কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ বিদেশি হস্তক্ষেপ!
Published: 9th, April 2025 GMT
কানাডায় আসন্ন ৪৫তম নির্বাচন ২৮ এপ্রিল। নির্বাচন নিয়ে কানাডিয়ানদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। দেশটির নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের ইন্টেলিজেন্স টাস্কফোর্স গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তারা বলছে, ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি’র পক্ষে চাইনিজ একটি গ্রুপ নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচন কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাইনিজ সোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘উইচ্যাট’ এর মাধ্যমে চাইনিজরা প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে তাঁর আসনে তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য নানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। উইচ্যাট এর প্রভাব বিস্তারকারী সোসাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট হলো ‘ইঊলি ইউমিয়া’।
‘ইউলি ইউমিয়া’ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রচার: কানাডিয়ান গোয়েন্দাদের নজরদারিতে বলা হয়েছে ‘ইউলি ইউমিয়া’ নামের একটি পপুলার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে এই ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে। যেটি কানাডায় বসবাসরত চাইনিজদের মার্ক কার্নির প্রচারণার পক্ষে কাজ করছে। গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করে দেখেছে, ইউলি ইউমিয়া নামের অ্যাকাউন্টটি আসলে চাইনিজ কম্যুনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল পলিটিক্যল অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিশনের একটি অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি কানাডায় চীনা বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে লিবারেল পার্টি এবং মার্ক কার্নির পক্ষে তারা ভোট দেয়।
ইন্টেলিজেন্স টাস্কফোর্স জানিয়েছে, এই বিষয়টি তাঁরা মার্ক কার্নিকে অবহিত করেছেন। তাঁরা উইচ্যাটের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। উইচ্যাট আশ্বস্ত করেছে এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত করতে চায়, কোনোভাবেই যেন বাইরের কোনো পক্ষ কানাডার ফেডারেল নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভকে ভারতের সমর্থন!
অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির পিয়েরে পয়লিয়েভ যখন দলটির নেতা নির্বাচিত হন, অর্থাৎ পার্টির নির্বাচনে লিডারশিপ দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন তখন ভারত তাঁর পক্ষে জনমত ও তহবিল সংগ্রহসহ নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। যদিও পিয়েরে পয়লিয়েভ সরাসরি সেটি অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি তাঁর যোগ্যতায় কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের সমর্থনে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু গোয়েন্দাদের তথ্য ছিল- তাঁর পক্ষে ইন্ডিয়ান নানা গ্রুপ, ইন্ডিয়ান সরকারি সংস্থা কানাডার ভেতরে তাঁর পক্ষে তহবিল সংগ্রহ ও জনমত সংগ্রহ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ইন্টেলিজেন্স টাস্কফোর্স আরও বলছে- এই বিষয়গুলো তারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন, যাতে কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারণার কোনো প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ না হয়। কানাডার বাইরের কেউ নির্বাচনকে যাতে প্রভাবিত করতে না পারে।
জনমত জরিপে এগিয়ে লিবারেল পার্টি: এদিকে টরোন্টো স্টারের সিগন্যালের ব্যবস্থাপনায় কানাডার নির্বাচনের সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ‘যদি আজ ভোট হয়’ তাহলে মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টির ৪২.
আসন সংখ্যায় মার্ক কার্নি এখনও এগিয়ে রয়েছে। জনমত জরিপে তাঁর দলের ১৭৭টি আসনে জয়ের আভাস ডাওয়া যাচ্ছে যেখানে ৩৪৩টি আসনের মধ্যে মধ্যে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হলে ১৭২টি আসন দরকার। জনমত জরিপে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে ১৩২টি আসন মিলতে পারে। ফলে আসন ও সমর্থনের দিক থেকে লিবারেল পার্টি অনেক এগিয়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, কানাডার নির্বাচনী প্রচারণায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ায় কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন বেড়ে চলেছে। কেননা কানাডার বর্তমান অর্থনীতির পরিস্থিতিতে কানাডা ও আমেরিকার মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে কানাডিয়ানরা ট্রাম্পকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। যে কারণে যে পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলছেন কানাডিয়ানরা তাঁদের বেশি সমর্থন করছেন।
সবকিছু মিলে কানাডিয়ানরা বর্তমানে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে কানাডার অর্থনীতির মার্কেটে স্টক মার্কেট নিম্নমুখী হয়েছে এবং হচ্ছে। কানাডার অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব শিগগির কানাডায় অর্থনৈতিক মন্দা আসতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইন ট ল জ ন স চ ইন জ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্ট বেশির ভাগ মার্কিন, অর্থনীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে অসন্তোষ বাড়ছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত আছে। তবে তিনি যেভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করছেন ও অভিবাসন ইস্যুতে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, তাতে তাঁর প্রতি অসন্তোষ ক্রমাগত বাড়ছে।
রয়টার্স/ইপসোসের করা সবশেষ জনমত জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তিন দিনের জনমত জরিপটি গত রোববার শেষ হয়। ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৫৩ শতাংশ। এর এক সপ্তাহ আগে রয়টার্স/ইপসোস জরিপে একই ফল পাওয়া গিয়েছিল। অর্থাৎ তখনো ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তোষ এবং ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা অসন্তোষ জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্প যে কৌশলে অর্থনীতি পরিচালনা করছেন, তার প্রতি ৩৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে। এ হার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্তমান মেয়াদ ও ২০১৭-২০–এর প্রথম মেয়াদের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত সপ্তাহের জনমত জরিপের তুলনায় এ সমর্থন ১ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের অর্থনীতি পরিচালনার কৌশলের প্রতি অসন্তোষের হার ৫ শতাংশ বেড়ে ৫৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
নতুন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ শতাংশ বলেছেন, অর্থনীতি তাঁদের প্রধান উদ্বেগের জায়গা। আগের জরিপের তুলনায় এ হারের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মন্দার আশঙ্কা বেড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ট্রাম্প শুল্কহার এত বেশি বাড়িয়েছেন যে কিছু দেশ, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
মূল্যস্ফীতি এখনো ট্রাম্প প্রশাসনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে আছে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হন। তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেন সরকারের সময়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতির গতি খুব একটা কমেনি।
সবশেষ রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক জীবনযাত্রার খরচ কমাতে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর সন্তোষ জানিয়েছেন ৩২ শতাংশ।
জরিপ অনুযায়ী, যেসব ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন বেশি, সেসবের একটি অভিবাসন। এই খাতে ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। আগের সপ্তাহের জরিপেও সমর্থনের হার একই ছিল। তবে এখানেও অসন্তোষ বেড়েছে। জরিপে দেখা গেছে, এ ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্টির হার ২ শতাংশ বেড়ে ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কঠোর অভিবাসন নীতি চালু করেন। তিনি দক্ষিণ সীমান্তে সেনা পাঠান ও যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত লাখ লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার অঙ্গীকার করেন।
ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মীরা ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকার পরও বেশ কয়েকজন শিশুকে তাদের মা-বাবার সঙ্গে বিতাড়িত করার ঘটনায় সমালোচনা হয়েছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, বিতাড়িত শিশুদের একজন একটি বিরল ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত।
জরিপে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক জীবনযাত্রার খরচ কমাতে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর সন্তোষ জানিয়েছেন ৩২ শতাংশ।রয়টার্স/ইপসোস জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ১১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, অভিবাসন এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। জানুয়ারির শেষ দিকে হওয়া জরিপে এ হার ১৪ শতাংশ ছিল।
নতুন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ শতাংশ বলেছে, অর্থনীতি তাঁদের প্রধান উদ্বেগের জায়গা। আগের জরিপের তুলনায় এ হারের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
আরও পড়ুনক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে কমে ৪৩ শতাংশে০৩ এপ্রিল ২০২৫জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৬ শতাংশ মনে করে, গণতন্ত্রের ওপর হুমকি ও রাজনৈতিক চরমপন্থার মতো বিষয়গুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা। গত জানুয়ারিতে ২০ শতাংশ উত্তরদাতা এমন মত দিয়েছিলেন।
সবশেষ এ জরিপের জন্য মোট ১ হাজার ২৯ জন মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মতামত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ১০০ দিন: বিশ্বজুড়ে টালমাটাল অবস্থা ২৯ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনপ্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশির ভাগ মার্কিনের মনোভাব নেতিবাচক: সিএনএনের জরিপ০৩ মার্চ ২০২৫