‘মাথায় গুলি নিয়াই ভাইটা মইরা গেল...চিকিৎসাও পাইল না’
Published: 7th, April 2025 GMT
‘কতজন ভাইয়ের রক্তাক্ত ছবি আর মেডিকেলের কাগজ নিছে। কিন্তু পরে আর কিছু পাই নাই। সরাসরি গিয়া কই (কোথায়) আবেদন করতে হইবো, তা তো বুঝতে পারি নাই।...মাথায় গুলি নিয়াই ভাইটা মইরা গেল।...কিছুই করতে পারলাম না। চিকিৎসাও পাইল না।’
মুঠোফোনে কথাগুলো বলছিলেন আনিসুর রহমান। গত শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া কিশোর আশিকুর রহমান ওরফে হৃদয়ের বড় ভাই তিনি। আনিসুর জানালেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল আশিকুর।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পশ্চিম জৌতা গ্রামের অটোরিকশাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে আশিকুর। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া আশিকুর বাড়িতেও থাকত, ঢাকায় বড় ভাই আনিসুর রহমানের বাসায়ও থাকত। চার ভাইবোনের মধ্যে আশিকুর সবার ছোট।
মৃত্যুর পর আলোচনায় এসেছে আশিকুর। গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জৌতা অলিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে আশিকুরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজা শেষে অচেতন হয়ে পড়েন বাবা আনসার হাওলাদার। সে ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আশিকুরের স্বজনদের অভিযোগ, আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় সহায়তা চেয়েও পাননি।
আনিসুর রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা অটোরিকশাচালক। সেই অটোরিকশা ও একটি গরু বিক্রি করে ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন। ভাই মারা যাওয়ার পর প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে আসছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাবাকে একটি রিকশাও কিনে দেওয়া হয়েছে।
৫ এপ্রিল প্রথম আলোতে ‘ছাত্র আন্দোলনে আহত আশিকুর মাথায় গুলি নিয়েই মারা গেল, অর্থসহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রশাসনের নজরে আসে।
গত রোববার পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন যান আশিকুরদের বাড়িতে। তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশিকুরের বাবা আনসার হাওলাদারকে একটি রিকশা কিনে দেন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন যান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশিকুরের বাবা আনসার হাওলাদারকে একটি রিকশা দেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?