আবাহনী লিমিটেডের পেসার মৃত্যুঞ্জয়ের বল এগিয়ে এসে ড্রাইভ করলেন আনিসুল ইসলাম। মিড অফের ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত পারলেন না বল আটকাতে। বল সীমানায় চলে যায় অতি সহজে। ৯৫ থেকে আনিসুলের রান ৯৯। পরের বল ডট। এরপরের বলেই আসল মাহেন্দ্রক্ষণ। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ওপেনার আনিসুল ডিপ পয়েন্টে বল পাঠিয়ে নিলেন ১ রান। তার রান পৌঁছে গেল তিন অংকে। তামিম ইকবালের জায়গায় ওপেনিংয়ে নেমে আনিসুল পূরণ করলেন দলের চাহিদা। তাইতো আনন্দটাও দ্বিগুন।

মুশফিকুর রহিম দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তার উচ্ছ্বাসটা বাড়িয়ে দেন আরো। দিন শেষে সেই হাসিটা মুখেই লেগে ছিল। কারণ আনিসুলের সেঞ্চুরির ইনিংসে শনিবার (১২ এপ্রিল) চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়েছে মোহামেডান।

আনিসুলের দ্যুতিময় ১১৪ রানের ইনিংসে ভর করে মোহামেডান ২৬৪ রানের পুঁজি পায়। জবাব দিতে নেমে আবাহনী শান্তর ৮০ রানের ইনিংসে সঠিক পথেই ছিল। কিন্তু তার আউটের পর সব ওলটপালট হয়ে যায়। আবাহনীর দলীয় ইনিংস থেমে যায় ২২৫ রানে। ৩৯ রানের দারুণ জয় পায় মোহামেডান।

আরো পড়ুন:

শরিফুলের ৬ উইকেট, সৌম্যর ৮০, রুপগঞ্জের দারুণ জয়

ডিপিএলে ফিক্সিং সন্দেহ, তদন্তে নেমেছে বিসিবি

যদিও তারা পয়েন্ট টেবিলে আবাহনীকে টপকাতে পারেনি। ১১ ম্যাচে দুই দলেরই জয় ৯টি, পরাজয় ২টি। আবাহনীর রান রেট ১.

৪৬৮। মোহামেডানের ০.৭৭১। সুপার লিগের লড়াইয়ে দুই দল আবারো মুখোমুখি হবে। সেই লড়াইয়ে কার মুখে শেষ হাসিটা থাকে সেটাই দেখার।

এই ম্যাচকে ঘিরে ব্যাট-বলে তেমন কোনো উত্তেজনা, রোমাঞ্চ ছড়ায়নি। মোহামেডান শুরু থেকে দাপট দেখিয়েছে। আবাহনী এক পর্যায়ে ফিরে লক্ষ্য নাগালে রেখেছিল। বোলিংয়ে মোহামেডান আবার দাপট দেখায়। জুটি গড়ে আবহনীও দেয় জবাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোহামেডানের দলগত পারফরম্যান্সে আবাহনীকে হার মানতে হয়।

তবে ইবাদত হোসেনের বলে মোহাম্মদ মিঠুনের এক এলবিডব্লিউ আবদেনকে ঘিরে কথা কাটাকাটি হয়েছে। সেটাও অনফিল্ড দুই আম্পায়ার তানভীর ও সৈকতের সঙ্গে মোহামেডানের অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমের। আম্পায়ারের থেকে আউটের সাড়া না পেয়ে ইবাদতও অশোভন আচরণ করেছেন। ড্রেসিংরুমের দিকে তাক করে আঙ্গুল তুলে চিৎকার করতে দেখা গেছে তাকে। পরিস্থিতি এতোটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ছিল যে মিনিট তিনেক খেলা বন্ধ ছিল।

ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া আনিসুল ১১৮ বলে ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ১১৪ রানের ইনিংসটি সাজান। মোহামেডানের হয়ে আর ফিফটি করতে পারেননি কেউ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৮ রান আসে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ব্যাট থেকে। ৩৪ ওভারে ৩ উইকেটে মোহামেডানের রান ছিল ২০১। সেখান থেকে নাটকীয় ছন্দপতনে মাত্র ৬৩ রান তুলতে পারে তারা। মুশফিকুর রহিম (২০) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৭) অহেতুক শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন।

বল হাতে নাহিদ রানা ৪৯ রানে ৩ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন রাকিবুল, মৃত্যুঞ্জয় ও মাহফুজুর।

লক্ষ্য তাড়ায় পারভেজ হোসেন ইমন দারুণ ছক্কায় শুরু করেন। এক ওভার পর ইবাদতকেও দারুণ স্ট্রেইট ও কভার ড্রাইভে চার হাঁকান। কিন্তু ইবাদতের চতুর্থ ওভারেই তাকে সাজঘরে ফিরতে হয়। কাভারে সোজা ক্যাচ দেন মাত্র ১৬ রানে। আরেক ওপেনার জিসান মিরাজের বলে সীমানায় ক্যাচ দেন ৩ রানে।

তিনে নামা শান্ত শুরু থেকে রান তুলতে ভুগছিলেন। তবুও দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন তিনি। সাইফউদ্দিনের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে ১১৩ বলে ৮০ রান করেন আবাহনীর অধিনায়ক। এর বাইরে তেমন কেউ রান পাননি। মুমিনুল ২৫ এবং মোসাদ্দেক ও মৃত্যুঞ্জয় ২৪ রানের দুটি ইনিংস খেলেন।

মোহামেডানের সেরা বোলার ছিলেন ইবাদত। ৩৬ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ ও সাইফ উদ্দিন।

শেষ কয়েক বছরেই আবাহনী ও মোহামেডান লড়াইয়ে আবাহনীর ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। এবার মোহামেডানের জয়ে মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটির সুদিন ফিরে আসার সুবাস পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ