বরেণ্য জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ভাস্কর। তাঁর শিল্প ও সাহিত্যকর্মে সাহিত্যের স্বকীয় ধারা বিকশিত। মানবিক শুভবোধ, মুক্তির সংগ্রাম, আগ্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বরাবর তাঁর লেখার উপলক্ষ হয়েছে। ১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। দ্য টিন ড্রাম, ক্যাট অ্যান্ড মাউজ, পিলিং দ্য ওনিয়ন প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত রচনা। নোবেল বিজয়ের ২ বছর আগে বিখ্যাত সাহিত্যপত্র প্যারিস রিভিউর মুখোমুখি হন গ্রাস। সেই অমূল্য আলাপচারিতার খানিকটা উপস্থাপিত হলো। ভাষান্তর করেছেন হুমায়ূন শফিক 

lআপনি যখন কোনো কাজের মধ্যে থাকেন, তখন আপনার প্রতিদিনের রুটিন কেমন হয়?
গুন্টার গ্রাস: প্রথম খসড়ার কাজের সময় প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত পাতা লিখি। তৃতীয় খসড়ার সময় প্রতিদিন লিখি মাত্র তিন পাতা। এই সময়ে গতি স্লো হয়ে যায়।
lসকালে, বিকেলে না রাতে– কখন লেখেন?
ll রাতে কখনও আমি লিখি না। রাতে লেখায় আমার বিশ্বাসও নেই। কারণ রাতের বেলা লেখা গড়গড় করে চলে, খুব সহজেই হয়। পরের দিন সকালে যখন পড়ি, দেখি লেখাটি ভালো হয়নি। লেখা শুরুর জন্য আমার চাই দিনের আলো। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে আমি নাশতা করি। এবং সেই সময়ে আমার সঙ্গী হয় গান। সঙ্গে চলে পড়াশোনা। এরপর কাজে বসি। দুপুরের পরে নেই কফি বিরতি। আবার কাজ শুরু করি এবং তা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। 
lবইটি লেখার কাজ শেষ হয়েছে, কী করে বোঝেন?
llযখন কোনো মহাকাব্য ধরনের বই রচনা শুরু করি, তা চালিয়ে যাই ধীরগতিতে। খসড়া শেষ করতে আমার চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। আমার ভেতরটা যখন ফাঁকা হয়ে যায়, তখনই বুঝতে পারি বইয়ের কাজটিও এখন শেষ।
lব্রেখট সব সময়ই তাঁর সাহিত্যকর্মের পুনর্লিখন করতেন। এমনকি বই আকারে প্রকাশ পাওয়ার পরও তিনি সেগুলো সম্পূর্ণ মনে করতেন না।
llআমি তাঁর মতো ওই রকম করতে পারতাম না। আমি আমার জীবনের বিশেষ একটা পর্বে ‘দ্য টিন ড্রাম’ কিংবা ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব এ স্নেইল’ লিখতে পেরেছি। আমার জীবনের ওই পর্বে কীভাবে চিন্তা করতাম, অনুভব করতাম, এরই ছাপ পাওয়া যাবে এই বইগুলোতে। আমি শিওর যদি ‘দ্য টিন ড্রাম’, ‘ডগ ইয়ারস’ বা ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব এ স্নেইল’ পুনর্লিখন করতে যেতাম, তাহলে সেগুলো ধ্বংস করা ছাড়া আমার উপায় থাকত না।
lআপনার লেখার মধ্যে কোনটা ফিকশন আর কোনটা ননফিকশন– এর পার্থক্য কীভাবে করেন?
llএই ‘ফিকশন বনাম ননফিকশন’ ব্যাপারটি ব্যবসা হিসেবে একটা কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাপার। এই রকম শ্রেণিবিন্যাস বই বিক্রেতাদের জন্য জরুরি। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে তা পছন্দ করি না। আমি সব সময় একটি কল্পনা করি যে, বই বিক্রেতাদের কিছু কমিটি মিটিং করছে এটা জানার জন্য যে, কোন বইগুলো ফিকশন আর কোনগুলো ননফিকশন। এটিকে আমি বলি, বই বিক্রেতারা যেটা করেন তাই হচ্ছে আসলে ফিকশন।
lআপনার সাহিত্যকর্মে বিচিত্র বিষয় আপনি একত্র করেন; যেমন– ইতিহাস, গীতিকাব্য .

..
ll... আর ড্রয়িং, কবিতা, সংলাপ, উদ্ধৃতি, ভাষণ, পত্রাবলি! দেখুন, মহাকাব্যিক কোনো কাজ করতে গিয়ে ভাষার সচরাচর যেসব রূপ আছে ও ভাষাতাত্ত্বিক যোগাযোগের যে বিচিত্র গঠন রয়েছে, এর সবক’টার ব্যবহার আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। 
lলেখালেখি কি আনন্দহীন ও বেদনাদায়ক?
llএটা কিছুটা ভাস্কর্য গড়ার মতো। ভাস্কর্য তৈরির সময় তার প্রতিটি পাশেই আপনাকে কাজ করতে হবে। একদিকে একটু বদল আনলে অন্যদিকেও পাল্টাতে হবে। হঠাৎ কোনো একটা বিষয় বদলে দিলে ... পুরো ভাস্কর্যও পাল্টে যাবে! ভাস্কর্যের মধ্যে সংগীত থাকে। এক টুকরা লেখার ক্ষেত্রেও এটি সত্য। প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় খসড়া করতে এমনকি, একটা দীর্ঘ বাক্য লিখতে দিনের পর দিন আমাকে কাজ করতে হতে পারে। আপনি জানেন, আমি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে পছন্দ করি। আমি শুধু কাজই করে যাই। 
l‘দ্য র‍্যাট’, ‘দ্য ফ্লাউন্ডার’, ‘ফ্রম দ্য ডায়েরি অব এ স্নেইল’ কিংবা ‘ডগ ইয়ারস’-এর মতো অনেক বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে পশুরা। এর কি বিশেষ কোনো কারণ আছে?
llসম্ভবত। আমি সব সময় ভাবি যে, আমরা মানব প্রজাতি নিয়ে খুব বেশি কথা বলি। আমাদের পৃথিবী গিজগিজ করছে মানুষে। তেমনই এতে রয়েছে অসংখ্য পশু, পাখি, মাছ ও অগণিত পোকামাকড়। পৃথিবীতে মানুষ আসার আগে থেকেই এরা ছিল এবং মানুষ বিলুপ্ত হওয়ার পরও এরা পৃথিবীতে থেকে যাবে। এদের সঙ্গে আমাদের একটা পার্থক্য আছে– কয়েক লাখ বছর আগে পৃথিবীতে রাজত্ব করত, এমনসব অতিকায় ডাইনোসরের হাড়গোড় জাদুঘরে আমরা পাই। এবং তারা যখন মারা গেল, কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই মারা গেল। কোনোরকম বিষ ছাড়াই। এদের হাড়গুলো সব পরিষ্কার। সেগুলো আমরা দেখতে পারি। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে একই কাজ সম্ভব নয়। আমরা যখন মারা যাই, সেখানে বিষের ছড়াছড়ি। নিঃশ্বাস নিতে গেলেও ভয় লাগে। আমাদের নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে হবে যে, এই পৃথিবীতে শুধু মানুষই বসবাস করে না। অবশ্য বাইবেল আমাদের একটা কুশিক্ষা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মানুষ আধিপত্য বিস্তার করেছে মাছ, পশুপাখিসহ সব প্রাণীর ওপর। আমরা পৃথিবী জয় করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর ফল খুবই বাজে হয়েছে। 
l মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার ধারণা?
ll যতক্ষণ এই পৃথিবীতে মানুষের বসবাস করা দরকার, ততক্ষণ পর্যন্তই আমাদের ভবিষ্যৎ। এক শব্দে এই ব্যাপারে বলা সম্ভব নয়। একটিমাত্র শব্দে এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে চাই না। একটি বই আমি লিখেছি ‘দ্য র‍্যাট’–‘দ্য শি-র‍্যাট’, ‘দ্য র‍্যাটেসা’। এর বেশি কী চান আপনি? আপনার প্রশ্নের দীর্ঘ উত্তরই হচ্ছে এই বই। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ স কর য ক জ করত আম দ র ফ কশন র সময় আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ