বয়সের ভারে মৃত্যু নয়, হাতিটি হত্যা করা হয় দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নিতে
Published: 11th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকা থেকে গত বুধবার উদ্ধার হয় একটি বন্য হাতির হাতির মরদেহ। তখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে এবার বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বয়সের ভারে নয়, দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে।
হাতিটিকে হত্যার অভিযোগ এনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁশখালী থানায় দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন বন বিভাগের চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। এ ছাড়া আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ থেকে ১৮ জনকে। নাম উল্লেখ করা দুই আসামি হলেন উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব চেচুরিয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো.
মামলার এজাহার ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে আসামিরা সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকায় সরওয়ারের লিচুবাগানে হাতিটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, পিঠ ও দুই কানের নিচে এবং পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে হত্যা করেন। পরে ওই হাতির শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে যান। মামলায় হাতিটির বয়স ৬-৭ বছর উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, মৃত হাতিটির বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি। বয়সের ভারে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
বুধবার বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তে হাতিটির দুটি দাঁত ও চার পায়ের নখ কেটে নেওয়ার তথ্য ওঠে আসে। এরপর গতকাল বিকেলে বাঁশখালী থানায় মামলা করা হয়। বন বিভাগের লোকজন জানান, মামলার আসামিরা সংঘবদ্ধ পাচারকারী।
জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাতি মেরে দাঁত ও নখ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল থানায় মামলা হয়েছে। আমরা জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’
গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে অন্তত ১৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদি রেঞ্জে ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া, বৈদ্যুতিক ফাঁদ, রোগাক্রান্ত হওয়া, পাহাড় থেকে পড়েসহ নানা কারণে এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে।
কালীপুর রেঞ্জের আওতাধীন সাধনপুর এলাকায় ২১৫০ একর এবং পুকুরিয়া এলাকায় ৭৫৯ একর জায়গা আছে। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত কালীপুর রেঞ্জ আওতায় ১১টি হাতি মারা গেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৮ জুন আনুমানিক ২০-২৪ বছর বয়সী মাদি হাতি মারা যায় খাদ্য বিষক্রিয়ায়। এর আগে ১১ জুন ১২-১৪ মাসের শাবক, ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ২২-২৫ বছরের মাদি হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে, ২০২০ সালের ২৯ জুন ৬ বছর বয়সী মাদি হাতি উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে, ১৮ জুন ১২ বছরের হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে, ২৯ মার্চ ৬০ বছর বয়সী হাতি রোগাক্রান্ত হয়ে, ২০১৯ সালের ৩ জুন ১০০ বছরের মাদি হাতি রোগাক্রান্ত, ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১৮ বছরের খাদ্য বিষক্রিয়ায়, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৬ বছরের মাদি হাতি রোগাক্রান্ত হয়ে, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর ৯০ বছরের মাদি হাতি শারীরিক দুর্বলতা এবং এর আগে আগে ৩০-৩৫ বছরের মাদি হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যায়।
অন্যদিকে, একই উপজেলার জলদী রেঞ্জে পাঁচটি হাতি মারা গেছে। তার মধ্যে, ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের আওতাধীন চাম্বল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য বিটের জঙ্গল চাম্বল মৌজার মিতাইঝিরি গুন্ডার টেক এলাকায় একটি বন্য হাতি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দুই দিন পর চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় হাতিটি। এর বাইরে, ২০২৩ সালের ৮ জুলাই চাম্বলের দুইল্লাঝিরি এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে একটি এবং ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর চাম্বল এলাকার পূর্ব চাম্বলে ধানখেত থেকে একটি হাতির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র বয়স র ভ র বছর র ম দ কর মকর ত ড স ম বর এল ক য় চ ম বল উপজ ল র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?