উম্মে সালামা (রা.): ইসলামের প্রথম যুগের মহীয়সী নারী
Published: 7th, April 2025 GMT
উম্মে সালামার(রা.)পুরো নাম হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া ইবন আল-মুগীরা। তিনি ছিলেন রূপে ও গুণে অনন্য, অভিজাত বংশোদ্ভূত এবং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এক মহান নারী। তাঁর স্বামী আবদুল্লাহ ইবন আবদ আল-আসাদ ছিলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাহসী সাহাবিদের একজন, যিনি রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর গোপনে দাওয়াতকালে ইসলাম গ্রহণ করেন।
উম্মে সালামা (রা.
প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী উম্মে সালামা শিরক ও মূর্তিপূজার অযৌক্তিকতা অনুধাবন করে নিজ উদ্যোগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবু উমাইয়া ছিলেন মক্কার এক সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, যার উপাধি ছিল ‘যাদুর রকব’—অর্থাৎ ‘ভ্রমণকারীদের রসদদাতা’। কোনো সফরে গেলে তিনি তাঁর সঙ্গীদের খাবার আনতে দিতেন না; সকলের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও তিনি নিজেই করতেন। এমন ছিল তাঁর উদারতা ও আতিথেয়তা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলাম প্রচারের শুরুতে তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেন। পরে যখন তিনি প্রকাশ্যে প্রচার শুরু করেন, তখন তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন। এরই প্রেক্ষিতে নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের একটি অংশকে আবিসিনিয়ায় হিজরতের পরামর্শ দেন।
ইতিহাস বলে, এই হিজরত দুর্বল ও নির্যাতিত মুসলিমদের আত্মরক্ষার একটি প্রচেষ্টা ছিল। তবে আবু সালামা ও উম্মে সালামা সহ বহু অভিজাত পরিবার এই দলে ছিলেন, যারা সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ছিলেন ও নিজেদের রক্ষা করার সামর্থ্য রাখতেন। এর মানে, হিজরতের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।
আরও পড়ুনআবু জাহেলের মা আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.) সাহাবি ছিলেন ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪রাসুল (সা.) দুটি উদ্দেশ্যে সাহাবিদের আবিসিনিয়ায় পাঠান—প্রথমত, মক্কার উত্তেজনা প্রশমিত করা, দ্বিতীয়ত, ইসলামের বিশ্বজনীনতা প্রমাণ করা। তারা কেউ কয়েক মাস থেকে ফিরে আসেন, কেউবা সেখানে ১৫ বছর পর্যন্ত অবস্থান করেন। উম্মে সালামা ও তাঁর স্বামী আনুমানিক তিন থেকে চার বছর সেখানে ছিলেন। তাঁদের প্রথম সন্তান সালামা-র জন্মও হয় সেখানে।
তাঁরা মক্কায় ফিরে আসেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে থেকে ইসলামের দাওয়াতে অংশ নিতে। কিন্তু মক্কার বিরোধীরা আরও নৃশংস হয়ে ওঠে—নবীজিকে উপহাস করে, মুসলিমদের ওপর নানা রকম নির্যাতন চালায়, এমনকি তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
এই প্রতিকূল পরিবেশেই ইসলাম নতুন আশ্রয় খুঁজে পায় ইয়াসরিবে (পরবর্তীতে মদিনা)। সেখানকার মানুষ প্রতিদিন ইসলাম গ্রহণ করছিল। এক পর্যায়ে তারা নবীজিকে ও মক্কার মুসলিমদের আমন্ত্রণ জানায় মদিনায় চলে আসার জন্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার মুসলিমদের পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকার গ্রহণ করেন এবং সাহাবিদের হিজরতের নির্দেশ দেন।
উম্মে সালামা ও তাঁর স্বামীও হিজরত করেন, কিন্তু কিছুদিন পরেই তাঁর স্বামী ইন্তেকাল করেন।
আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবি০৯ নভেম্বর ২০২৪তৎকালীন আরব সমাজে বহু সন্তানের জননী হওয়া বা বিধবা হওয়া পুনর্বিবাহে বাধা ছিল না। তাই ইদ্দত পূর্ণ হলে, তাঁর কাছে একাধিক প্রস্তাব আসে। আবু বকর ও উমর (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবিরাও বিবাহের প্রস্তাব দেন, কিন্তু উম্মে সালামা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্বামীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করছিলেন।
তিনি তাঁর স্বামীর কাছ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস শুনেছিলেন: ‘যে কেউ বিপদে পড়ে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী এই দোয়া পড়ে—‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’—আল্লাহ তাকে সহায়তা করবেন এবং তার জন্য এর চেয়েও উত্তম কিছু দান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯১৮)
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, ‘আমি এই দোয়া বারবার পড়তাম। কিন্তু ভাবতাম, আবু সালামার চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে?’ তবু আল্লাহর রহমতে সেটাই ঘটেছিল।
সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর এক মহান প্রস্তাব আসে—রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তাঁকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। উম্মে সালামা সম্মানিত বোধ করলেও কিছুটা সংকোচবোধও করেন। তিনি বার্তা পাঠান: ‘আমি ঈর্ষাকাতর প্রকৃতির, বয়স হয়েছে এবং আমার অনেকগুলো সন্তান।’
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এটি ছিল অস্বীকৃতি নয়, বরং বিনম্র অজুহাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বলেন, ‘তোমার ঈর্ষাভাব দূর করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। বয়স? আমি তো তোমার চেয়ে বড়। আর তোমার সন্তানদের দায়িত্ব আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে অর্পণ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,১০৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৯৪৩)
কার বিধবা সন্তানদের জন্য এর চেয়ে উত্তম অভিভাবক আর হতে পারে? এভাবেই এই সম্মানজনক বিয়েটি সম্পন্ন হয় এবং উম্মে সালামা (রা.) উপলব্ধি করেন—আল্লাহ তাঁকে এমন এক স্বামী দিয়েছেন, যিনি তাঁর প্রথম স্বামীর চেয়েও উত্তম, যদিও আবু সালামাও এক মহান মানুষ ছিলেন।
সূত্র: আরবনিউজ ডট কম
আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব র প রথম ইসল ম র আল ল হ র জন য হ জরত
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।