Samakal:
2025-09-18@03:33:05 GMT

অবাধে চলছে অবৈধ যান

Published: 8th, April 2025 GMT

অবাধে চলছে অবৈধ যান

মহাসড়ক দখল করে আছে ২৫-৩০টি অবৈধ স্ট্যান্ড। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, হ্যালোবাইক, নছিমন-করিমনের মতো শত শত অবৈধ যান। হাইওয়ে পুলিশের সামনেই অবাধে চলছে এসব। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। 
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের চিত্র এটি। এ মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের ছড়াছড়ি হলেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করেই অবৈধ যানগুলো চলাচল করছে। কেননা আইনে নিষিদ্ধ হলেও মহাসড়কে প্রতিদিন বাস-ট্রাক-কোচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে এসব যান। হাইওয়ে পুলিশ যেন তা দেখেও দেখছে না। ফলে মানিকগঞ্জ থেকে আরিচা পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার মহাসড়কে ও বরংগাইল-নাগরপুর সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
বরংগাইল হাইওয়ে থানার ওসি জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ মহাসড়কে ৩৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ১৮ জন। আহতের সংখ্যা ৪২।
বরংগাইল হাইওয়ে থানার ওসি জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে কতকগুলো অবৈধ যানবাহন চলাচল করে সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। মানিকগঞ্জ হালকা যানবাহন মালিক সমিতির সদস্য সেলিম শেখ বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অটোরিকশা, হ্যালোবাইকসহ প্রায় ৪০০ অবৈধ যানবাহন চলাচল করে।
অটোরিকশার চালক ছালাম শেখ ও হ্যালোবাইকের চালক জালাল উদ্দিন বলেন, বরংগাইলে হাইওয়ে থানার কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে তাদের এসব অবৈধ যানবাহন চালাতে হয়।
ট্রাকচালক আফজাল হোসেন, বিল্লাল শেখ ও আতিয়ার হোসেন বলেন, গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে পুলিশ তাদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে হয়রানি করে। পুলিশের কথা অনুযায়ী তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ না করলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলা করে। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ যানবাহনের ছড়াছড়ি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ না দেখার ভান করছে।
দিগন্ত বাসের চালক ময়নাল শেখ বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা, হ্যালোবাইক চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এগুলোর চালক দ্রুতগামী বাসকে সাইড দিতে চায় না। মহাসড়ক দখল করেই অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন। এ কারণে প্রায়ই বড় গাড়ির সঙ্গে এসব অবৈধ যানবাহনের সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে থানার পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের চলাচল দিন দিন বাড়ছে। 
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ যানবাহনের চালকরা অবৈধভাবেই মহাসড়কে স্ট্যান্ড বানিয়ে দখল করে রেখেছেন। এখান থেকেই যাত্রী তুলে অবাধে চলাচল করছেন। তবু দেখার কেউ নেই। 
আরিচা, উথলী, বরংগাইল এলাকায় সিরিয়ালের নামে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা করে অটোরিকশা, হ্যালোবাইক থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এসব যানের চালকরা। 
বরংগাইল-নাগরপুর সড়কে চলাচলরত অটোরিকশা থেকে চাঁদা উত্তোলনকারী সেলিম শেখ বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো সংগঠনের নামে চাঁদা নেওয়া হয় না। তবে সিরিয়ালের নামে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
বরংগাইল হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের কেউ ম্যানেজ করে মহাসড়কে অবৈধ যান চালান না। তারা অভিযান চালিয়ে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ৮৭৬টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। তারা কোনো যানবাহনের চালককে হয়রানি করেন না বলে দাবি করেন তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট অব ধ য ন দ র ঘটন হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ