মরক্কোর মারাকেশ শহরে এল আমাদের চাঁদরাত আর ঈদ।

৯ লাখেরও বেশি মানুষের শহর মারাকেশ, হাজার বছরের পুরোনো। সেই বারবারদের আমল থেকেই এ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র। মরক্কোর মতো সুন্দর দেশ আমি আর দেখেছি কি না, সন্দেহ আছে, এর আয়তন বাংলাদেশের চার গুণ, কিন্তু লোকসংখ্যা চার কোটিরও কম। আফ্রিকার এই দেশের বেশির ভাগ এলাকাই অনাবাদি, হয় পাথুরে পাহাড়, মালভূমি, নয়তো মরুভূমি। আবহাওয়া দিনের বেলা গরম, রাতের বেলা খুব ঠান্ডা, বলা যায় চরমই। নিম্নমধ্য আয়ের দেশই বলা যায়, কিন্তু রাস্তাঘাট আমেরিকার রাস্তাঘাটের চেয়েও সুন্দর। শহরগুলো ঝকঝকে–তকতকে, প্রশস্ত সব রাস্তার মাঝখানে সুদৃশ্য বড় আকারের উদ্যান, সেসব যদি ছোট আকারের হতো, তবে তাদের সড়কদ্বীপ বলা যেত, এখন সড়কবাগান বলা যায়। আমরা উঠেছি যে হোটেলে, তা বিডি মোহামেদ ৬ সড়কে, এখান থেকে এই শহরের বিখ্যাত মসজিদ কুতুবিয়া আর প্রশস্ত প্রাঙ্গণ জামা এল ফিনা ৫ কিলোমিটার।

২৯ রমজান বাংলাদেশের মতোই ছিল ৩০ মার্চ ২০২৫। সৌদি আরবে আগের দিন ঈদ হওয়ায় সবাই জানত ৩১ মার্চ ঈদ হতে যাচ্ছে। আমরা চাঁদরাতের সন্ধ্যাটুকু কাটাতে চলে গেলাম বিগ স্কয়ার বা জামা এল ফিনায়। যেখানে বিশাল চত্বরে নানা ধরনের ফেরিওয়ালা, জিপসিনাচ, ছোটখাটো জুয়ার আসর থেকে শুরু করে ঢাকার গুলিস্তান, হকার্স মার্কেট, বঙ্গবাজার, চাঁদনীচক, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চকবাজার, শাঁখারীপট্টি, নবাবপুর যেন এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছে অনেক বড় জায়গাজুড়ে। সেখানে থাকবার হোটেল, খাবার রেস্তোরাঁ, কফিশপ, এবং নানা ধরনের পর্যটক আকর্ষণকারী দোকানের পসরা।

চাঁদরাতে ওখানে ট্যাক্সিক্যাবে ৬০ দিরহাম দিয়ে গেলাম, বাংলাদেশি টাকায় ৭৮০ টাকার মতো পড়ল। একটা টেরেস হোটেলে ইফতার কাম নৈশভোজে বিখ্যাত তাজিন আর কেফতা খেলাম আমি আর মেরিনা। খরচ পড়ল ৩০০ দিরহাম, প্রায় ৩ হাজার ৯০০ টাকা। তাজিন জিনিসটা যেমন খাবার, তেমনি বাসন কিংবা হাঁড়ির নাম, মাটির তৈরি একটা শানকির ওপরে টোপরের মতো পোড়া মাটির ঢাকনি। সাধারণত খুব কারুকার্যময় নকশা করা হয় তাজিন জিনিসটায়। আমরা মুরগির তাজিন নিয়েছিলাম, লেবু আর অলিভ অয়েলে রান্না করা, খিদেভরা পেটে দারুণ লাগল। সে তুলনায় বিফ কেফতা (কোফতা) ততটা জমল না, ল্যাম্বের গন্ধের মতো একটা কিছু নাসারন্ধ্রে আঘাত করছিল।

মরক্কোর আকাশে ঈদের চাঁদ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মরক ক

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ