যশোরের চৌগাছা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইমন হাসানকে মারধরের অভিযোগে দুই ছাত্রদল নেতার পদ স্থগিত করা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক রাজিবুল হকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অভিযুক্ত নেতারা হলেন চৌগাছা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসীম উদ্দীন ও চৌগাছা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোবারক হোসেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জসীম উদ্দীন ও মোবারক হোসেনের সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান।

ছাত্রদলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় চৌগাছা সরকারি কলেজে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি ছিল। উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইমন হাসানের নেতৃত্বে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এতে জসীম উদ্দীন ও মোবারক হোসেনকে ডাকা হয়নি। এ কারণে তাঁরা ক্ষুব্ধ হন। পরে দুপুরে ইমন হাসান স্থানীয় একটি পাম্পে গিয়ে মোটরসাইকেলে জ্বালানি নেওয়ার সময় তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ইমনকে চড়থাপ্পড় মারা হয়। এ ঘটনায় বিকেলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা উভয় পক্ষকে নিয়ে মীমাংসায় বসতে চাইলে সেখানে ইমন হাজির হননি।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসীমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে মোবারক বলেন, ‘আমার কলেজ ইউনিটের কর্মসূচি। সব দায়দায়িত্ব আমার। অথচ আমাকে কিছু না জানিয়ে উপজেলা ইউনিটের সদস্যসচিব ইমন সেখানে গিয়ে নিজের মতো কর্মসূচি পালন করেন। বিষয়টি আমি জসীম ভাইকে জানাই। পরে ইমনের কাছে আমরা কৈফিয়ত চাইতে গেলে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জসীম ভাই ইমনকে চড়থাপ্পড় দেন। আমরা বিষয়টি ছাত্রদলের জেলা নেতাদের জানিয়েছি। তাঁরা তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স উপজ ল ইমন হ

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা