‘কতজন ভাইয়ের রক্তাক্ত ছবি আর মেডিকেলের কাগজ নিছে। কিন্তু পরে আর কিছু পাই নাই। সরাসরি গিয়া কই (কোথায়) আবেদন করতে হইবো, তা তো বুঝতে পারি নাই।...মাথায় গুলি নিয়াই ভাইটা মইরা গেল।...কিছুই করতে পারলাম না। চিকিৎসাও পাইল না।’

মুঠোফোনে কথাগুলো বলছিলেন আনিসুর রহমান। গত শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া কিশোর আশিকুর রহমান ওরফে হৃদয়ের বড় ভাই তিনি। আনিসুর জানালেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল আশিকুর।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পশ্চিম জৌতা গ্রামের অটোরিকশাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে আশিকুর। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া আশিকুর বাড়িতেও থাকত, ঢাকায় বড় ভাই আনিসুর রহমানের বাসায়ও থাকত। চার ভাইবোনের মধ্যে আশিকুর সবার ছোট।

মৃত্যুর পর আলোচনায় এসেছে আশিকুর। গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জৌতা অলিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে আশিকুরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজা শেষে অচেতন হয়ে পড়েন বাবা আনসার হাওলাদার। সে ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আশিকুরের স্বজনদের অভিযোগ, আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় সহায়তা চেয়েও পাননি।

আনিসুর রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা অটোরিকশাচালক। সেই অটোরিকশা ও একটি গরু বিক্রি করে ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন। ভাই মারা যাওয়ার পর প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে আসছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাবাকে একটি রিকশাও কিনে দেওয়া হয়েছে।

৫ এপ্রিল প্রথম আলোতে ‘ছাত্র আন্দোলনে আহত আশিকুর মাথায় গুলি নিয়েই মারা গেল, অর্থসহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রশাসনের নজরে আসে।

গত রোববার পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন যান আশিকুরদের বাড়িতে। তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশিকুরের বাবা আনসার হাওলাদারকে একটি রিকশা কিনে দেন।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন যান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশিকুরের বাবা আনসার হাওলাদারকে একটি রিকশা দেন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ