মাতৃভাষা বাংলার আন্তর্জাতিকীকরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
Published: 13th, April 2025 GMT
ফেব্রুয়ারি মাস গত হলেই বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা ম্রিয়মাণ হতে শুরু করে। অথচ বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা, যেটি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মুখের ভাষা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে রক্ত দিয়ে অর্জিত হলেও এই ভাষা আজও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথাযথ মর্যাদা পায়নি। উচ্চশিক্ষা, প্রশাসন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইংরেজির আধিপত্য বাংলার ব্যবহারকে করছে সংকুচিত। অথচ জাপান, জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো দেশ তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসন চালিয়ে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। অথচ এত বছরে আমরা কেন তা পারিনি? বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযোগ্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জগুলো কী? তা উত্তরণের কৌশলগুলো কী, এটি নিয়েই আজকের আলাপ।
এক.
ইউনেস্কোর ২০০৩ সালের প্রতিবেদন ‘এডুকেশন ইন আ মাল্টিলিংগুয়াল ওয়ার্ল্ড’ অনুযায়ী, মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর জ্ঞানার্জনের ভিত্তি তৈরি করে। জাপান, জার্মানি ও ফ্রান্স এ নীতিকে কাজে লাগিয়েছে। জাপানের ৯০ শতাংশ উচ্চশিক্ষা কোর্স জাপানি ভাষায় পরিচালিত হয়, যা তাদের জিডিপিকে ৫.১ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছে (বিশ্বব্যাংক, ২০২২)। জার্মানির ৮৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স জার্মান ভাষায় পরিচালনা করা হয়, ফ্রান্সে এ হার ৮০ শতাংশ। এই দেশগুলোর সাফল্য প্রমাণ করে, মাতৃভাষায় শিক্ষা ও গবেষণা জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। অথচ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার মাত্র ১০-১৫ শতাংশ (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ২০২১)।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে বাংলায় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হলেও উচ্চশিক্ষায় এই চিত্র ভিন্ন। গবেষণা বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকসের (ব্যানবেইস) ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রকৌশল ও চিকিৎসা শিক্ষার ৯০ শতাংশ কোর্স ইংরেজিতে পরিচালিত হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় সব প্রোগ্রামের শিক্ষাক্রমই ইংরেজি মাধ্যমে প্রণীত এবং সে মাধ্যমেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সর্বস্তরে এই ইংরেজি ব্যবহারের প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে– আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চাপ, বাংলায় শিক্ষা উপকরণের অভাব এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক তৌফিক রহমান তাঁর গ্রন্থ ‘ল্যাঙ্গুয়েজ পলিসি অ্যান্ড এডুকেশন ইন সাউথ এশিয়া’ (২০১০)-তে উল্লেখ করেছেন, ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও বিশ্বায়নের চাপে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মাতৃভাষাকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।’ কিন্তু বাংলা ভাষার যে প্রাণপ্রাচুর্য, তা কি বিশ্বদরবারে সম্মুখভাগে অবস্থানের যোগ্য নয়!
যেমন– বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ইতিহাস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, তার অন্যতম প্রমাণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’। যার ইংরেজি অনুবাদ নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম, জহির রায়হান, বুদ্ধদেব বসু, অমিতাভ ঘোষ, মহাশ্বেতা দেবী, ঝুম্পা লাহিড়ী, হুমায়ূন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার বা সৈয়দ শামসুল হকের রচনা বিশ্বসাহিত্যে যে প্রভাব ফেলেছে, তা তুলনায় সীমিত। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, বিশ্বের ৪০ শতাংশ ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বাংলা এই তালিকায় নেই। বরং বাউল সংগীত ২০০৫ সালে ইউনেস্কোর ‘অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ তালিকায় স্থান পেয়েছে।
দুই.
বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলার এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেশ কিছু কৌশল প্রয়োগ করে সুফল পেতে পারি। বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক বইমেলা, চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলার উপস্থাপনা বাড়াতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব, ওপেন অ্যাকসেস মিডিয়া কিংবা নেটফ্লিক্সের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে ‘সত্যজিৎ রায়ের ক্ল্যাসিকস’ থেকে শুরু করে ‘মাটির ময়না’, ‘রেহানা মারিয়াম নুর’, ‘মুক্তধারা’ বা ‘ডুব’-এর মতো বাংলা চলচ্চিত্রে সাবটাইটেল যুক্ত প্রদর্শনী বরাবরের মতো বিশ্বের দর্শকের কাছে বাংলা সংস্কৃতি পৌঁছে দিতে পারে; সঙ্গে প্রযুক্তিগত উদ্যোগও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুগলের তথ্য অনুসারে, ইন্টারনেটে বাংলা কনটেন্টের পরিমাণ গত দশকে ৩০০ শতাংশ বাড়লেও এখনও মোট কনটেন্টের ০.১ শতাংশের কম বাংলায় রয়েছে। উইকিপিডিয়ায় বাংলা নিবন্ধের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার, যা ইংরেজির (৬৫ লাখ) তুলনায় নগণ্য। এ অবস্থায় এআইভিত্তিক টুল যেমন– বাংলা এনপিএল (প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ) উন্নয়ন করে বাংলা ভাষার ডিজিটাল রিসোর্স বাড়ানো যেতে পারে। ডুয়োলিঙ্গর ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এআই প্ল্যাটফর্মে বাংলা ভাষা শেখার মডিউল যুক্ত হলে ১০ লাখ ব্যবহারকারী এতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ ছাড়া গুগল আর্টস অ্যান্ড কালচারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লবের সাহসী গল্প, ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ঘেরা বিভিন্ন স্থাপনার ভার্চুয়াল গ্যালারি আকারে উপস্থাপন করা গেলে আন্তর্জাতিক ব্যবহারকারীদের কাছে বাংলার ইতিহাস পৌঁছাবে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে যুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। বর্তমানে বাংলা ইউএনের ‘ইনফরমাল ডে’ পালন করে, কিন্তু আরবি বা স্প্যানিশের মতো দাপ্তরিক মর্যাদা পায়নি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে পারে। ইউনেস্কোর ‘অ্যাটলাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ‘ল্যাঙ্গুয়েজেস ইনডেঞ্জার’ (২০১৭) অনুযায়ী, বাংলা ‘নিরাপদ ভাষা’র তালিকায় থাকলেও এর আন্তর্জাতিকীকরণে রাষ্ট্রীয় নীতির অভাব স্পষ্ট। অথচ ফ্রান্স তাদের ভাষা প্রচারে বিশ্বজুড়ে ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছে। একই মডেলে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে ‘বাংলা কালচারাল সেন্টার’ চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে এক কোটির বেশি বাংলাভাষী প্রবাসী আছেন, যাদের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলা বইমেলা, নাট্যোৎসব বা কবিতা পাঠের আয়োজন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাংস্কৃতিক বন্ধন তৈরি করা যায়। প্রবাসী লেখক ঝুম্পা লাহিড়ী যেমন তাঁর লেখনীতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক পাঠকদের কাছে বাংলার গল্প পৌঁছে দিয়েছেন। তেমনিভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বাংলা কালচারাল অ্যাম্বাসাডর’ প্রোগ্রাম চালু করে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
তিন.
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় বাংলা মাধ্যম ব্যবহারের যে অনীহা, তা দূর করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেও বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক তাৎপর্য বাড়ানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রেক্ষিত পর্যালোচনা করে আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলায় পাঠ পরিচালনার হার বাড়াতে ‘বাংলা মিডিয়াম একাডেমিক এক্সিলেন্স প্রোগ্রাম’ চালু করা যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে সরকারি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক ও উপকরণ বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। এর জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। একই সঙ্গে দেশে বাংলা ভাষা জানা লোকদের সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষিতে সব অফিস-আদালতে বাংলা ভাষা যেভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে এবং বাংলা জানা লোকেরা পিছিয়ে পড়ছে, তা রোধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আইইইই বা স্প্রিংগারের মতো প্রকাশনীর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলা গবেষণাপত্রের ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা যেতে পারে। এমনকি হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ডের মতো বিশ্বনন্দিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘বাংলা স্টাডিজ’ বিভাগ চালু হলে পশ্চিমা শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।
হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ডের মতো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা স্টাডিজ বিভাগ চালু করা একেবারে অসম্ভব নয়, তবে এটি নির্ভর করে একাডেমিক অগ্রাধিকার, ফান্ডিং এবং রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের ওপর। ২০২৩ সালের তথ্যমতে, হার্ভার্ডে ৮০টির বেশি ভাষা শেখার সুযোগ আছে, যার মধ্যে বাংলাও অন্তর্ভুক্ত। আবার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এশিয়ান অ্যান্ড মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজ ফ্যাকাল্টিতে দক্ষিণ এশিয়া, চীন, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা ও সংস্কৃতি পড়ানো হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চায়নিজ স্টাডিজ, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, অক্সফোর্ডের জাপানি স্টাডিজ বিভাগগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে ওই দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি, সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কয়েকটি করণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক. বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে হার্ভার্ড/অক্সফোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করতে পারে এবং ‘বাংলা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার জন্য বার্ষিক ফান্ড বরাদ্দ করে ভূমিকা রাখতে পারে।
চার.
বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠা করতে সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও কূটনীতির সমন্বয়ে বহুমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি নীতি নির্ধারণ, বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ এবং বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টাই শুধু এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গ্লোবাল প্রোফাইল এবং বাংলার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যেমনটি বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘যেখানে সেখানে ডাল ভাঙিসনে ভাই, ফুল ফুটতে দে...’– বাংলা ভাষার ফুলকে বিশ্বমঞ্চে ফুটতে দিতে এই প্রচেষ্টাই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
শারীফ অনির্বাণ: পিএইচডি গবেষক, দকুজ এয়লুল ইউনিভার্সিটি, ইজমির, তুরস্ক ও প্রভাষক, শিক্ষা বিভাগ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি
sharifulislam@primeuniversity.edu.bd
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন স ক র পর চ ল ত ব সরক র ব যবহ র মন ত র অন য য় গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক