শিকারি চক্রকে শনাক্ত করুন, কোনো ছাড় নয়
Published: 13th, April 2025 GMT
দেশে বন্য হাতি হত্যা থামছেই না। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হাতি হত্যার ঘটনাগুলো ঘটছে। দেশে যে অল্পসংখ্যক হাতি এখনো টিকে আছে, তার বেশির ভাগই এসব এলাকায়। ফলে এসব এলাকায় নিয়মিত হাতি হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক বলতেই হয়। হাতির বিচরণক্ষেত্রে জনবসতির প্রসার, নানা স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় বন্য প্রাণীগুলো অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে শিকারি চক্রের অপতৎপরতা বন্য হাতির জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে এনেছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ আমরা দেখতে পেলাম চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকা থেকে গত বুধবার একটি বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার হয়। তখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, বয়সের ভারে নয়; দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতেও আমরা দেখলাম, হাতিটিকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়া হয়েছে, তা সেসব ছবিতেই স্পষ্ট। ময়নাতদন্তেও তা প্রমাণিত হয়েছে।
গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে অন্তত ১৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদি রেঞ্জে ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া, বৈদ্যুতিক ফাঁদ, রোগাক্রান্ত হওয়া, পাহাড় থেকে পড়েসহ নানা কারণে এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে। এভাবে একের পর এক হাতির মৃত্যু বা হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গত বুধবারের হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা আমাদের আরও বেশি শঙ্কিত করে তোলে। কারণ, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে সেখানে শিকারি চক্র সক্রিয় আছে। বিশ্বজুড়ে প্রাণী বা প্রাণীর দেহাংশ কালোবাজারিতে হাতির দাঁত ও নখের খুবই মূল্যবান বস্তু। ফলে এর বাজার মূল্যও বিপুল। শুধু দাঁত সংগ্রহ করার জন্য আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর অসংখ্য হাতি হত্যা করে থাকে শিকারি চক্র। বাংলাদেশেও এমন শিকারি চক্রের তৎপরতা থেমে নেই, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, হাতি হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করব, হাতি রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা ছাড়াও শিকারি চক্রকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। পার্শ্ববর্তী উপজেলা আনোয়ারায়ও কিছু হাতি আটকে পড়েছে। সেসব হাতিরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ