পুকুরটির পানি কখনো শুকায়নি, সেচে খনন করে মিলল ২৭ কেজির ‘কষ্টিপাথরের’ মূর্তি
Published: 11th, April 2025 GMT
প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো পুকুর। এটি নিয়ে কথিত আছে অনেক গল্প। গ্রামের কেউ কখনো সেই পুকুর শুকাতে দেখেননি। প্রথমবারের মতো সেচযন্ত্র দিয়ে শুকানো হয় পুকুরটি। তলদেশের মাটি খোঁড়ার সময় সেই পুকুর থেকে গত দুই দিনে বেরিয়ে আসে দুটি মূর্তি। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো কষ্টিপাথরের।
গত সোম ও মঙ্গলবার দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর রাজবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুকুরটির মালিক আনিছার রহমান (৫৭) গ্রামের একজন বাসিন্দা। গ্রামের মধ্যে ৩ দশমিক ৯৪ একর আয়তনের ওই পুকুর ‘বড়দিঘি’ নামে পরিচিত।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত সপ্তাহে সেচে পুকুরটি শুকিয়ে ফেলা হয়। পুকুর সংস্কারের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে খননকাজ শুরু করেন আনিছার রহমান। পরে সোমবার বিকেলে খননযন্ত্রের বাকেটের সঙ্গে পুকুরের মাটির নিচ থেকে উঠে আসে একটি বিষ্ণুমূর্তি। উদ্ধার হওয়া মূর্তিটির উচ্চতা ২৯ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৩ ইঞ্চি এবং ওজন ২৭ কেজি। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করে এবং দিনাজপুর জেলা ট্রেজারিতে জমা দেয়। পরদিন মঙ্গলবার সকালে ওই পুকুরে একটি নারীমূর্তি পান স্থানীয় লোকজন। মূর্তিটির উচ্চতা ২৪ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং ওজন ১৭ কেজি। এটি বর্তমানে নবাবগঞ্জ থানার মালখানায় জমা আছে বলে থানাসূত্রে জানা গেছে।
হরিনাথপুর রাজবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক আনিছার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাপ-দাদাদের কাছে শুনেছি, ১৪০০ সালের দিকে হরিনাথপুর গ্রামে রাজা গণেশ নামের একজন জমিদার ছিলেন। এখানে একটি রাজবাড়ি ছিল। এর চারদিকে ২৫০ থেকে ৩৫০ মিটার দূরত্বে রয়েছে ৪টি বড় পুকুর। এর মধ্যে ১২ বিঘা আয়তনের বড়দিঘি, ৯ বিঘার নলতাহার, ৬ বিঘার তকবিল ও ৬ বিঘা আয়তনের পীরপুকুরিয়া পুকুর। পুকুরগুলো এখনো দৃশ্যমান থাকলেও সেখানে রাজবাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে ওই জায়গার মাটি খুঁড়লে সেখানে পুরোনো চ্যাপটা ইটের গাঁথুনি ও সুরকি পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।’
আরও পড়ুনদিনাজপুরে পুকুর খননের সময় পাওয়া গেল ২৭ কেজি ওজনের বিষ্ণুমূর্তি০৮ এপ্রিল ২০২৫এলাকায় জনশ্রুতি আছে, রাজা গণেশ চণ্ডীদেবীর প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা মুদ্রায় ঘোষণা করেছিলেন। বিষ্ণুভক্ত ব্রাহ্মণপদ্ম লাভের আশায় তিনি চরণ পূজা করতেন। আর এ কারণে রাজা গণেশ তাঁর রাজবাড়ি বা পুকুর (বড়দিঘি) সংলগ্ন কোনো মন্দিরে এসব মূর্তি রেখেছিলেন। ওই পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলো রাজা গণেশের সংগ্রহে ছিল বলে ধারণা স্থানীয় মানুষের।এলাকায় জনশ্রুতি আছে, রাজা গণেশ চণ্ডীদেবীর প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা মুদ্রায় ঘোষণা করেছিলেন। বিষ্ণুভক্ত ব্রাহ্মণপদ্ম লাভের আশায় তিনি চরণ পূজা করতেন। আর এ কারণে রাজা গণেশ তাঁর রাজবাড়ি বা পুকুর (বড়দিঘি) সংলগ্ন কোনো মন্দিরে এসব মূর্তি রেখেছিলেন। ওই পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলো রাজা গণেশের সংগ্রহে ছিল বলে ধারণা স্থানীয় মানুষের।
ওই রাজবাড়ির জমির ক্রয়সূত্রে মালিক হারেছ উদ্দিন মণ্ডলের দান করা এক একর জমিতে ১৯৭৩ সালে হরিনাথপুর হারেছ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। পরে ১৯৯৫ সালে হরিনাথপুর রাজবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানান ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী শাহিনুর আলম।
গ্রামের বাসিন্দা এনামুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রাজবাড়ির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। রাজা গণেশ কবে মারা গেছেন বা তাঁর বংশধরেরা কবে এখান থেকে চলে গেছেন, তা জানা যায়নি। বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছি, ১৯৪০ সালের আগে এ গ্রামে রাজা গণেশের পরিবার ছাড়া কেউ বসবাস করতেন না। ১৯৪০-১৯৪৭ সালের দিকে আমাদের নোয়াখালী জেলার কিছু মানুষ সর্বপ্রথম এখানে জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। তাঁরা পাশের দারিয়া গ্রামের জোয়ারদারদের কাছ থেকে জমি কেনেন। জোয়ারদারেরা রাজা গণেশের কাছ থেকে এসব জমি কেনেন বা কোনোভাবে পেয়েছেন বলে আমার পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি।’
পুকুর খননের সময় পাওয়া গেছে ২৭ কেজি ওজনের একটি বিষ্ণুমূর্তি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই প ক র গণ শ র ২৭ ক জ বড়দ ঘ
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক