে অবশ্যই সাবধানে থাকবেন। কোমড় বাঁকা করে কোনো জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকুন। তার বদলে হাঁটু ভাঁজ করে বসে জিনিসটি নিচ থেকে তুলবেন।
পুষ্টিকর ও সম্পূরক খাবার
বেশি বা কম ওজন উভয়ই হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। ইন্টারনেটে ‘বডি মাস ইনডেক্স’ বা বিএমআই ক্যালকুলেটরের সাহায্যে উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী নিজের সঠিক ওজন কত তা জানতে পারবেন।
পূর্ণবয়স্ক মানুষের গড়ে দৈনিক ১ হাজার ২০০ মিগ্রা ক্যালসিয়াম ও ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। খাবার থেকে যার অনেকটা পূরণ হওয়া উচিত।
আমিষ, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান। সামুদ্রিক মাছ, ডিম, কলিজা, সবুজ শাক, ব্রকলি জাতীয় সবজি, দুধ জাতীয় খাদ্য- বিশেষত পনির, সয়াবিন, ইলিশ মাছ, ছোট মাছ ইত্যাদি খেতে পারেন।
রোদে গেলেও ত্বকের নিচে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে, আপনার বয়স অনুযায়ী ভিটামন ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ট্যাবলেটও খেতে পারেন।
অন্যান্য
হাড়ের যত্নের স্বার্থে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। নারীর মেনোপজের পর ও পুরুষদের বার্ধক্যে হরমোনে তারতম্যের প্রভাব পড়ে হাড়ের ওপর, তাই নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত থাইরয়েড হরমোন ও অন্যান্য পরীক্ষা করান।
লেখক: মেডিকেল অফিসার, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব য য় ম কর
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।