ক্যারিবীয় দেশ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে একটি নৈশ ক্লাবের ছাদ ধসে অন্তত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী সান্তো ডোমিঙ্গোয় এ ঘটনা ঘটে। ছাদধসের ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে।

ওই নৈশ ক্লাবটির নাম জেট সেট। সরেজমিনে দেখা যায়, নৈশ ক্লাবটির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মানুষের আর্তচিৎকার ভেসে আসছে। তাঁদের উদ্ধারে নেমেছেন প্রায় ৪০০ উদ্ধারকারী। কয়েক ডজন অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেকেই পরিচিতজনের খোঁজে অপেক্ষা করছেন।

তাঁদের একজন দেশটির জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রুবি পেরেজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নৈশ ক্লাবের মঞ্চে ছিলেন রুবি পেরেজ। হঠাৎ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর ছাদ ধসে পড়ে। ৬৯ বছর বয়সী পেরেজের ব্যবস্থাপক এনরিক পাউলিনো সাংবাদিকদের বলেন, ‘হঠাৎ করেই এটা হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে।’

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার সময় নৈশ ক্লাবটিতে ৫০০ থেকে ১ হাজারের মতো মানুষ ছিলেন। ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদেরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দেশটির মন্টে ক্রিস্টি মিউনিসিপ্যালটির গভর্নর নেলসি ক্রজ রয়েছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের (সিওই) পরিচালক হুয়ান ম্যানুয়েল মেন্ডিজ সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত ব্যক্তির সংখ্যা শতাধিক হতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা থাকবে, ততক্ষণ কাজ করে যাবেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ