বাম্পার ফলন হলেও আলু রাখার জায়গা নেই। মাঠপর্যায়ের চাষিরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে হিমাগারে রাখতে পারেননি আলু। বস্তায় বাঁশঝাড়ে, আমবাগানে রাখা আলু পচে নষ্ট হচ্ছে। পচা আলুর ভালো অংশ কেটে কেউ কেউ বিক্রি করছেন দুই টাকা কেজি দরে। তুলনামূলক ভালো আলুর কেজি ১২ টাকা। এ অবস্থায় চাষিরা বস্তায় বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, এখন দাম কম। সংরক্ষণ করতে পারলে লাভের মুখ দেখতেন। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় ৩৮টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা ৪ লাখ ৫৭ হাজার টন। কিন্তু ফলন হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৭ টন। প্রভাবশালী চাষি ও ব্যবসায়ীরা রাখতে পারলেও প্রান্তিক চাষিরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি। দাম কম হওয়ায় চাষিরা বস্তায় ভরে আলু রেখেছিলেন বাঁশঝাড় ও আমবাগানের ছায়ায়। ভেবেছিলেন শীতল স্থানে আলু ভালো থাকবে। কিন্তু কিছুদিন যেতেই পচন ধরেছে।
তানোরের কাশিমবাজারের রাকিবুল ইসলাম বলেন, ২০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ১২ হাজার বস্তা আলু হয়েছে। এর মধ্যে হিমাগারে রাখতে পেরেছি দুই হাজার বস্তা। ১০ হাজার বস্তা আলু বাসায় রাখা আছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ বস্তা আলু পচে গেছে। এভাবে প্রতিদিনই পচছে। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ ৮০ হাজার টাকা; দাম পাচ্ছি মাত্র ২৫ হাজার টাকা। ২০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান হবে।
একই উপজেলার কাশিমবাজারের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, হিমাগারে জায়গা পাইনি। সংরক্ষণ করতে না পারায় প্রচুর আলু পচে গেছে। বাজারে ১০-১২ টাকা কেজি। কিন্তু উৎপাদন করতেই খরচ হয়েছে ২০-২২ টাকা। হিমাগারে রাখতে পারলে ১০ লাখ টাকা লাভ হতো। তানোরে আরও তিন-চারটি হিমাগার থাকলে এ দশা হতো না।
চাষি নওশাদ আলী এবার ৭২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আড়াই হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে পেরেছেন। আরও ৯০০ বস্তা আলু বাড়ির বাঁশঝাড়ে রেখে বিক্রি করছিলেন। এর মধ্যে ১৩৪ বস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। আলু চাষি বিপ্লব হোসেন টুটুল বলেন, এবার আলু চাষে বিঘায় লোকসান ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ঋণ করে চাষ করেছি। এখন কীভাবে পরিশোধ করব?
হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, চাষিরা বিপুল পরিমাণ আলু রাখার জন্য চাপ দিলেও বাড়তি আলু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জায়গা নেই। তানোরের এম কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, হিমাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। চাষিরা এসে আলু রাখার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু তারা জায়গা দিতে পারছেন না।  
রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান জানান, এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষিরা দাম কম পাচ্ছেন। হিমাগারগুলো ভরা। প্রাকৃতিকভাবে আলু সংরক্ষণে রাজশাহীতে কৃষি বিপণনের ৫৯টি ঘর আছে। এগুলোতে প্রায় ১১ লাখ টন আলু রাখা সম্ভব। কৃষকরা চাইলে সেখানে রাখতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কেউ অনুদানের আবেদন করলে ব্যবস্থা নেব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো সরু গাজার শিশুদের হাত

গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু অপুষ্টি ওয়ার্ডের শিশুরা একরকম নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীব্র ক্ষুধার কারণে ক্লান্ত হয়ে এই শিশুরা কাঁদতে পারেন না।

চিকিৎসকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সবচেয়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করানো জায়গাগুলোতে নীরবতা এখন সাধারণ ঘটনা। শিশুদের এই নীরবতা তাদের শরীর কাজ না করার লক্ষণ।

১০ মাস বয়সী মারিয়া সুহাইব রাদওয়ানের মা জেইনা রাদওয়ান বলেন, “সে সবসময় নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে, এভাবে শুয়ে থাকে... ডাক দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায় না।”

জেইনা তার শিশু সন্তানের জন্য দুধ বা পর্যাপ্ত খাবার খুঁজে পাচ্ছেন না এবং বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না। কারণ তিনি নিজেও কম খাচ্ছেন, দিনে একবার খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন।

গত সপ্তাহে, রয়টার্সের সাংবাদিকরা নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে পাঁচ দিন কাটিয়েছেন। এটি গাজার সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্ষুধার্ত শিশুদের চিকিৎসা করতে সক্ষম মাত্র চারটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি। রয়টার্সের সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত থাকাকালেই তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা ৫৩ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল।

ইসরায়েল মার্চ মাসে ত্রাণের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে গাজার খাদ্য মজুদ ফুরিয়ে আসছে। খাদ্য মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জুন এবং জুলাই মাসে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপক দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা দেয় এবং ক্ষীণকায় শিশুদের ছবি বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ৮৯ জন শিশুসহ ১৫৪ জন অপুষ্টিতে মারা গেছে। 

নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, “আমাদের শিশুদের জন্য দুধ দরকার। আমাদের চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার। আমাদের কিছু খাবার দরকার, পুষ্টি বিভাগের জন্য বিশেষ খাবার। হাসপাতালের জন্য আমাদের সবকিছু দরকার।”

তিনি জানান,তার হাসপাতাল এখন অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করছে যাদের আগে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না, যেমন শিশু ওয়াতিন আবু আমুনাহ। প্রায় তিন মাস আগে সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্মের সময় তার ওজনের চেয়ে ১০০ গ্রাম কম এখন তার ওজন।

ফাররা বলেন, “গত তিন মাসে তার ওজন এক গ্রামও বাড়েনি। বরং শিশুটির ওজন কমেছে। পেশী সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পেয়েছে। হাড়ের উপরে কেবল ত্বক রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে শিশুটি তীব্র অপুষ্টির পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এমনকি শিশুটির মুখ: তার গাল থেকে চর্বি টিস্যুও হারিয়ে গেছে।"

শিশুটির মা ইয়াসমিন আবু সুলতান শিশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে জানান, তার বাহু তার মায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো মোটা

তিনি বলেন, “দেখতে পারছেন? এগুলো তার পা... তার বাহুগুলোর দিকে তাকান।”
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ