সব সময়ই পরিকল্পনা ছিল যে বাংলাদেশে পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশ ফিলিস্তিনে ফিরব। তাই গত ডিসেম্বরে বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে চূড়ান্ত বর্ষের পড়াশোনা ও ইন্টার্নশিপ শেষ করে দেশে ফিরে আসি। আমরা যারা ফিলিস্তিন থেকে অন্য কোনো দেশে পড়তে যাই, তারা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছুটিতে সাধারণত দেশে যাই না। কারণ, সব সময়ই ফিলিস্তিনে হামলা-সংঘাতের আশঙ্কা থাকে। আবার আমাদের অনেক সীমান্ত ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। তাই কোনো ধরনের সংঘাত বা বিশৃঙ্খলা শুরু হলে দেশে আটকে পড়ার ঝুঁকিও থাকে। একবার আটকা পড়লে পড়াশোনায় পিছিয়ে যেতে হয়। তাই সবাই একবারে পড়াশোনা শেষ করেই বাড়িতে ফেরে। আমিও ছয় বছর পর বাড়িতে এসেছি। তবে বাড়িতে ফিরলেও মনে স্বস্তি আসেনি।

ফিলিস্তিনের পাঠক্রম অনুযায়ী, এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করতে আমাকে আরও এক বছর ইন্টার্নশিপ করতে হবে। বাংলাদেশে থাকার সময় থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল, ফিলিস্তিনের ওয়েস্টব্যাংকের জেনিন পাবলিক হসপিটালে ইন্টার্ন করব। একে এটা সরকারি হাসপাতাল, তার ওপর আমার গ্রাম থেকে এটাই সবচেয়ে কাছে। কিন্তু জেনিন সিটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওই এলাকা এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। প্রায় সময় গোলাগুলির খবর পাচ্ছি। গেল মাসেই জেনিন পাবলিক হসপিটালের সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন। অগত্যা আমি ওয়েস্টব্যাংকের নাবুলুস শহরে ইন্টার্নশিপ করছি। আমার বাড়ি থেকে হাসপাতালে যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে ইসরায়েলের সেনারা ওয়েস্টব্যাংকের বিভিন্ন শহরের প্রবেশদ্বারগুলোয় কয়েক শ লোহার বেষ্টনী বসিয়ে দিয়েছেন। ইসরায়েলের সেনারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো বেষ্টনী খোলা বা বন্ধ রাখেন। তাই আমরা এখন আর নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারি না। পুরো এলাকা এখন বন্দিশিবির হয়ে গেছে। সড়ক বন্ধ থাকায় আমাকে প্রতিদিনই অনেকটা পথ ঘুরে বাড়িতে ফিরতে হয়।

আল্লাহর রহমতে আমার গ্রাম এখনো নিরাপদ আছে। এখানে কোনো হামলা বা গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। তবে আগেই বলেছি, আমাদের এখন গ্রাম থেকে শহরে যেতেও বাধার মুখে পড়তে হয়। সব সময়ই আতঙ্কে থাকি। শহরে যাঁরা চাকরি বা ব্যবসা করতেন, তাঁদের অধিকাংশই বেকার হয়ে পড়েছেন। আয়-রোজগার না থাকায় তাঁদের জীবনযাত্রাও থমকে গেছে। এখানকার স্কুল-কলেজগুলো সীমিত পরিসরে চলছে। সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাস হয়। বাকি দিনগুলোয় অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। আমার এক বোন স্কুলের, আরেক বোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কিন্তু নিরাপত্তার ভয়ে তারা ক্লাসে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করলে এসব চাওয়া আসলে বিলাসিতা। কারণ, আমাদের জীবনেরই তো এখন নিরাপত্তা নেই। গাজায় আমার বন্ধুদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা মনে করলেই ভার হয়ে আসে মন।

বরিশালে আমার মেডিকেল কলেজের এক ব্যাচ সিনিয়র মোর্তাজা পড়াশোনা শেষ করে এখন দেশে ফিরেছে। মোর্তাজার বাড়ি গাজায়। সেখানে আল-শেফা নামে একটি হাসপাতালে চাকরি করত মোর্তাজা। কিন্তু কয়েক দিন আগে মোর্তাজা ফোনে জাোয়, বোমা হামলায় ওদের হাসপাতালও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল অন্যত্র সরিয়ে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে।

অন্যদের কথা চিন্তা করলে আমি হয়তো তুলনামূলক ভাগ্যবান। কারণ, আমি যে হাসপাতালে কাজ করি, এখনো সেখানে যুদ্ধাহত কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে আসেনি। আমি মনেপ্রাণে দোয়া করি, ফিলিস্তিনের কোনো হাসপাতালেই যেন আর যুদ্ধাহত কোনো রোগীর চিকিৎসা নিতে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়।

আরও পড়ুনমাত্র ১ সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করবেন০১ আগস্ট ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ইন ট র ন শ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ