চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকা থেকে গত বুধবার উদ্ধার হয় একটি বন্য হাতির হাতির মরদেহ। তখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে এবার বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বয়সের ভারে নয়, দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে।

হাতিটিকে হত্যার অভিযোগ এনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁশখালী থানায় দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন বন বিভাগের চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। এ ছাড়া আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ থেকে ১৮ জনকে। নাম উল্লেখ করা দুই আসামি হলেন উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব চেচুরিয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো.

সরওয়ার হোসেন (৪৮) এবং একই এলাকার মোহাম্মদ জাফর (৫২)।

মামলার এজাহার ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে আসামিরা সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকায় সরওয়ারের লিচুবাগানে হাতিটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, পিঠ ও দুই কানের নিচে এবং পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে হত্যা করেন। পরে ওই হাতির শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে যান। মামলায় হাতিটির বয়স ৬-৭ বছর উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, মৃত হাতিটির বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি। বয়সের ভারে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

বুধবার বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তে হাতিটির দুটি দাঁত ও চার পায়ের নখ কেটে নেওয়ার তথ্য ওঠে আসে। এরপর গতকাল বিকেলে বাঁশখালী থানায় মামলা করা হয়। বন বিভাগের লোকজন জানান, মামলার আসামিরা সংঘবদ্ধ পাচারকারী।

জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাতি মেরে দাঁত ও নখ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল থানায় মামলা হয়েছে। আমরা জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’

গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে অন্তত ১৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদি রেঞ্জে ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া, বৈদ্যুতিক ফাঁদ, রোগাক্রান্ত হওয়া, পাহাড় থেকে পড়েসহ নানা কারণে এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে।

কালীপুর রেঞ্জের আওতাধীন সাধনপুর এলাকায় ২১৫০ একর এবং পুকুরিয়া এলাকায় ৭৫৯ একর জায়গা আছে। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত কালীপুর রেঞ্জ আওতায় ১১টি হাতি মারা গেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৮ জুন আনুমানিক ২০-২৪ বছর বয়সী মাদি হাতি মারা যায় খাদ্য বিষক্রিয়ায়। এর আগে ১১ জুন ১২-১৪ মাসের শাবক, ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ২২-২৫ বছরের মাদি হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে, ২০২০ সালের ২৯ জুন ৬ বছর বয়সী মাদি হাতি উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে, ১৮ জুন ১২ বছরের হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে, ২৯ মার্চ ৬০ বছর বয়সী হাতি রোগাক্রান্ত হয়ে, ২০১৯ সালের ৩ জুন ১০০ বছরের মাদি হাতি রোগাক্রান্ত, ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১৮ বছরের খাদ্য বিষক্রিয়ায়, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৬ বছরের মাদি হাতি রোগাক্রান্ত হয়ে, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর ৯০ বছরের মাদি হাতি শারীরিক দুর্বলতা এবং এর আগে আগে ৩০-৩৫ বছরের মাদি হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যায়।

অন্যদিকে, একই উপজেলার জলদী রেঞ্জে পাঁচটি হাতি মারা গেছে। তার মধ্যে, ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের আওতাধীন চাম্বল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য বিটের জঙ্গল চাম্বল মৌজার মিতাইঝিরি গুন্ডার টেক এলাকায় একটি বন্য হাতি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দুই দিন পর চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় হাতিটি। এর বাইরে, ২০২৩ সালের ৮ জুলাই চাম্বলের দুইল্লাঝিরি এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে একটি এবং ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর চাম্বল এলাকার পূর্ব চাম্বলে ধানখেত থেকে একটি হাতির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র বয়স র ভ র বছর র ম দ কর মকর ত ড স ম বর এল ক য় চ ম বল উপজ ল র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ