এই ৭ কারণে আপনাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না
Published: 12th, April 2025 GMT
১. বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নয়
কেউ কেউ বেশির ভাগ সময় বিভ্রান্তিতে থাকেন। এই বিভ্রান্তির কারণে বারবার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এতে আশপাশের মানুষ তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাই উচিত হবে ভেবেচিন্তে যেকোনো সিদ্ধান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে নেওয়া এবং স্পষ্টভাবে তা প্রকাশ করা।
২. সঠিক দক্ষতা অথবা জ্ঞানের অভাবকোনো বিষয়ে জ্ঞান অথবা দক্ষতার অভাব থাকতেই পারে। এমন বিষয়ে মতামত দেওয়ার আগে খুব ভালোভাবে জেনে নিন, নিজে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে তবেই অন্যদের সামনে আলোচনা করুন। এতে আলোচনার সময় অন্যরা বুঝতে পারবেন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনি সবিস্তার জানেন।
৩.নিষ্ক্রিয় থাকা
এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কোনো বিষয়েই মতামত দিতে চান না। কোনো বিষয়ে মতামত চাইলেও তাঁরা বলেন, বাকিরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতেই তাঁরা রাজি। কেউ যখন দেখে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত অথবা চিন্তাভাবনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারছেন না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছে আপনার গুরুত্ব কমে যায়। ফলে অন্যরা আপনাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তাই সব সময় নিষ্ক্রিয় না থেকে নিজের মতামত প্রকাশ করতে চেষ্টা করুন।
৪. শরীরী ভাষাআমরা যখন কারও সঙ্গে কথা বলি, তখন আমাদের ব্যবহৃত বাক্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় শরীরী ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজ। কথা বলার সময় আমরা আত্মবিশ্বাসী না হলে আমাদের অঙ্গভঙ্গি, দেহভঙ্গি, হাবভাব, মাথার নড়াচড়া, চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা ইত্যাদি দেখে খুব সহজেই তা বোঝা যায়। এসব ছোট ছোট বিষয় যেমন আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারে, তেমনি ভেঙেও দিতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করাঅনেক সময় আমরা যখন মনে করি কেউ আমাদের বুঝতে পারছে না। তখন আমরা অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দিতে শুরু করি। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত ব্যাখ্যার ফলে আপনাকে আপনার ধারণা সম্পর্কে বিভ্রান্ত মনে হতে পারে। তাই সংক্ষিপ্তভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনার মতামত প্রকাশ করুন।
৬. অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়াকোনো বিষয়ে অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া আপনার দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারে। কোনো বিষয়ে আপনি ভুল করে থাকলে উপযুক্ত সময়ে ক্ষমা চেয়ে নিন। ক্রমাগত ‘সরি’ বলার ফলে অন্যরা আপনার প্রতি সন্দিহান হতে পারে, শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলতে পারে।
৭. আত্মবিশ্বাসের অভাবঅন্যরা আপনাকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার আত্মবিশ্বাসের ওপর। আপনি নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় থাকলে অন্যরাও আপনার ওপর ভরসা করতে পারবেন না। আত্মবিশ্বাসীদের প্রতি মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হন। আপনার কাজ, কথা বলার ধরন এবং শরীরী ভাষাতে ধরা দেবে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী।
সূত্র: দ্য ইকোনোমিক টাইমস
আরও পড়ুনবেশি দিন বাঁচতে চান, আজ থেকেই বন্ধুদের গুরুত্ব দিন০৯ নভেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।