Samakal:
2025-05-01@05:03:43 GMT

যক্ষ্মা: যা জানতে হবে

Published: 7th, April 2025 GMT

যক্ষ্মা: যা জানতে হবে

এক সময় বলা হতো যার হবে যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা। সেই দিন অনেকটা বদলে গেছে। যক্ষ্মার কার্যকরী  চিকিৎসা রয়েছে। তারপরও প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ যক্ষ্মায় মৃত্যুবরণ করছে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১.২৫ মিলিয়ন। যক্ষ্মা দুনিয়াব্যাপী এখনও ভয়ংকর একটি ব্যাধি। বিশেষত দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি একটি বড় সমস্যা। যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগ। এর নাম মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্লোসিস। যদিও আমরা ফুসফুসের যক্ষ্মার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত; কিন্তু এটি আক্রমণ করতে পারে শরীরের প্রায় সব অঙ্গে। বিশেষত লাসিকা গ্রন্থি, কিডনি, অন্ত্র, অস্থি ও মস্তিষ্কে প্রায়ই বাসা বাঁধে জীবাণু। চিকিৎসকদের ভাষায় এটিকে বলা হয় এক্সট্রা পালমোনারি টিউবারক্লোসিস। বর্তমানে ফুসফুসের বাইরে অন্য অঙ্গে যক্ষ্মার আক্রমণ প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। আরেকটি ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সহনশীল প্রমাণিত হচ্ছে। সাধারণত যক্ষ্মার বিরুদ্ধে ছয় মাসের জন্য অনেক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যক্ষ্মার জীবাণু এ ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে। অনেক ওষুধ-সহনশীল এ সব যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা এখন চিকিৎসকদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় মূলত বাতাসের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশে। আমাদের প্রশ্বাসের বাতাসের সঙ্গে এটি প্রবেশ করে ফুসফুসের মাঝে। জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা সবল থাকলে এটি প্রবেশ করলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন এই ঘুমন্ত দশায় থাকা জীবাণু জেগে ওঠে। বিভিন্ন অঙ্গে আক্রমণ করে বসে। ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার, অপুষ্টিসহ বিভিন্ন রোগে দেহের রোগ প্রতিরোধ দেয়ালে ফাটল ধরে। তখনই ঘটে বিপত্তি। অঙ্গভেদে যক্ষ্মার লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। রাত্রিকালীন ঘুষঘুষে জ্বর ও ঘাম, ওজন হ্রাস, অরুচি এগুলো সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা দেখা দিলে কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এগুলো হতে পারে। হাড়ে যক্ষ্মা হলে ব্যথা হতে পারে আক্রান্ত জায়গায়। কিডনিতে যক্ষ্মা হলে পেশাবের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। অন্ত্রে যক্ষ্মা হলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে সে অংশটি ফুলে উঠবে। যেমন গলার গ্লান্ড আক্রান্ত হলে গলা ফুলবে, মেরুদণ্ডে আক্রান্ত হলে পুরো মেরুদণ্ড ফুলে উঠবে। যক্ষ্মা প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় সপ্তাহের মাঝে যক্ষ্মার টিকা দিতে হয়। যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য এটি একটি কার্যকর টিকা। হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, না হলে অন্তত হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা সবার থেকে দূরে গিয়ে কাশি দেওয়া। কারও যক্ষ্মা রোগ নির্ণিত হলে তাকে আলাদা করা এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এটি প্রতিরোধের জন্য খুবই সহায়ক। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য 
গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।v 

[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, বরিশাল]
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসক মাত্র ৩ জন, অন্তঃসত্ত্বাদের সেবায় নার্স, দাঁতের চিকিৎসায় টেকনোলজিস্ট

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের কিশোরী ইয়াসমিন আখতার (১৫) পেটে ব্যথা নিয়ে রোববার দুপুরে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারীরা রোগীর শয্যায় তাঁকে শুইয়ে রাখেন। কিছু সময় পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এভাবে প্রতিদিন তিনজন চিকিৎসক, চার থেকে পাঁচজন স্বাস্থ্য সহকারী ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে। এ উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস।

হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া গেল চিকিৎসক আলমগীর হোসেনকে। তিনি হাসপাতালের ১০ নম্বর কক্ষে বসেন। এ কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা গেল বেশি। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীর চাপ একটু বেশি। এত সব রোগী সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া বাহুবল দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা। হঠাৎ ঝগড়া করে একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে লোকজন চলে আসেন। যতটুকু সম্ভব এর মধ্যেই রোগীদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’ তিনি জানান, জরুরি বিভাগের দায়িত্ব, বহির্বিভাগের দায়িত্ব, আবাসিক বিভাগের দায়িত্বসহ মোট ৫টি পদে তাঁকে একাই কাজ করতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেষণে তাঁকে এখানে পাঠানো হয়েছে।

শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় রোববার অন্যান্য দিনের তুলনায় বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ অনেক বেশি ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের দীর্ঘ সারি। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা রোগের ধরন অনুযায়ী রোগীদের বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
জরুরি বিভাগ সামলাচ্ছেন একজন চিকিৎসক এবং দুই থেকে তিনজন স্বাস্থ্য সহকারী। তাঁরা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসকের সংকটের কারণে কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ১৭টি পদের মধ্যে ১৪টিই শূন্য। শিশুদের জন্য জুনিয়র কনসালট্যান্ট আছেন মাত্র একজন। গাইনি বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় একজন জ্যেষ্ঠ নার্স দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে চিকিৎসা নিয়ে কথা হলে তাঁদের অধিকাংশই বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টির কথা জানালেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিকিৎসক মাত্র ৩ জন, অন্তঃসত্ত্বাদের সেবায় নার্স, দাঁতের চিকিৎসায় টেকনোলজিস্ট