সংরক্ষণের অভাবে পচনের শঙ্কায় শত শত বস্তা আলু
Published: 10th, April 2025 GMT
বাম্পার ফলন হলেও আলু রাখার জায়গা নেই। মাঠপর্যায়ের চাষিরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে হিমাগারে রাখতে পারেননি আলু। বস্তায় বাঁশঝাড়ে, আমবাগানে রাখা আলু পচে নষ্ট হচ্ছে। পচা আলুর ভালো অংশ কেটে কেউ কেউ বিক্রি করছেন দুই টাকা কেজি দরে। তুলনামূলক ভালো আলুর কেজি ১২ টাকা। এ অবস্থায় চাষিরা বস্তায় বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, এখন দাম কম। সংরক্ষণ করতে পারলে লাভের মুখ দেখতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় ৩৮টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা ৪ লাখ ৫৭ হাজার টন। কিন্তু ফলন হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৭ টন। প্রভাবশালী চাষি ও ব্যবসায়ীরা রাখতে পারলেও প্রান্তিক চাষিরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি। দাম কম হওয়ায় চাষিরা বস্তায় ভরে আলু রেখেছিলেন বাঁশঝাড় ও আমবাগানের ছায়ায়। ভেবেছিলেন শীতল স্থানে আলু ভালো থাকবে। কিন্তু কিছুদিন যেতেই পচন ধরেছে।
তানোরের কাশিমবাজারের রাকিবুল ইসলাম বলেন, ২০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ১২ হাজার বস্তা আলু হয়েছে। এর মধ্যে হিমাগারে রাখতে পেরেছি দুই হাজার বস্তা। ১০ হাজার বস্তা আলু বাসায় রাখা আছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ বস্তা আলু পচে গেছে। এভাবে প্রতিদিনই পচছে। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ ৮০ হাজার টাকা; দাম পাচ্ছি মাত্র ২৫ হাজার টাকা। ২০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান হবে।
একই উপজেলার কাশিমবাজারের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, হিমাগারে জায়গা পাইনি। সংরক্ষণ করতে না পারায় প্রচুর আলু পচে গেছে। বাজারে ১০-১২ টাকা কেজি। কিন্তু উৎপাদন করতেই খরচ হয়েছে ২০-২২ টাকা। হিমাগারে রাখতে পারলে ১০ লাখ টাকা লাভ হতো। তানোরে আরও তিন-চারটি হিমাগার থাকলে এ দশা হতো না।
চাষি নওশাদ আলী এবার ৭২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আড়াই হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে পেরেছেন। আরও ৯০০ বস্তা আলু বাড়ির বাঁশঝাড়ে রেখে বিক্রি করছিলেন। এর মধ্যে ১৩৪ বস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। আলু চাষি বিপ্লব হোসেন টুটুল বলেন, এবার আলু চাষে বিঘায় লোকসান ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ঋণ করে চাষ করেছি। এখন কীভাবে পরিশোধ করব?
হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, চাষিরা বিপুল পরিমাণ আলু রাখার জন্য চাপ দিলেও বাড়তি আলু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জায়গা নেই। তানোরের এম কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, হিমাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। চাষিরা এসে আলু রাখার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু তারা জায়গা দিতে পারছেন না।
রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান জানান, এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষিরা দাম কম পাচ্ছেন। হিমাগারগুলো ভরা। প্রাকৃতিকভাবে আলু সংরক্ষণে রাজশাহীতে কৃষি বিপণনের ৫৯টি ঘর আছে। এগুলোতে প্রায় ১১ লাখ টন আলু রাখা সম্ভব। কৃষকরা চাইলে সেখানে রাখতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কেউ অনুদানের আবেদন করলে ব্যবস্থা নেব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসুর বিবৃতি: বিএনপি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে
জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রোববার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
ডাকসুর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যা সরাসরি ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।