যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে কমে গেছে বিদ্যুতের সরবরাহ। এতে গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বাংলাদেশে লোডশেডিং হয়েছে। আজ রোববার থেকে লোডশেডিং বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র আদানির। এর মধ্যে প্রথম ইউনিট বন্ধ হয় ৮ এপ্রিল। এতে সরবরাহ কমে ৭৬০ থেকে ৭৭০ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। এ ইউনিট থেকে এতদিন গড়ে ১৩৬০ থেকে ১৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলছিল। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায় দ্বিতীয় ইউনিট। এতে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সমকালকে বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার পর প্রথম ইউনিট চালু হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে তিন-চার দিন লাগতে পারে।
পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, আদানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় ঘাটতি মেটাতে গ্যাসের কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বুধবার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৮৮০ মেগাওয়াট। সেদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় ২২৪ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার ১৩ হাজার ৫৮৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং ছিল ৮০। শুক্রবার চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট, লোডশেডিং তেমন ছিল না। শনিবারও লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনেই লোডশেডিং হয়। বেলা ৩টায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ৪২৮।
আদানির সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ
কেনার চুক্তি রয়েছে পিডিবির। নানা অভিযোগের কারণে চুক্তিটি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কমিটি কাজ করছে। বিদ্যুৎ বিক্রির প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাবে আদানি, যা আদায়ে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। গত বছর একবার সরবরাহ বন্ধও করেছিল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।