ম্যারাডোনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়াটাই ভুল হয়েছিল, বললেন চিকিৎসক
Published: 9th, April 2025 GMT
বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে বিচার চলছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত সাতজন চিকিৎসক এই মামলায় অভিযুক্ত। ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। গতকাল শুনানিতে এক চিকিৎসক নিজের সাক্ষ্যে বলেছেন, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর ম্যারাডোনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়াটা ভুল হয়েছে।
মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সপ্তাহ দু-এক পর ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মারা যান ম্যারাডোনা। বুয়েনস এইরেসে এক অভিজাত এলাকায় ভাড়া করা বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ’৮৬ বিশ্বকাপের কিংবদন্তির। সে বাসাকে ‘হোম হসপিটাল’ বানিয়ে ম্যারাডোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ম্যারাডোনার দুই কন্যা দালমা ও জিয়ানিন্নার পক্ষের আইনজীবী ফের্নান্দো বার্লান্দো এর আগে শুনানিতে দাবি করেন, সেই বাসা কোনো রোগীর থাকার জন্য উপযোগী ছিল না, ‘বাসাটা ছিল শূকরের খোঁয়াড়ের মতো, এতটা নোংরা খুব কমই দেখা যায়।’
১৯৮৬ বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ডিয়েগো ম্যারাডোনা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কালিদাসের হাত ধরে যে জামুর্কীর সন্দেশের যাত্রা, তার জিআই স্বীকৃতিতে খুশি সবাই
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে করেছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী গ্রামের প্রয়াত কালিদাস চন্দ্র সাহা। এ জন্য তাঁর বাবা মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রয়াত মদনমোহন সাহা তাঁকে সংসার থেকে আলাদা করে দেন। এরপর মিষ্টির দোকানের আশপাশে বসে থাকতে থাকতে একসময় তিনি সন্দেশ বানাতে শুরু করেন। সেটা ১৯৪০ সালের কথা।
একসময় কালিদাসের বানানো এই সন্দেশ জামুর্কীর সন্দেশ হিসেবে লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সন্দেশ এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হকের হাতে জামুর্কীর সন্দেশের জিআই নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জামুর্কীতে গিয়ে দেখা গেল, ‘কালিদাস মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামের চৌচালা টিনের ঘর। পুরোনো দোকান। বাড়তি কোনো চাকচিক্য নেই। সাদামাটা কাচঘেরা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সন্দেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা বাড়ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কালিদাস ১৯৮২ সালে মারা যান। তারপর তাঁর বড় ছেলে সমর চন্দ্র সাহা ব্যবসার হাল ধরেন। আরেক ছেলে গৌতম সাহা লন্ডনপ্রবাসী।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সদরের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে বিরতি দিয়ে সন্দেশ কিনতে ওই দোকানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আগেও এই দোকানের সন্দেশ খেয়েছি। আজও নিচ্ছি। এর গুণগত মান সব সময় ভালো।’
জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে স্থানীয় লোকজনও খুশি। জামুর্কী গ্রামের ফিরোজ আলম মোক্তার বলেন, এই সন্দেশের স্বীকৃতি আরও আগেই পাওয়া উচিত ছিল। এই সন্দেশের মান যাতে বজায় থাকে, এ জন্য মালিকদের ইচ্ছা থাকতে হবে।
বর্তমান মালিক সমর চন্দ্র সাহাকে পাওয়া গেল জামুর্কী কাঁচাবাজারে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। বাজারের মাতৃভান্ডারের মালিক প্রকাশ বাকালী বলেন, ‘বাবার মুখে যেমন শুনেছি, সন্দেশ এখনো তেমনই আছে। এটা আমাদের গর্ব। আমার বুক ভরে গেছে।’
সমর চন্দ্র সাহা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর ছাত্রাবস্থায় তিনি দোকানে বসতে শুরু করেন। সেই থেকে এখনো আছেন। সন্দেশ খেয়ে মানুষ প্রশংসা করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামুর্কী বাসস্ট্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে এসে দোকানটিতে এসেছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এসেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝেমধ্যে আসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক মাস আগেও এসেছিলেন। ২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন করে। তাঁর কথা, ‘ট্যাকাপয়সা কিছু না। এই স্বীকৃতি বিশাল ব্যাপার। আমরা মান ভালো করি। কাস্টমাররা আমাদের পছন্দ করেন। সন্দেশ কিনতে এসে দোকানে বসে গল্প করেন। আমার খুবই ভালো লাগে। খুশির এই সময় আমার বাবা-দাদাকে খুব মনে পড়ছে। আমি তাঁদের স্মরণ করি।’
দোকান দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রেমা সাহা বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে দোকানে আছি। কাস্টমারকে আমরা আপন মনে কইরা সেবাটা দেই। আমরা জিনিস ভালা বানাই। এ জন্য সরকারও স্বীকৃতি দিছে।’
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্দেশের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ স্বীকৃতি মির্জাপুরবাসীর।
দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সন্দেশ বিক্রি হয়। চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের সন্দেশের বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। দুধ থেকে ছানা তৈরির পর এলাচি, চিনি অথবা গুড় দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে সন্দেশ বানানো হয়। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় চুলা থেকে একটি করে বড় কড়াই নামানো হয়। একটি কড়াই থেকে প্রায় ৩০ কেজি সন্দেশ বানানো যায়। দোকানটিতে সন্দেশ ছাড়াও চমচম, রসগোল্লা, রসমালাই, দই ও ঘি বিক্রি করা হয়।