অসংক্রামক রোগীদের জন্য সরকার অনুদান দিলেও নারায়ণগঞ্জে সার্ভার জটিলতায় এর আবেদন করতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সমাজসেবা অফিসে অনেক সময় আবেদন না করেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।

জেলা সমাজসেবা অফিস স্বীকার করেছে, অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরুর পর থেকে তাদের আবেদনের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। সমস্যা সমাধানে সমাজসেবার সার্ভার সিস্টেম উন্নত করার দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি। 

নগরীর গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা শামীমুজ্জামান সেন্টু। তাঁর ১৮ বছর বয়সী মেয়ে নীর্জনা কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেন্টু দিনমজুরি করেন। তাঁর পক্ষে মেয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই সমাজসেবা অফিসে অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় কৃষি ব্যাংকে অনুদানের টাকা তুলতে এসে আবেদনের সময় ভোগান্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন তিনি– ‘পরপর তিন দিন নগরীর কালির বাজারে সিটি ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে আবেদনের চেষ্টা করি। কিন্তু এক দেড় ঘণ্টা করে প্রতিদিন বসে থেকেও সার্ভার পাইনি। চতুর্থ দিন ভাবলাম, যতক্ষণ বসে থাকতে হয় বসে থেকে আবেদন করব। প্রায় তিন ঘণ্টা বসে থাকার পরে সার্ভার আসল। আরও প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আবেদন করতে পারলাম।’

সেন্টু শেষ পর্যন্ত আবেদন করতে পারলেও এত ভোগান্তিতে বাবার জন্য আবেদন না করেই ক্ষান্ত হয়েছেন নগরীর দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা দৃষ্টি আক্তার। তাঁর বাবা স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। দৃষ্টি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে তিনিও তিন দিন আবেদনের চেষ্টা করে হাল ছেড়েছেন।   

নগরীর কালির বাজারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিটি ডিজিটাল সেন্টারের কম্পিউটার অপারেটর হাদিউজ্জামান গালিব সরকারি এসব আবেদনের কাজগুলো করে থাকেন। তিনি জানান, সমাজসেবার এই আবেদনটি যে সাইটে করা হয় শুরু থেকেই সেটির সার্ভার সমস্যা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সার্ভার ওপেন হয় না। ওপেন হলেও তথ্য ইনপুট হয় না। আবার কখনও তথ্য ইনপুট হলেও দেখা যায় ফরম চূড়ান্তভাবে সাবমিট করা যাচ্ছে না। ডকুমেন্ট এটাচড হয় না। দেখা যায় একটা ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেড় দুই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। মানুষ অনেক সময় তাদের ওপর রেগে যায়। হতাশ হয়ে আবেদন না করেই চলে যায়।  

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জহিরুল ইসলাম জানান, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভার সিরোসিসসহ অসংক্রামক রোগগুলো বেড়েই চলেছে। যদিও তাদের এখানে কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে বাড়ছে। কোনো দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করা দুরূহ। তাই সরকারি অনুদান এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে সার্ভার জটিলতা দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন। 

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জেলা শাখার সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘পুরো বিশ্বটা ইন্টারনেটের ওপরে চলছে। কিন্তু আমরা পুরোপুরি এর সুফল ভোগ করতে পারছি না। সার্ভার জটিলতায় জটিল রোগের অনুদান, প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধনসহ নানা বিষয়ে মানুষকে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের উচিত সার্ভার জটিলতাটি কোথায় তা দ্রুত চিহ্নিত করে সেবা উন্নত করার ব্যবস্থা করা, মানুষের হয়রানি নিরসন করা।  

এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সর্দার সার্ভার জটিলতার কারণে মানুষের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক প্যারালাইসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া– এই ছয়টি জটিল রোগে আক্রান্ত ৪২৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতি তিন মাসে তিনি এখানে অনুদানের জন্য ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে অনুদান নেওয়ার জন্য আবেদন পড়েছে ৫৩৯টি।

তিনি বলেন, যখন হাতে হাতে আবেদন নেওয়া হতো, তখন আবেদনের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি হতো। কখনও তা তিন মাসেই সাতশ থেকে এক হাজার হয়ে যেত। কিন্তু এখন আবেদন সংখ্যা কমে গেছে। সার্ভার জটিলতা আবেদন কমে যাওয়ার একটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনুদানের বিষয়টি অনলাইনে আসায় দালালদের মাধ্যমে ভুয়া আবেদন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, অনুদান থেকে কমিশন নেওয়ার মতো দুর্নীতিগুলো কমেছে। সার্ভার জটিলতা নিরসনে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অন দ ন র র জন য সরক র নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ