লালমনিরহাটের রাব্বি জন্মের পর কখনো ভাত খাননি
Published: 13th, April 2025 GMT
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার রাব্বি ইসলাম (২০) জন্মের পর থেকে ভাত খান না। তাঁর যখন ছয় মাস বয়স, তখন তাঁর মুখে ভাত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মুখে নেননি। ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করলে বমি করে ফেলতেন। জোর করে ভাত খাওয়ালে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এ জন্য হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছিল তাঁকে। এর পর থেকে তিনি আর কখনো ভাত খাননি।
রাব্বি ইসলামের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর গ্রামে। রাব্বির বাবা রমজান আলী ঝালমুড়ি বিক্রি করেন, মা ফরিদা বেগম গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাব্বি দ্বিতীয়। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করছেন।
রাব্বি শুধু ভাত নয়; বিরিয়ানি, পায়েস ও শাকসবজি খেতে পারেন না। এসব মুখে দিলেই তাঁর বমি আসে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের বুকের দুধ ও গরুর দুধ খেতেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুটির পাশাপাশি নুডলস, ডিম, মুড়ি ও ফলমূল খেতে শুরু করেন। এখন বাড়িতে রান্না করা নুডলস, মাছ, মাংসের তরকারি তাঁর প্রধান খাবার।
ভাত খেতে না পারার কারণ জানতে চাইলে রাব্বি ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার জীবনে কোনো দিন ভাত খাইনি। ভাতের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারি না। ভাত দেখলে কেমন বমি আসে। এখন বেশির ভাগ সময় নুডলস খাই ও এর সঙ্গে অন্যান্য খাবার খাই। তিন বেলার খাবার তালিকায় প্রায় দুই বেলা নুডলস থাকে। নুডলস আমার পচ্ছন্দের খাবার, খেতেও ভালো লাগে। আমি ভাত না খেয়েও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি।’
রাব্বির মা ফরিদা বেগম বলেন, জন্মের ছয় মাস বয়সে ছেলের মুখে যখন ভাত দেন, তখন সে বমি করে ফেলে দেয়। এরপর যতবার ভাত খাওয়াতে চেয়েছেন, সে কান্নাকাটি করত, বমি করত। অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাঁদের সামান্য আয়ের সংসার। ভাতের বদলে অন্য কিছুর আয়োজন করলে খরচ বেড়ে যায়। তারপরও অন্য কিছু খাইয়ে ছেলেকে বড় করেছেন। রাব্বির বাবা রমজান আলীও একই কথা বলেন।
রাব্বির প্রতিবেশী হামিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে রাব্বিকে দেখছেন তিনি। তাঁকে কখনো ভাত খেতে দেখেননি তিনি।
এ বিষয়ে বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও পাটগ্রাম উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা হারুন মিয়া বলেন, ‘রাব্বি ইসলাম নামের এক যুবক জন্মের পর থেকে ভাত খান না, এমনটা শুনেছি।’
বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো জানতে চেয়েছিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। যে কেউ যেকোনো ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হতে পারেন। ভাত না খেয়েও যদি কেউ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর অন্য খাবার খান, তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’