দেশে বন্য হাতি হত্যা থামছেই না। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হাতি হত্যার ঘটনাগুলো ঘটছে। দেশে যে অল্পসংখ্যক হাতি এখনো টিকে আছে, তার বেশির ভাগই এসব এলাকায়। ফলে এসব এলাকায় নিয়মিত হাতি হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক বলতেই হয়। হাতির বিচরণক্ষেত্রে জনবসতির প্রসার, নানা স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় বন্য প্রাণীগুলো অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে শিকারি চক্রের অপতৎপরতা বন্য হাতির জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে এনেছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ আমরা দেখতে পেলাম চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকা থেকে গত বুধবার একটি বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার হয়। তখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, বয়সের ভারে নয়; দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতেও আমরা দেখলাম, হাতিটিকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়া হয়েছে, তা সেসব ছবিতেই স্পষ্ট। ময়নাতদন্তেও তা প্রমাণিত হয়েছে।

গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে অন্তত ১৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদি রেঞ্জে ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া, বৈদ্যুতিক ফাঁদ, রোগাক্রান্ত হওয়া, পাহাড় থেকে পড়েসহ নানা কারণে এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে। এভাবে একের পর এক হাতির মৃত্যু বা হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গত বুধবারের হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা আমাদের আরও বেশি শঙ্কিত করে তোলে। কারণ, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে সেখানে শিকারি চক্র সক্রিয় আছে। বিশ্বজুড়ে প্রাণী বা প্রাণীর দেহাংশ কালোবাজারিতে হাতির দাঁত ও নখের খুবই মূল্যবান বস্তু। ফলে এর বাজার মূল্যও বিপুল। শুধু দাঁত সংগ্রহ করার জন্য আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর অসংখ্য হাতি হত্যা করে থাকে শিকারি চক্র। বাংলাদেশেও এমন শিকারি চক্রের তৎপরতা থেমে নেই, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, হাতি হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করব, হাতি রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা ছাড়াও শিকারি চক্রকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। পার্শ্ববর্তী উপজেলা আনোয়ারায়ও কিছু হাতি আটকে পড়েছে। সেসব হাতিরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ