সার্ভার জটিলতায় রোগীদের আবেদনে ভোগান্তি
Published: 10th, April 2025 GMT
অসংক্রামক রোগীদের জন্য সরকার অনুদান দিলেও নারায়ণগঞ্জে সার্ভার জটিলতায় এর আবেদন করতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সমাজসেবা অফিসে অনেক সময় আবেদন না করেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।
জেলা সমাজসেবা অফিস স্বীকার করেছে, অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরুর পর থেকে তাদের আবেদনের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। সমস্যা সমাধানে সমাজসেবার সার্ভার সিস্টেম উন্নত করার দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি।
নগরীর গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা শামীমুজ্জামান সেন্টু। তাঁর ১৮ বছর বয়সী মেয়ে নীর্জনা কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেন্টু দিনমজুরি করেন। তাঁর পক্ষে মেয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই সমাজসেবা অফিসে অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় কৃষি ব্যাংকে অনুদানের টাকা তুলতে এসে আবেদনের সময় ভোগান্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন তিনি– ‘পরপর তিন দিন নগরীর কালির বাজারে সিটি ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে আবেদনের চেষ্টা করি। কিন্তু এক দেড় ঘণ্টা করে প্রতিদিন বসে থেকেও সার্ভার পাইনি। চতুর্থ দিন ভাবলাম, যতক্ষণ বসে থাকতে হয় বসে থেকে আবেদন করব। প্রায় তিন ঘণ্টা বসে থাকার পরে সার্ভার আসল। আরও প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আবেদন করতে পারলাম।’
সেন্টু শেষ পর্যন্ত আবেদন করতে পারলেও এত ভোগান্তিতে বাবার জন্য আবেদন না করেই ক্ষান্ত হয়েছেন নগরীর দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা দৃষ্টি আক্তার। তাঁর বাবা স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। দৃষ্টি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে তিনিও তিন দিন আবেদনের চেষ্টা করে হাল ছেড়েছেন।
নগরীর কালির বাজারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিটি ডিজিটাল সেন্টারের কম্পিউটার অপারেটর হাদিউজ্জামান গালিব সরকারি এসব আবেদনের কাজগুলো করে থাকেন। তিনি জানান, সমাজসেবার এই আবেদনটি যে সাইটে করা হয় শুরু থেকেই সেটির সার্ভার সমস্যা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সার্ভার ওপেন হয় না। ওপেন হলেও তথ্য ইনপুট হয় না। আবার কখনও তথ্য ইনপুট হলেও দেখা যায় ফরম চূড়ান্তভাবে সাবমিট করা যাচ্ছে না। ডকুমেন্ট এটাচড হয় না। দেখা যায় একটা ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেড় দুই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। মানুষ অনেক সময় তাদের ওপর রেগে যায়। হতাশ হয়ে আবেদন না করেই চলে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জহিরুল ইসলাম জানান, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভার সিরোসিসসহ অসংক্রামক রোগগুলো বেড়েই চলেছে। যদিও তাদের এখানে কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে বাড়ছে। কোনো দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করা দুরূহ। তাই সরকারি অনুদান এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে সার্ভার জটিলতা দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জেলা শাখার সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘পুরো বিশ্বটা ইন্টারনেটের ওপরে চলছে। কিন্তু আমরা পুরোপুরি এর সুফল ভোগ করতে পারছি না। সার্ভার জটিলতায় জটিল রোগের অনুদান, প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধনসহ নানা বিষয়ে মানুষকে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের উচিত সার্ভার জটিলতাটি কোথায় তা দ্রুত চিহ্নিত করে সেবা উন্নত করার ব্যবস্থা করা, মানুষের হয়রানি নিরসন করা।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সর্দার সার্ভার জটিলতার কারণে মানুষের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক প্যারালাইসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া– এই ছয়টি জটিল রোগে আক্রান্ত ৪২৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতি তিন মাসে তিনি এখানে অনুদানের জন্য ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে অনুদান নেওয়ার জন্য আবেদন পড়েছে ৫৩৯টি।
তিনি বলেন, যখন হাতে হাতে আবেদন নেওয়া হতো, তখন আবেদনের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি হতো। কখনও তা তিন মাসেই সাতশ থেকে এক হাজার হয়ে যেত। কিন্তু এখন আবেদন সংখ্যা কমে গেছে। সার্ভার জটিলতা আবেদন কমে যাওয়ার একটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনুদানের বিষয়টি অনলাইনে আসায় দালালদের মাধ্যমে ভুয়া আবেদন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, অনুদান থেকে কমিশন নেওয়ার মতো দুর্নীতিগুলো কমেছে। সার্ভার জটিলতা নিরসনে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অন দ ন র র জন য সরক র নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে।
পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।