ঈদের লম্বা ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে খুলেছে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস। রাস্তায় যানজট তেমন না থাকলেও গণপরিবহন–সংকট ও বাড়তি ভাড়া গুনে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে ঢাকাবাসীকে।

টেকনিক্যাল মোড়ে দাঁড়ানো ইমতিয়াজ আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ধানমন্ডি যাবেন। কিন্তু পরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন এক ঘণ্টা ধরে। তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে ১৩০ কিলোমিটার পথ পার করে এসেছি ৫০০ টাকায়। অথচ এখান থেকে ধানমন্ডি ৬ কিলোমিটার রাস্তার ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। তাই দাঁড়িয়ে আছি।’

সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। একই রকম ভোগান্তিতে পড়েছেন টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, মহাখালী হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করা যাত্রীরাও।

সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লোকাল বাসচালক ও যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে গণপরিবহন–সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় যানজট থাকায় উত্তরের জেলাগুলো থেকে আসা যাত্রীরা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, পরিবহন–সংকটকে পুঁজি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলগুলো।

মিরাজ উদ্দিন নামের একজন যাত্রী বলেন, তিনি জয়পুরহাট থেকে এসেছেন। রাজধানীর রামপুরা যাবেন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন এক ঘণ্টা থেকে। হাতে ব্যাগ থাকায় লোকাল বাসে উঠতে পারছেন না বলে জানান মিরাজ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলগুলোও অনেক বেশি ভাড়া দাবি করছে, বলেন তিনি। কেউ কোনো নিয়ম মানছে না বলে অভিযোগ করেন মিরাজ।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক জানান, যাত্রীর অনেক চাপ। আবার রাস্তায় কোথাও কোথাও যানজট আছে। যানজটের কারণে গাড়ি আসছে না। তাই চালকেরা বেশি ভাড়া দাবি করছেন। তবে সব চালক বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন না।

কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গণপরিবহনের অপেক্ষায় যাত্রীরা। আজ সকাল ৯টার দিকে তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে