‘১৩০ কিলোমিটার এসেছেন ৫০০ টাকায়, ঢাকায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার ভাড়াও চায় ৫০০’
Published: 6th, April 2025 GMT
ঈদের লম্বা ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে খুলেছে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস। রাস্তায় যানজট তেমন না থাকলেও গণপরিবহন–সংকট ও বাড়তি ভাড়া গুনে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে ঢাকাবাসীকে।
টেকনিক্যাল মোড়ে দাঁড়ানো ইমতিয়াজ আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ধানমন্ডি যাবেন। কিন্তু পরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন এক ঘণ্টা ধরে। তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে ১৩০ কিলোমিটার পথ পার করে এসেছি ৫০০ টাকায়। অথচ এখান থেকে ধানমন্ডি ৬ কিলোমিটার রাস্তার ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। তাই দাঁড়িয়ে আছি।’
সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। একই রকম ভোগান্তিতে পড়েছেন টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, মহাখালী হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করা যাত্রীরাও।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লোকাল বাসচালক ও যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে গণপরিবহন–সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় যানজট থাকায় উত্তরের জেলাগুলো থেকে আসা যাত্রীরা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
যাত্রীরা অভিযোগ করেন, পরিবহন–সংকটকে পুঁজি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলগুলো।
মিরাজ উদ্দিন নামের একজন যাত্রী বলেন, তিনি জয়পুরহাট থেকে এসেছেন। রাজধানীর রামপুরা যাবেন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন এক ঘণ্টা থেকে। হাতে ব্যাগ থাকায় লোকাল বাসে উঠতে পারছেন না বলে জানান মিরাজ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলগুলোও অনেক বেশি ভাড়া দাবি করছে, বলেন তিনি। কেউ কোনো নিয়ম মানছে না বলে অভিযোগ করেন মিরাজ।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক জানান, যাত্রীর অনেক চাপ। আবার রাস্তায় কোথাও কোথাও যানজট আছে। যানজটের কারণে গাড়ি আসছে না। তাই চালকেরা বেশি ভাড়া দাবি করছেন। তবে সব চালক বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন না।
কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গণপরিবহনের অপেক্ষায় যাত্রীরা। আজ সকাল ৯টার দিকে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)