অশান্ত হৃদয়ের প্রেরণা জুলাইবিব (রা.)
Published: 5th, April 2025 GMT
জুলাইবিব (রা.) ছিলেন মহানবীর (সা.)-এর একজন প্রিয় সাহাবি। যদিও তিনি ইতিহাসের মহান নায়কদের সারিতে তেমনভাবে স্থান পাননি। জুলাইবিবের (রা.) জীবন এবং তার কর্মকাণ্ড সেভাবে স্মরণ করা হয়নি, তবে তার সম্পর্কে যতটুকু তথ্য পাওয়া যায়, তাতে অনেক হতাশ হৃদয় প্রেরণা খুঁজে পাবেন।
বাধার পাহাড় পেরিয়ে
জুলাইবিব (রা.)দেখতে লম্বা বা সুন্দর কেউ ছিলেন না। ইসলামের আগমনের আগে তিনি সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতও ছিলেন না। তার শারীরিক অবস্থা ছিল সমাজের সাধারণ নায়কদের থেকে ভিন্ন। তিনি ছিলেন এক অঙ্গহীন, প্রতিবন্ধী এবং অতিরিক্ত খাটো ছিলেন। বংশেও তেমন সম্ভ্রান্ত নন। ফলে সমাজ তাকে তেমনভাবে গ্রাহ্য করেনি, বরং তার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা ছিল।
তবে এই হতাশা ও অপমান সত্ত্বেও জুলাইবিব(রা.
নতুন জীবন
ইসলাম গ্রহণের পর জুলাইবিব (রা.)আল্লাহর পরিপূর্ণ দাস হয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি হয়ে ওঠেন। তিনি নবীজির (সা.)কাছ থেকে সততা, আন্তরিকতা এবং দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেন। নবীজি (সা.) তার প্রতি গভীর দয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করতেন। একবার নবীজি (সা.) এক আনসারিকে বললেন, ‘আমার জন্য তোমার কন্যাকে বিবাহের জন্য দাও।’
আনসারি ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল(সা.)! এটি আমার জন্য সম্মান ও আশীর্বাদ।’
নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি তাকে নিজের জন্য চাই না।’
‘তাহলে, আল্লাহর রাসুল, কার জন্য?’
নবীজি (সা.) বললেন, ‘জুলাইবিবের জন্য।’
আনসারি ব্যক্তি অবাক হয়ে বললেন, ‘এমনি হলে, আমাকে তার মার সাথে পরামর্শ করতে দিন।’
মেয়ের মা প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, ‘জুলাইবিব (রা.)? আল্লাহর কসম, আমরা তাকে আমাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে পারব না।’
আরও পড়ুনযে আমলে রিজিক বাড়ে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫তবে মেয়েটির ছিল এক অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি। সে বলল, ‘আমরা কি আল্লাহর রাসুলের আদেশ অগ্রাহ্য করব? আমি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হব না। আপনি তাঁর আদেশ মেনে চলুন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,১১২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৪৭)
মেয়েটির সিদ্ধান্ত সমাজের সমস্ত ধারণা ও ভাবনা ভেঙে দেয়। মেয়েটির আত্মবিশ্বাস ও আস্থা ইসলামি মূল্যবোধের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
পরদিন বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। উসমান ইবনে আফফান (রা.) ও আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) একত্রে জুলাইবিবকে (রা.)অর্থ সাহায্য করেন যাতে তার বিয়ের আয়োজন করা যায়। জুলাইবিবের (রা.) জীবনে সুখ ফিরে আসে, এবং তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে সুখী জীবন কাটান।
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫শহীদ হওয়া
এক যুদ্ধের পর নবী মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের কাছে জানতে চান, ‘আপনার মধ্যে কেউ কি হারিয়ে গেছে?’
তারা বললেন, ‘এবং এমন কেউ নেই।’
তবে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি তো দেখছি, জুলাইবিব(রা.) হারিয়ে গেছে।’
সাহাবিরা তাকে খুঁজে পান। তাকে সাতজন নিহত শত্রুর মধ্যে শহীদ অবস্থায় পাওয়া যায়। নবীজি (সা.) তার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তিনি সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। তারপর তারা তাকে হত্যা করল। তিনি আমার অন্তর্গত এবং আমি তার অন্তর্গত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭১)
জুলাইবিবের (রা.) জীবন, যে একসময় সমাজের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত ছিল, ইসলামের মহত্ত্ব এবং নবীজির (সা.) সহানুভূতি তাকে অনেকের হৃদয়ে জায়গা করে দেয়। আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, বাইরের সৌন্দর্য এবং সামাজিক মর্যাদা থেকে অনেক বড় কিছু হলো, আন্তরিকতা, বিশ্বাস ও ইমান। জুলাইবিবের গল্প আমাদের শেখায়, সমাজের অবস্থান যা-ই থাকুক, ইসলাম তাকে সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পারে।
আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল
১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।
১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।
১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।
মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।
বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।
আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।
কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।
ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি