বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। যেখান-সেখান দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যাবে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এসব কথা বলেছেন।

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীর রমনা বটমূলে ডিএমপির নিরাপত্তা–পরিকল্পনা ও মহড়া আজ রোববার দুপুরে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাজ্জাত আলী।

ডিএমপির কমিশনার বলেন, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি, টিএসসি হয়ে পুনরায় চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রার পুরো রুট নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। পাশ থেকে, বিকল্প পথে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শোভাযাত্রার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে চারুকলার বিপরীতে যে গেট আছে, সেটি বন্ধ থাকবে। সে সময় কেউ এই গেট দিয়ে রাস্তায়ও যেতে পারবে না।

শোভাযাত্রায় যাঁরা অংশ নিতে চান, তাঁদের সুবিধার্থে একটি ‘ম্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে বলে জানান সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, শোভাযাত্রার মাথা থাকবে চারুকলার সামনে। আর শোভাযাত্রার লেজ থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের সামনে। এর বাইরে মাঝখান দিয়ে কোনোভাবেই কারও শোভাযাত্রায় প্রবেশের সুযোগ নেই। শোভাযাত্রায় যাঁরা যোগদান করবেন, তাঁদের শাহবাগ মোড় থেকে অথবা ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষে যাঁরা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে চান, তাঁরা শাহবাগ হয়ে কাঁটাবন মোড় দিয়ে নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাবি উপাচার্যের বাংলোর সামনে থেকে অংশ নেবেন।

এই উৎসবমুখর অনুষ্ঠান যাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই নির্বিঘ্নে উদ্‌যাপন করতে পারেন, সে জন্য ডিএমপি ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানান সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপিত হবে। উৎসবের টানে নগরবাসী সমবেত হবেন রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, রবীন্দ্রসরোবর ও হাতিরঝিল এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থলে। এককথায় পুরো ঢাকা নববর্ষ উদ্‌যাপনে প্রস্তুত। উল্লিখিত এলাকা ছাড়াও ঢাকার অধিকাংশ স্থানে নববর্ষের উৎসব উদ্‌যাপিত হবে।

ডিএমপির কমিশনার বলেন, নববর্ষ উদ্‌যাপনে নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি নেই। ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য পয়লা বৈশাখকেন্দ্রিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট থাকবে। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করবে। এখন পর্যন্ত কোথা থেকে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই।

বাংলা বর্ষবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরকে ২১টি সেক্টরে ভাগ করে ইউনিফর্ম ও সাদাপোশাকধারী পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে উল্লেখ করেন সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাস্থলে ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ মোট ২১টি স্থানে ব্যারিকেড থাকবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশমুখে আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল দিয়ে তল্লাশি করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়া ও শোভাযাত্রার রুটগুলো সিসি ক্যামেরা, স্থির ও ভিডিও ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। অনুষ্ঠানের চারপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুট প্যাট্রোল থাকবে। সিটিটিসি, সোয়াত ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পোশাকে ও সাদাপোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

ইভ টিজিং ও ছিনতাই প্রতিরোধ সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের দল মোতায়েন থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার’ থাকবে। সেখানে মাইকিং ব্যবস্থা থাকবে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও সাইবার প্যাট্রোলিংয়ের মাধ্যমে নববর্ষকেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার রোধে নজরদারি করা হচ্ছে।

নববর্ষে অংশ নিতে আসা নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, সবার নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশিকাজে তিনি সহযোগিতা কামনা করছেন। অনুষ্ঠানস্থলে কোনো ধরনের ব্যাগ, ধারালো বস্তু ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে না আসার জন্য তিনি অনুরোধ করছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে, অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে হবে। কোনো ধরনের আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো যাবে না। শব্দদূষণ হয়—এ ধরনের কোনো বাঁশি ব্যবহার করা যাবে না। বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য বাজারজাত করা যাবে না। বিশেষ করে শোভাযাত্রায় ও অন্যান্য অনুষ্ঠানস্থলে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান শুরু হবে সকালে। এই অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময় শেষ হবে। ছায়ানটের এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তিনটি গেট দিয়ে ঢুকতে হবে রমনা বটমূলে। তবে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হওয়া যাবে দুটি গেট ব্যবহার করে।

ছায়ানটের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগ্রহী নগরবাসীর উদ্দেশে সাজ্জাত আলী বলেন, যাঁরা নারী ও শিশু সঙ্গে নিয়ে আসবেন, তাঁরা যেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভিড় এড়িয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন। তাঁরা যেন প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্ধারিত গেট ব্যবহার করেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত উদ্যানে প্রবেশ করা যাবে।

আগুন দেওয়ায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে

ডিএমপির কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ আগুনে পোড়ানোর ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামীকাল সকালে শোভাযাত্রা শুরুর আগেই এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির কমিশনার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো মামলা তদন্তের আগে কোনো কথা বলি না। মামলা তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্তে আমরা খুব নিকটে পৌঁছে গেছি। আশা করছি, আগামীকাল শোভাযাত্রার শুরুর আগেই আমরা সন্তোষজনকভাবে মামলাটা ডিটেকশন (খুঁজে বের করা) করতে পারব।’

চারুকলা নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল কি না, সেখানে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, এ নিয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন স জ জ ত আল র অন ষ ঠ ন ছ য় নট র নববর ষ প রব শ চ র কল তদন ত ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের

কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।

সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন 
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।

সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।

এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্‌দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও  সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।

এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপহার পেল পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া জেরিনের পরিবার
  • খাল সংস্কারে ধীরগতিতে দুর্ভোগে নগরবাসী
  • ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উৎসবকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে: মোহাম্মদ আজম
  • দৃশ্যপটে ‘আনন্দ’, মঙ্গল কোথায়
  • যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের