প্রথম বাংলাদেশি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম আইকনিক বেসক্যাম্প অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প-এ সাইকেল নিয়ে সামিট করেছেন তোজাম্মেল হোসাইন মিলন। এছাড়া, একই অভিযানে একক ব্যক্তি হিসেবে তিনি তিলিচো হ্রদ, থরং লা পাস, অন্নপূর্ণা সার্কিট এবং অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প এ চারটি চূড়ান্ত গন্তব্য সাইকেলে সম্পন্ন করেছেন, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রথম।

গত ১৭ মার্চ যাত্রা শুরু করে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে গত ২ এপ্রিল অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে পৌঁছিয়ে তিনি এ বিরল রেকর্ড গড়েন। গত ৭ এপ্রিল নেপালে কাঠমন্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে তার এ অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদ প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুন:

‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে জাবির শিক্ষার্থীদের সংহতি

জাবিতে মেট্রোরেলের স্টেশন দাবি শিবিরের 

মিলনের জন্ম পাবনা জেলায়। তবে বাবার চাকরিসূত্রে তার শৈশব, কৈশোর ও পড়াশোনা সবই গাজীপুরের জয়দেবপুরে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে (৪২ ব্যাচ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

তার চারটি গন্তব্যের মধ্যে অন্নপূর্ণা সার্কিট নেপালের হিমালয় অঞ্চলের একটি বিশ্ববিখ্যাত ট্রেকিং রুট, যা অন্নপূর্ণা পর্বত শ্রেণিকে ঘিরে প্রায় ১৩০ থেকে ২৩০ কিলোমিটার বিসতৃত। মহাভারতের ‘বরুণ হ্রদ’ খ্যাত ‘তিলিচো হ্রদ’ হলো পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম হ্রদ, যার উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৯১৯ মিটার। এটি অন্নপূর্ণা সার্কিটের মধ্যেই অবস্থিত। তবে মূল ট্রেকিং রুট থেকে একটু ডাইভার্সন নিতে হয় এখানে পৌঁছাতে। এ হ্রদে পৌঁছানোর পথ কঠিন, পাথুরে এবং বরফে ঢাকা। এজন্য ট্রেকারদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জও বটে।

‘থরং লা পাস’ হলো অন্নপূর্ণা সার্কিটের সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে কঠিন অংশ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৪১৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চ ট্রেকিং পাস হিসেবে পরিচিত। এখানে পৌঁছাতে গেলে প্রচণ্ড ঠান্ডা, পাতলা অক্সিজেন এবং দীর্ঘ চড়াই পথ পার করতে হয়। ‘অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প’ হলো ৪ হাজার ১৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি আইকনিক বেস ক্যাম্প, যেখান থেকে পর্বতারোহীরা অন্নপূর্ণা-১ সামিট অভিযানে যাত্রা শুরু করেন। 

যাত্রার শুরু কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই ছিলাম একটু দুষ্টু ও ডানপিটে। আর অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি ঝোঁক ছিল সবসময়। সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগতো। তবে অ্যাডভেঞ্চার সাইক্লিংয়ে আসার গল্পটা একটু অন্যরকম। ২০১৬ সালের শুরু দিকে আমার শরীরে লিম্ফোমা টিউমার ধরা পড়ে। বায়োপসি করার পর জানা যায়, এটি ক্যান্সার। যদিও ভাগ্যক্রমে একেবারেই প্রথম স্টেজে ছিল। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে আমি সুস্থ হয়ে উঠি। কিন্তু ডাক্তাররা পরামর্শ দেন নিয়মিত ঘাম ঝরাতে হবে। তখন থেকেই নিয়মিত সাইক্লিং শুরু করি।”

তিনি বলেন, “এরপর পরিচয় হয় গাজীপুর সাইকেল রাইডার্স এর সঙ্গে। ওই সময় থেকেই আমার সাইক্লিংয়ের আসল যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালে জীবনের সবচেয়ে সাহসী এক্সপেডিশন করি। বাংলাদেশের টেকনাফে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যাই তৎকালীন বিশ্বের সর্বোচ্চ মোটরযোগ্য রাস্তা খারদুংলা পাস পর্যন্ত। ৭০ দিনের সেই অভিযানই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আমার আসল অ্যাডভেঞ্চার সাইক্লিং লাইফ।”

মিলন গত ১৫ মার্চ বিমানযোগে নেপালের কাঠমন্ডু যান এবং ১৭ মার্চ তার ১৫ দিনের এই সাইকেল যাত্রা শুরু হয়। সবাই আরো উপর থেকে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে উচ্চতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটু নিচে থেকেই তিনি যাত্রা শুরু করেন। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা বেশি সময় লাগে তার।

অভিযানে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল থরং ফেদিতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি। সেদিন ফ্রিজিং টেম্পারেচার আর লো এয়ার প্রেসারের কারণে আমার সাইকেলের দুইটি ব্রেকই একসঙ্গে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন থরং ফেদির ৩৫০ মিটার লম্বা ঝুলন্ত ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলাম। ব্রেক কাজ না করায় সাইকেলের গতি হঠাৎ বেড়ে যায়। মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। আল্লাহর অশেষ রহমতে, সেদিন ব্রিজ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যাইনি। পড়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিল।”

তিনি বলেন, “খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্রিজ পার হতেই আবার পড়ে যাই। তখন নেদারল্যান্ডের দুজন ট্রেকার আমাকে উদ্ধার করেন। পা, থুতনি আর শরীরের বিভিন্ন অংশে চোট পাই। তখন থরং ফেদির একটি লজে দুজন ইতালিয়ান নারী চিকিৎসক আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ বিপদের সময় ওই বিদেশি পর্যটক, চিকিৎসক, আর ডাচ ভদ্রলোকের সহানুভূতি ও সহায়তা আমাকে আবার পথ চলার সাহস দিয়েছে। এ অভিযানে তাদের অবদান আমি কখনো ভুলব না।”

এ অভিযান ও অর্জন তার কন্যা সন্তান মানহাকে উৎসর্গ করেছেন মিলন। তিনি বলেন, “এটি শুধু আমার স্বপ্ন নয়, এটি সেই স্বপ্ন যা আমি চাই আমার মেয়ে অনুভব করুক। আমি চাই সে জানুক, তার বাবা কখনো হার মানেনি। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে, সীমিত সামর্থ্য নিয়ে, একা একা হেঁটে কিংবা প্যাডেল ঘুরিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছে। আর সে যেন জানে, বাবা যেভাবে কঠিন সময়ের মধ্যেও হাল ছাড়েনি, সেও যেন জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সাহস না হারায়।”

ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি স্বপ্ন দেখি একদিন, পৃথিবীর সাতটি কঠিনতম সাইক্লিং ট্রেইল ও পাস পাড়ি দেব। পামির হাইওয়ে (মালভূমি হাইওয়ে), যা আমি সাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করবো। পাকিস্তানের কারাকোরাম হাইওয়ে-সেখানে সাইকেল চালানোর স্বপ্নও আমার। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের সীমান্ত পেরিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সাইক্লিং, যেখানে সংস্কৃতি, প্রকৃতি আর মানুষ একাকার হয়ে যায়।”

“নিজের অভিজ্ঞতা, পথের গল্প, মানুষের হাসি-কান্না আর নিজের ভেতরের আলো খোঁজার লড়াই দিয়ে একটি বই লেখা। যে বইটি শুধু রাস্তাঘাট, ট্রেইল আর পাহাড়ের গল্প নয়, বরং আত্মা, সাহস আর বেঁচে থাকার গল্প হয়ে উঠবে,”-যুক্ত করেন মিলন।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ত কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিকাশ-এ লেনদেনের তথ্য-শেয়ার এখন আরও সহজ ও নিরাপদ

বিকাশ অ্যাপে লেনদেন করে তার তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাঠানো এখন আরও সহজ, নিরাপদ এবং সুরক্ষিত। বিল দেওয়া, পেমেন্ট, বিশেষ করে কাউকে টাকা পাঠানোর পর স্ক্রিনশট শেয়ার করার বিষয়টি চর্চিত এবং প্রায় অবধারিত। গ্রাহকের এই প্রয়োজনকে সহজ করতে বিকাশ অ্যাপে যুক্ত হয়েছে এক-ক্লিকেই শেয়ার অপশন।

বিকাশ অ্যাপ থেকে সেন্ডমানি করার সাথে সাথেই স্ক্রিনে শেয়ার অপশন দেখতে পান গ্রাহক। যে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে এবং যে অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে, ট্রানজেকশন আইডি, টাকার পরিমাণ, সময়-তারিখ এবং রেফারেন্স -এই তথ্যগুলো শেয়ার স্ক্রিনে দেওয়া থাকে। গ্রাহক এক ট্যাপেই হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ই-মেইলসহ যেকোনো পছন্দের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তথ্য শেয়ার করে দিতে পারেন।

এই পদ্ধতিতে তথ্য শেয়ারের সময় গ্রাহকের সবশেষ ব্যালেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, ফলে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট-ব্যালেন্সের তথ্য থাকে সুরক্ষিত।

কোনো গ্রাহক এই শেয়ার অপশন না ব্যবহার করে স্ক্রিনশট দিয়ে তথ্য শেয়ার করতে চাইলেও বর্তমান ব্যালেন্সকে এক ট্যাপেই হাইড করা সম্ভব। বর্তমান ব্যালেন্সের ঠিক পাশেই থাকা ‘আই’ (চোখ) -আইকনে ক্লিক করে বর্তমান ব্যালেন্স হাইড করে রাখতে পারেন।

অনেক গ্রাহক আছেন যারা ম্যাসেজ পাঠানো বা শেয়ারের চেয়ে কল করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেসব গ্রাহকদের কথা বিবেচনায় রেখে টাকা পাঠানোর সাথে সাথে পরের স্ক্রিনেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সরাসরি কল করার অপশনও যুক্ত করা হয়েছে। এতে আর ঐ ব্যক্তিকে কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে কল করতে হয় না। ফলে তার সময় বাঁচে। গ্রাহক পেয়ে যান বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য।

অনেক গ্রাহক আছেন লেনদেন করার পর কেবল ট্রানজেকশন আইডিটি কপি করে কাউকে পাঠান বা কোনো ফরম পূরণ করতেও ব্যবহার করেন। তেমন গ্রাহকদের জন্য এই স্ক্রিনেই কেবল ট্রানজেকশন আইডি কপি করার সুযোগ রয়েছে। ট্রানজেকশন আইডির পাশেই ‘কপি’ চিহ্নিত আইকন ট্যাপ করলেই নম্বরটি ক্লিপবোর্ডে কপি হয়ে যায়। পরে গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো উইন্ডোতে পেস্ট করে তথ্যটি কাজে লাগাতে পারেন।

একইভাবে, পেমেন্ট, বিল পে সহ অন্যান্য তথ্য সহজেই শেয়ার করতে পারছেন গ্রাহক। বর্তমান সময়ে এসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা। গ্রাহকের সুবিধার কথা বিবেচনায় তাই এমন ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ সেবার সংযোজনে গ্রাহকের লেনদেনের তথ্য নিয়ন্ত্রিতভাবে কাজে লাগানোর সাথে সাথে তার সুরক্ষাকে নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিকাশে লেনদেনের তথ্য-শেয়ার এখন আরো সহজ ও নিরাপদ
  • বিকাশ-এ লেনদেনের তথ্য-শেয়ার এখন আরও সহজ ও নিরাপদ