এজেন্সি ‘কোটা’ এবার হজযাত্রীদের ভোগাতে পারে
Published: 11th, April 2025 GMT
সৌদি আরবের দুটি সিদ্ধান্ত এবার বেসরকারি হজযাত্রীদের পবিত্র হজ পালনের ক্ষেত্রে ভোগান্তির কারণ হতে পারে। দেশটির সরকার বলেছে, এ বছর প্রতিটি হজ এজেন্সিকে সর্বনিম্ন এক হাজার ব্যক্তিকে হজ পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতে হবে; আগে যা ছিল সর্বনিম্ন ২৫০ জন।
এ ছাড়া ১৫ বছরের কম বয়সীদের হজ পালনে সৌদি সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে ১৫ বছরের কম বয়সী ৬০০ নিবন্ধিত হজযাত্রীর অভিভাবকেরা টাকা জমা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। আবার হজ এজেন্সিগুলো এই টাকা খরচ করে এখন চাপে পড়েছে।
সৌদি সরকারের এই দুটি সিদ্ধান্ত ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় মেনে নেওয়ায় এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সদস্য আল কুতুব হজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী হাবীবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, একদিকে মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত শিশু হজযাত্রীদের টাকা ফেরত দিতে এজেন্সিগুলোর ওপর চাপ তৈরি করছে। আবার শিশু হজযাত্রীর পরিবর্তে প্রাক্-নিবন্ধিত হজযাত্রী প্রতিস্থাপন করার কথা বলছে।
কুতুবউদ্দিন বলেন, ‘এই সময়ে প্রাক্-নিবন্ধিত হজযাত্রী আমরা কোথায় পাব। তা ছাড়া শিশু হজযাত্রীর কাছ থেকে আমরা যে টাকা নিয়েছি, তার বড় অংশ সৌদি সরকারের কাছে গেছে। কিছু টাকা বাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক কাজে জমা হয়েছে। সেটা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ওই টাকা কীভাবে ফেরত দেব।’
হাব সূত্র জানিয়েছে, এ বছর নিবন্ধিত হজ এজেন্সির সংখ্যা ৭৫৩। কিন্তু ‘কোটা’র কারণে এবার মাত্র ৭০টি এজেন্সিকে প্রায় ৮২ হাজার হজযাত্রীর সেবা দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব পালন করতে হবে, যা খুবই কঠিন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।এমন পরিস্থিতিতে হজ-সংশ্লিষ্ট অনেকের আশঙ্কা, সৌদি সরকারের নতুন বিধিনিষেধের কারণে এবার নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে আবাসন, পরিবহন, খাওয়া এবং শারীরিক অসুস্থতায় হজযাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। সৌদি সরকারের নতুন আইনে এজেন্সিপ্রতি কোটা এক হাজার নির্ধারণ করে দেওয়ায় এবার হাজিরা উপযুক্ত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে ৮১ হাজার ৯০০ জন এবং সরকারিভাবে ৫ হাজার ২০০ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এজেন্সিপ্রতি এক হাজার হাজির কোটার কারণে এবার ৭০টি লিড এজেন্সির মাধ্যমে প্রায় ৮২ হাজার ব্যক্তি হজে যাচ্ছেন। ৭০টি এজেন্সির জন্য এত বিপুলসংখ্যক হজযাত্রীর দেখাশোনা, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসাসহ সার্বিক সেবাদান জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ২৯ এপ্রিল থেকে হজযাত্রা শুরু হবে।
হাব সূত্র জানিয়েছে, এ বছর নিবন্ধিত হজ এজেন্সির সংখ্যা ৭৫৩। কিন্তু ‘কোটা’র কারণে এবার মাত্র ৭০টি এজেন্সিকে প্রায় ৮২ হাজার হজযাত্রীর সেবা দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব পালন করতে হবে, যা খুবই কঠিন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় আছে, প্রতিটি এজেন্সি ন্যূনতম ১০০ থেকে ৩০০ হজযাত্রী নিতে পারবে। এখন তা হয়ে গেল সর্বনিম্ন এক হাজার। এতে হাজিদের সেবার মান কী হবে, সে প্রশ্ন উঠেছে।ফরিদ আহমেদ মজুমদার, হাবের মহাসচিবহাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হজযাত্রীদের নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর সৌদি সরকার কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো গাইডলাইন ছিল না। মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় আছে, প্রতিটি এজেন্সি ন্যূনতম ১০০ থেকে ৩০০ হজযাত্রী নিতে পারবে। এখন তা হয়ে গেল সর্বনিম্ন এক হাজার। এতে হাজিদের সেবার মান কী হবে, সে প্রশ্ন উঠেছে।’
৭০টি লিড এজেন্সির অধীন ৮২ হাজার হজযাত্রীএত দিন একেকটি হজ এজেন্সি নিম্নে আড়াই শ থেকে তিন শ-সাড়ে তিন শ বা তারও বেশি হাজি নিত। এ বছর তিন-চার-পাঁচটি এজেন্সি মিলে একটিকে ‘লিড এজেন্সি’ ধরে হজযাত্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। এ বছর বেসরকারিভাবে যে ৮১ হাজার ৯০০ জন হজে যাবেন; সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাঁদের যাবতীয় কাগজপত্র ওই ৭০টি ‘লিড এজেন্সির’ নামে হচ্ছে।
রাজধানীর বিজয়নগরের ‘হাজারি হজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’–এর স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই তো চায় তার এজেন্সির মাধ্যমে হাজি যাক। ফলে সবাই “লিড এজেন্সি” হতে চায়। এ অবস্থায় আমরা লটারির মাধ্যমে লিড এজেন্সি ঠিক করেছি। আমার এজেন্সি থেকে এ বছর ১৮৮ জন হজে যাবেন। এক হাজারের কোটা পূরণ করতে আমরা চারটি এজেন্সি মিলে এবার হজযাত্রী পাঠাচ্ছি।’
এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে ৮১ হাজার ৯০০ জন এবং সরকারিভাবে ৫ হাজার ২০০ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন নিয়মে হজযাত্রী পাঠানোর সম্ভাব্য ঝুঁকি কী কী, সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মহলে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। আগে প্রতিটি হজ এজেন্সির পক্ষে একজন ‘মোনাজ্জেম’ (কন্ট্রাক্ট পারসন) সৌদি সরকারের অনুমোদন ও ভিসা পেত। এই মোনাজ্জেম নির্ধারণ বাধ্যতামূলক। কারণ, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য মোনাজ্জেম ঠিক করা, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করা, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য কাজের জন্য মোনাজ্জেমদের সৌদি আরব যেতে হয়। হজযাত্রীদের সেবা ও ব্যবস্থাপনার জন্যও তাঁদের থাকতে হয়। অতীতে কয়েক শ হজ এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া হজযাত্রীরা মোনাজ্জেমদের মাধ্যমে নানা ধরনের সেবা পেতেন। এবার ৭০টি এজেন্সির পক্ষে মাত্র ৭০ জন মোনাজ্জেম নির্দিষ্ট হওয়ায় প্রায় ৮২ হাজার হজযাত্রী প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো.
সৌদি সরকার কেন এই এজেন্সি কোটা নির্ধারণ করে দিচ্ছে? এ বিষয়ে হজ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও এ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যত হজের সময় দাপ্তরিক কাজের চাপ বা ঝামেলা এড়াতে সৌদি সরকার এই কোটা নির্ধারণ করেছে। হজযাত্রীদের জন্য সেবাদানকারী কোম্পানি নির্বাচন, তাঁবুর এলাকা সংরক্ষণ, মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি-হোটেল ভাড়া, ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এজেন্সি সংখ্যা থাকলে এসব কাজে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এ বছর প্রতিটি এজেন্সিকে ন্যূনতম এক হাজার জন হাজির কোটা নির্ধারণ করে দিয়ে কার্যত সৌদি সরকার ‘মোনাজ্জেম’ সংখ্যা কমিয়েছে। এই মোনাজ্জেমরাই হজযাত্রীদের বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এতে সৌদি সরকারের কাজ সহজ হয়েছে, কিন্তু ঝামেলা বেড়েছে হজ এজেন্সি ও যাত্রীদের।
গত ৯ ডিসেম্বর সৌদি সরকারের হজমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত অনুরোধসহ ডিও লেটার পাঠান। তার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার এজেন্সি কোটা দুই হাজার থেকে কমিয়ে এক হাজার নির্ধারণ করে। আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টাজানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সৌদি সরকার এজেন্সিপ্রতি বড় সংখ্যায় কোটা নির্ধারণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু সৌদি সরকারের হজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের আগের কর্তৃপক্ষের নিবিড় যোগাযোগ ও চেষ্টা-তদবিরে তা থামানো গেছে। এবার সরকার বা হাব-এর নতুন কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান ছিল না।
অবশ্য এ বিষয়ে ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের বলেছেন, এজেন্সি কোটা ন্যূনতম ৫০০ করার জন্য তিনি সৌদি সরকারের হজমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক, ডিও লেটার দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তদুপরি সৌদি সরকার এজেন্সি কোটা দুই হাজার নির্ধারণ করে চিঠি দেয়। এ পর্যায়ে তিনি সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর সৌদি সরকারের হজমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত অনুরোধসহ ডিও লেটার পাঠান। তার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার এজেন্সি কোটা দুই হাজার থেকে কমিয়ে এক হাজার নির্ধারণ করে।
হজ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা ঢাকায় এবং সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের অনেকের অনিয়ম ও অবহেলায় বর্তমান সংকটের তৈরি হয়েছে।
হাব-এর সদস্য হাবীবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে আমার কাছে মনে হচ্ছে, সরকারের কর্মকর্তারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ হোক, তাঁরা চান না।’
অবশ্য মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কোটা নির্ধারণের বিষয়টা পুরোপুরি সৌদি সরকারের। ধর্ম উপদেষ্টা দুবার চিঠি লিখে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা বিনয়রে সঙ্গে ‘না’ করেছেন।
বর্তমানে কোটা নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তাতে হজ ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের দায় দেখেন না মঞ্জুরুল হক।
এখনো বাড়িভাড়া হয়নি সাড়ে তিন হাজার হজযাত্রীরগত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছিলেন, ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি হয়নি। তাঁদের হজে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। তিনি হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, যদি কোনো এজেন্সি নিবন্ধিত ব্যক্তিকে হজে পাঠাতে না পারে, তাদের লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাতিল ও ফৌজদারি মামলা করা হবে। বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে হাবের শীর্ষ নেতৃত্ব ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নয়টি এজেন্সিকে সৌদি আরবের মক্কায় ও মদিনায় ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি না করায় আটবার তাগিদপত্র দিয়ে সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয় জরুরি নোটিশ দেয়। এর মধ্যে হাব-এর বর্তমান সভাপতি সৈয়দ গোলাম সারওয়ারের চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসও ছিল। গত রাত পর্যন্ত নয়টি এজেন্সির মধ্যে ছয়টি তাদের হজযাত্রীর বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এখনো তিনটি এজেন্সির সাড়ে তিন হাজার হজযাত্রীর বাড়িভাড়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংকটের জন্য ‘মোনাজ্জেম’ জটিলতা অনেকাংশে দায়ী। কারণ, এত দিন শত শত হজ এজেন্সি হাজি নিত। প্রতিটি হজ এজেন্সির পক্ষে একজন করে নির্ধারিত ‘মোনাজ্জেম’ হিসেবে সহজে সৌদি আরবের ভিসা পেতেন। তাঁরা সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি, বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন করতেন। এবার ৭০টি লিড এজেন্সির কারণে সে সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। নিবন্ধিত হজ এজেন্সির মালিক হয়েও অনেকে ভিসা জটিলতায় পড়ে হজযাত্রীদের নানা সেবা এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি।
হাব-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার মনে করেন, এবার যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, এর কারণ কিন্তু ওই কোটা। হজযাত্রীর বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তির দায়িত্ব তো লিড এজেন্সির। সে কারণে সমন্বয়কারী এজেন্সি সেভাবে সহযোগিতা করতে পারছে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র হজয ত র র ও পর বহন চ ক ত প র য় ৮২ হ জ র হজয ত র দ র হজয ত র র ব সরক র র হজ প রথম আল ক সরক র ভ ব কর মকর ত দ র জন য এক হ জ র উপদ ষ ট ন য নতম ব সরক র জ মদ র হ ব এর জ র জন এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।