আলোয় আলোয় মুক্তির বারতা দেবে ছায়ানট
Published: 11th, April 2025 GMT
দু’দিন পরই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। এখন দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি ও নানা আয়োজনে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। বৈশাখের প্রথম দিনে সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরেই রমনা বটমূলে ছায়ানটের ভোরের রাগ আলাপের মাধ্যমে সূচনা হবে নতুন বছরের। এ দিনটি সামনে রেখে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে চলছে শেষ মুহূর্তের মহড়া। সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন।
এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে একজনের অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হবে। তিনি সন্জীদা খাতুন। ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। গত ২৫ মার্চ অনন্তলোকে পাড়ি দেন দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ও সংগীতজ্ঞ। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ চালু হওয়ার ৫৮ বছর পর এবারই প্রথম তাঁকে ছাড়া বাঙালির প্রাণের এই অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা.
গত ১৭ জানুয়ারি থেকে প্রস্তুতি শুরু ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজনের। সংগীত, যন্ত্রশিল্পীসহ সব মিলিয়ে এবারের আয়োজনে অংশ নেবেন ১৪০ শিল্পী।
বরাবরের মতো এবারও প্রায় একই ধরনের অনুষ্ঠানসূচি থাকছে। ভোর সোয়া ৬টায় রাগ আলাপের মাধ্যমে সূচনা হবে এ আয়োজনের, শেষ হবে ছায়ানটপ্রধানের কথন ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে সারওয়ার আলী বলেন, পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে ছায়ানটের আয়োজনের যে বৈশিষ্ট্য, তার একেবারেই কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। ছায়ানট নববর্ষের প্রথম প্রহরে গানের মধ্য দিয়ে যে একটা আবহ সৃষ্টি করে, যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার একটা উন্মোচন ঘটে। সেই ধারা এ বছরও থাকবে। তাতে কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
এবারের আয়োজন নিয়ে ছায়ানটের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক রশিদ আল হেলাল জানান, শনিবার ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে শেষ মহড়া হবে। পরদিন রোববার বিকেল ৩টায় রমনা বটমূলে করা হবে চূড়ান্ত মহড়া। এবারের বর্ষবরণের আয়োজনে ১৫টি একক গান, সম্মেলক গান আটটি এবং দুটি কবিতা পাঠ করা হবে। ভোর সোয়া ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজন শেষ হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে এবারের আয়োজনের বিস্তারিত আজ বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
এবারের ছায়ানটের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ছায়ানট বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। যত অন্ধকার ও কলুষতা আছে, সব পেরিয়ে যেন আমরা আলোর দিকে যেতে পারি। যত অন্ধকার হোক, যত বাধা আসুক, আমরা থামব না। আমরা আলোর পথে এগিয়ে যাব।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’